ভোলার তজুমদ্দিনে চর দখল নিয়ে বিরোধ" দফায় দফায় সংঘর্ষ"খুনের শঙ্কা

প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল, ২০২৪ ০৮:১০:২৮

ভোলার তজুমদ্দিনে চর দখল নিয়ে বিরোধ

ভোলা প্রতিনিধিঃ ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার বিছিন্ন চর 'চর রায়হান' নিয়ে দু'পক্ষের মধ্যে শুরু হয়েছে রক্তক্ষয়ী বিরোধ। এতে শঙ্কা ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে চরে বসবাস করা মানুষের মধ্যে। চরম উৎকন্ঠা আর শঙ্কা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে শতার্ধিক মানুষ। চর থেকে লুট হচ্ছে কৃষকদের গরু-ছাগল, মহিষ ও ভেড়াসহ নানান সম্পত্তি। লুট হওয়া এসব সম্পত্তি নিয়ে দু'পক্ষের মধ্যে বিগত কয়েকবছর ধরে চলছে বিরোধ। মাঝেমধ্যে এ বিরোধ রুপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে।চর দখল এবং আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ১নং বড় মলংচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরনবী সিকদার বাবুল এবং ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই এর মধ্যে এই বিরোধ চলছে। গেল দেড় বছরেও চরবাসী এই বিরোধের কোনো সুষ্ঠু সমাধান পায়নি।

জানা গেছে, সবশেষ গত ১৮ এপ্রিল রাতে ওই চরের এক নারীকে কুপ্রস্তাব দেয় আব্দুল হাই গ্রুপের এক কর্মী। এতে প্রতিবাদ করলে রাতে ওই নারীর উপর হামলা চালানো হয়। পিটিয়ে ওই নারীর হাত ভেঙে দেয়। এরপর একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন দু'পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের আহত হয় অনন্ত ১০ জন।

ঘটনার পর খবর পেয়ে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গেলেও এ ঘটনায় উভয় পক্ষের কাছ থেকে লিখিত কোনো অভিযোগ করা হয়নি।
১৮ এপ্রিল রাতের ঘটনা নিয়ে যা বললেন ভুক্তভোগীরা: চরের এক নারীর অভিযোগ ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাতে আব্দুল হাই গ্রুপের এক 
র্মী ওই নারীকে কুপ্রস্তাব দেয়। এতে তিনি প্রতিবাদ করলে তার উপর হামলা চালানো হয়।এতে তার ডান হাত ভেঙে যায়। একই ঘটনার বিরোধ নিয়ে পরদিন দু'পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে চেয়ারম্যান গ্রুপের কুলসুম, লিপি, সালাম ও মোহাম্মদ আলীসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। তাদেরকে উদ্ধার করে বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের অভিযোগ, আব্দুল হাই'র ইন্ধনে বাহাদুর ভূঁইয়া, জলদস্যু ফরিদ, মো. হোসেন ও কামালসহ বেশ কয়েকজন তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। রায়হান চরের উত্থান: প্রায় ৩০ বছর আগে এই চরটির নাম ছিল ১নং বড় মলংচড়া ইউনিয়ন। পরে মেঘনার বুকে ইউনিয়নটি বিলিন হয়ে যায়। তখন ইউনিয়নটিতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার লোকের বসবাস ছিল। ২১টি মৌজা নিয়ে ইউনিয়নটি গঠিত। সেসময় ইউনিয়নটিতে কয়েকটি প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ সরকারি অসংখ্য স্থাপন ছিল। ভয়াল মেঘনার ভাঙনের পর সবকিছু মেঘনার বুকে বিলিন হয়। ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব পরিবারগুলো ঠাঁই নেয় বোরহানউদ্দিন ও তজুমদ্দিন উপজেলার মূল-ভূখণ্ডে।

১৫ বছর পর জেগে ওঠে চর রায়হান: মেঘনায় বিলিন হওয়ার ১৫ বছর পর জেগে ওঠে ১নং বড় মলংচড়া ইউনিয়নটি। এরপর স্থানীয়রা নতুন করে এর নাম দেয় 'চর রায়হান'। আস্তে আস্তে জেগে ওঠা চরে বসবাস শুরু করে মানুষ। এখন পর্যন্ত প্রায় শতার্ধিক মানুষ চরটিতে বসবাস শুরু করেছেন। চরে চাষ হচ্ছে ধান গমসহ বিভিন্ন শাকসবজি। যাঁরা চরটিতে বসবাস শুরু করেছেন এটি তাদের পৈতৃক সম্পত্তি দাবি করেই বসবাস শুরু করেছেন। তবে রাতদিন জলদস্যুদের তাণ্ডবে সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয় তাদের।

চর দখলের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের বক্তব্য: চরটির চেয়ারম্যান নুরনবী সিকদার বাবুল জানান, ২০০৩ সাল থেকে তিনি ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। চরবাসীর সুখে-দুঃখে তিনি তাদের পাশে থাকেন। কিন্তু হঠাৎ করে গেল কয়েকবছর ধরে ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই চরটির একাংশ দখলের নেয়ার পায়তারা চালাচ্ছে। দিনরাত স্থানীয় কিছু চিহ্নিত জলদস্যু সন্ত্রাসী নিয়ে তিনি চরে লুটপাট চালাচ্ছেন। নারীদের শ্লীলতাহানি করে আসছেন। এতে প্রতিবাদ করতে গেলেই সৃষ্টি হয় বিরোধের।

তিনি জানান, আব্দুল হাই একসময় বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। এরপর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ক্ষমতা প্রয়োগ করে চর দখলের পায়তারা শুরু করেছেন। আব্দুল হাই তজুমদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দীন বাবুল ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন দুলালের ছত্র ছায়ায় এসব তাণ্ডব শুরু করেছেন বলেও অভিযোগ করেন।

ক্ষমতা দেখিয়ে দখল নয়, পৈতৃক সম্পত্তি দাবি: অভিযুক্ত আব্দুল হাইর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, দলীয় ক্ষমতা দেখিয়ে চর দখল করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে না। মূলত পৈতৃক সম্পত্তি দাবি নিয়েই চরে বসবাস করতে চাচ্ছি। পৈতৃক সম্পত্তি প্রমাণে জমির কাগজপত্র আছে কিনা, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। এরপর তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।
বিরোধ নিয়ে যা জানালেন ওসি: তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল হক জানান, চর রায়হান একটি বিছিন্ন চর। ওই চরের পুরো জমি এখনো জেগে ওঠেনি। যতটুকু জেগে ওঠেছে। তাতে কিছু মানুষ বসবাস শুরু করেছেন। কিন্তু পুলিশের কাছে মৌলিকভাবে অভিযোগ করা হচ্ছে, চরটিতে আব্দুল হাই নামক এক আওয়ামী লীগ নেতা চরের কিছু অংশ দখলে নেয়ার পায়তারা চালাচ্ছে। তবে পুলিশ খোঁজ নিয়ে জেনেছে, উভয় পক্ষই পেশিশক্তিতে এগিয়ে আছে। কোন পক্ষই এই বিরোধ নিয়ে কোনো অভিযোগ বা মামলা করেনি। ১৮ ও ১৯ এপ্রিলের ঘটনা নিয়ে পুলিশের কাছে কোনো পক্ষই লিখিত অভিযোগ করেনি। মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়েছে। এরপর কোনো পক্ষই থানায় যায়নি।


প্রজন্মনিউজ২৪/এমআই 
 

এ সম্পর্কিত খবর

জবিতে গুচ্ছের ‘বি’ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

নোবিপ্রবিতে গুচ্ছ বি ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে, উপস্থিতির হার ৮৯.৩৯ শতাংশ

ভূমধ্যসাগরে মারা যাওয়া আট বাংলাদেশির মরদেহ হস্তান্তর

মিয়ানমারের পুরুষদের বিদেশে কাজ করতে বাধা দিচ্ছে জান্তা সরকার

বিশ্ব গনমাধ্যম সূচকে দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ

ফরিদপুরে স্কুল শিক্ষার্থী অপহরন মামলায় একজন গ্রেফতার

ভর্তি পরিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে হাবিপ্রবিসাস'র ফ্রি শরবত বিতরণ

বগুড়ায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত: ৮

শাজাহানপুরে নবাগত ইউএনওর সঙ্গে শিক্ষকদের মতবিনিময়

মহানবী নিয়ে জবি শিক্ষার্থীর কটুক্তি, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ