ববিতে সেশন জটের শঙ্কা

প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল, ২০১৯ ০১:৪৬:৩৩

ববিতে সেশন জটের শঙ্কা

বভিসির পদত্যাগ নতুবা পূর্ণ মেয়াদে ছুটিতে যাওয়ার দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) টানা ২৬ দিন ধরে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। টানা এ আন্দোলনের সঙ্গে এরইমধ্যে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি অংশ একাত্মতা প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচিও পালন করেছেন।

অপরদিকে পদত্যাগ না করার অবস্থানে অনঢ় থাকা ভিসির ১৫ দিনের ছুটিতে যাওয়া এবং ছুটিতে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতার ব্যাংকিং হিসেব থেকে লেনদেন বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা আন্দোলনকে আরো জোরদার করবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ধারাবাহিকতায় দিন যতো যাচ্ছে, আন্দোলন কর্মসূচি ততো বেগবান ও কঠোর হচ্ছে। যার দরুন দিনে দিনে আন্দোলনে যেমন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, তেমনি শিক্ষকদের সরব উপস্থিতি আন্দোলনকে দৃঢ় করছে।

টানা ২৬ দিনের আন্দোলন ভিসির পদত্যাগের দাবি ছাড়াও ১০ দফা দাবির কথা তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের সঙ্গে সহমত পোষণ করে পদোন্নতি, নিয়োগসহ নানানখাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনিয়মের কথা তুলে ধরে ৮ দফা দাবি পেশ করে শিক্ষক সমিতি। পরে তারা ১১ এপ্রিল থেকে ২ ঘণ্টা করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে এবং পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে ১৮ এপ্রিল মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। একইভাবে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের সঙ্গে সহমত পোষণ করে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগসহ ১২ দফা দাবি তুলে ধরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (গ্রেড: ১৭-২০) কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ। পরে তারা দাবির আদলে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে এবং ভিসির পদত্যাগের দাবিতে ১৮ এপ্রিল মানববন্ধন কর্মসূচিতেও অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে একে একে শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি বৃহৎ অংশ একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

এ দিকে, আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষা এবং প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। আর এতে করে সেশন জটের আশঙ্কা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

হলের এবং বাইরের শিক্ষার্থীরা জানান, গত ২৫ দিনের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে অচলাবস্থা চলছে। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির বিষয়টি এখন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একমাত্র দাবিতে পরিণত হয়েছে। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, সেটা মোটেও অভিভাবক সুলভ নয়। উপাচার্যের মেয়াদ রয়েছে আগামী ২৮ মে পর্যন্ত। এরপরে তিনি আর ওই পদে নিয়ম অনুযায়ী থাকতে পারবেন না। 

আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের দাবি, ভিসির পদত্যাগ নয়তো মেয়াদকাল পর্যন্ত অর্থাৎ ২৮ মে পর্যন্ত ছুটিতে যেন চলে যান। কিন্তু তিনি অভিভাবক সুলভ আচরণ না করে নানানভাবে শিক্ষার্থীদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং কৌশলীভাবে তার অবস্থানে থেকে এগিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে শিক্ষার্থীরাও তাদের অবস্থানে অনড় থেকে গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। যেখানে গত ২৭ মার্চ থেকে টানা ২৫ দিন ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের মতে, গত ২৫ দিন আর সামনে আরো দেড় মাস যদি এভাবে পাঠদান ও ক্লাস বন্ধ থাকে, তাহলে হাজার হাজার সাধারণ শিক্ষার্থীকে সেশন জটে পড়তে হবে। বিশেষ করে এই এপ্রিলেই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছিলো, যা আন্দোলনের কারণে সময়মতো অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। এছাড়া আন্দোলনের কারণে রুটিন অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগ ও বর্ষের যে পরীক্ষাগুলো হওয়ার কথা ছিলো, সেগুলোও নেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন যদি আন্দোলন শেষ হয়, তবে নতুন করে আবার রুটিন তৈরি করবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস। সে কাজেও বেশ সময় লাগবে। সব মিলিয়ে সমস্যায় শিক্ষার্থীরাই পড়বে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক পরিষদ।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এস এম ইমামুল হকের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ২৬ দিনের আন্দোলনে মহাসড়ক অবরোধ, অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন, প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মশাল মিছিল, রক্ত দিয়ে দেয়াল লিখন, ভিসির কুশপুতুল দাহ, প্রতীকী অনশন, কালো কাপড় মুখে ও কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন, জেলা প্রশাসনের কার্যালয় ঘেরাও, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকসহ ভিসির পদত্যাগের দাবি করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়।

শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মুখে উপাচার্য গত ১০ এপ্রিল ১৫ দিনের ছুটির জন্য আবেদন করেন। শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, উপাচার্যের ক্যাম্পাসে ফিরে আসার আর কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাকে ঘটনার পর থেকেই বরিশালে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তার সঙ্গে রেজিস্ট্রার ও জনসংযোগ কর্মকর্তাকেও অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে।  ভিসি ১৫ দিনের ছুটিতে নয়, হয় তার কর্ম মেয়াদকাল (আগামী ২৮ মে) পর্যন্ত ছুটি নতুবা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না বলেও শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন।

আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা এখন এক দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। তা হলো উপাচার্যের পদত্যাগ। পদত্যাগ না করা পর্যন্ত যে যার অবস্থান থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

প্রজন্মনিউজ২৪/দেলাওয়ার হোসাইন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ