ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া ফুলকুঁ‌ড়ি আসরের উদ্যোগে বৃক্ষ রোপন কর্মসূ‌চি পা‌লিত

প্রকাশিত: ২৭ অগাস্ট, ২০১৯ ০২:১৬:১৮

ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া ফুলকুঁ‌ড়ি আসরের উদ্যোগে বৃক্ষ রোপন কর্মসূ‌চি পা‌লিত

সোহাইল আহমেদ,ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া : বাড়ছে মানুষ, বাড়ছে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, ধ্বংস করা হচ্ছে বন, কাটা হচ্ছে গাছ, অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ।

এমনই এক পরিস্থিতি যখন ভাবিয়ে তুলছে বিবেকবানদের, ঠিক তখনই, ফল বৃক্ষে ভরব দেশ, বদলে দেব বাংলাদেশ, দেশের বায়ু দেশের মাটি, গাছ লাগিয়ে করবো খাঁ‌টি ” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে  বাংলাদেশ জাতীয় শিশুকি‌শোর সংগঠন ফুলকুঁ‌ড়ি আসর ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ার উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশ ও পদযাত্রা জানান দিয়ে গেল এক নতুন আশার।

পরিবেশ আর গাছ নিয়ে ভাবেন এমন হাজারো মানুষের সমাগমে জাতীয় বৃক্ষরোপন অভিযান ২০১৯ উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এ সমাবেশ ও পদযাত্রা । সোমবার বি‌কেল ৫ টায় ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া নিয়াজ মোহাম্মদ স্টেডিয়ামের সামনে থেকে শুরু হয়ে জেলা প‌রিষদ ডাকবাং‌লো মোড় প্রদক্ষিণ করে পদযাত্রাটি শেষ হয়।

অনুষ্ঠা‌নে প্রধান অ‌তি‌থি হি‌সে‌বে উপ‌স্থিত ছি‌লেন জাতীয় শিশু‌কি‌শোর সংগঠ‌নের কেন্দ্রীয় ক‌মি‌টির সাংস্কৃ‌তিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রউফ। প্রধান অ‌থি‌তি এক‌টি আম গা‌ছের চারা লা‌গি‌য়ে কর্মসূ‌চি উ‌দ্ধোন ক‌রেন। তি‌নি সকল‌কে বৃক্ষ‌রোপনের পাশাপা‌শি নিজ ‌নিজ বা‌ড়ির আ‌ঙ্গিনায় ১ টি ক‌রে চারা গাছ লা‌গি‌য়ে জলবায়ু প‌রিবর্ত‌নের চ্যা‌লেঞ্জ মোকা‌বেলার আহবান জানান।

বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, যুব, কিশোর, নারী, পুরুষ, স্কুলের শিক্ষার্থীসহ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর বর্ষায় বৃক্ষরোপণের উপযুক্ত সময় হিসেবে চিহ্নিত করে আয়োজন করে জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা। প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণের ভূমিকা যেমন ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী, তেমনি অর্থনৈতিক উন্নয়নেও এর গুরুত্ব অপরিসীম।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবেশের ভারসাম্য ও সুষম জলবায়ুর প্রয়োজনে একটি দেশের মোট আয়তনের অন্ত ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা আবশ্যক। বৃক্ষহীনতার কারণে পৃথিবীর নতুন নতুন অঞ্চল মরুময় হয়ে পড়ছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, বনের ওপর নির্ভরশীল বিশ্বের প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানবজীবন সমস্যায় পড়তে পারে আগামী শতকের মাঝামাঝিতে।

তিন দশমিক পাঁচ বিলিয়ন কিউবিক মিটার কাঠ ব্যবহার করে প্রতিবছর আট হাজার বর্গহেক্টর বনভূমি ধ্বংস করছে পৃথিবীর মানুষ। বনভূমি ধ্বংস হওয়ার ফলে পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব-পশ্চিমের বহু বন্যপ্রাণী ও সামুদ্রিক প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে।

এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার বিস্তৃত এলাকার মরুময়তা রোধে ২০ হাজার হেক্টর ভূমিতে বনায়ন-বৃক্ষায়ন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় বনভূমি খুব কম। তদুপরি জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে বনভূমি কাটার মাত্রাও ক্রমে বেড়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য কোনো দেশের মোট ভূমির ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা উচিত।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, ১৯৪৭ সালে দেশের আয়তনের ২৪ শতাংশ বনভূমি ছিল। ১৯৮০-৮১ সালে তা কমে হয় ১৭ দশমিক ২২ শতাংশ এবং বর্তমানে মাত্র ১৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ বনভূমি রয়েছে। এ আশঙ্কাজনক ঘাটতির কারণ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বিবিধ প্রয়োজন মেটানো। এর মধ্যে কৃষিজমির সম্প্রসারণ, বসতবাড়ি স্থাপন, শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার, গৃহনির্মাণসামগ্রী ও আসবাবপত্রের ব্যবহার, রাস্তা, বাঁধসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ, জ্বালানি হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার, নগরায়ন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

উল্লিখিত কারণগুলোর মধ্যে জ্বালানি হিসেবে বনজসম্পদের ব্যবহার ৯৫ শতাংশ দায়ভার বহন করে। এ ছাড়া নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস বৃক্ষের ব্যাপক ক্ষতি করে। অদূর-ভবিষ্যতে সাধারণ প্রয়োজনে বৃক্ষসংকট এক প্রকট সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।

ধ্বংসপ্রাপ্ত বনাঞ্চল এবং বৃক্ষরোপণ: বনভূমি দ্রুত কমে আসায় সারা বিশ্বের জনগণের সচেতনতার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের সরকার ও সচেতন জনগণ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের বৃক্ষহীনতায় নিচের দূষণগুলো ঘটছে। গ্রিন হাউস ইফেক্ট: গ্রিন হাউস অর্থ হলো, সবুজ ঘর। মূলত এটা একটা কাচের ঘর, যার মধ্যে তাপ সংরক্ষণ করে সবুজ গাছপালা জন্মানো হয়।

বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে তাপ অপরিবাহী গ্যাসের আবেষ্টনীর জন্য সূর্য থেকে প্রাপ্ত তাপ ধরে রাখার মতো গ্যাসীয় আবরণ সৃষ্টি হয়েছে। এ গ্যাসীয় আবরণ গ্রিন হাউসের কাচের মতো কাজ করে। এ তাপ ধারণ অবস্থা যখন নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে তখন তা জীবকুলের জন্য বিপজ্জনক হয়ে পড়ে।

কাচের দেয়াল ও ছাদবিশিষ্ট গ্রিন হাউসের ভেতরের উত্তাপ কাচের ভেতর দিয়ে বাইরে যেতে পারে না। গ্রিন হাউসের কাচ যেমন প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে, তেমনি কার্বনডাই-অক্সাইড, সিএফসি, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন ইত্যাদি গ্যাসে তাপ বিকিরণে প্রতিবন্ধক হয় ওঠে।

গ্রিন হাউস ইফেক্ট থেকে রক্ষা পেতে হলে বৃক্ষ কাটা রোধ ও বৃক্ষরোপণ করতে হবে। না হলে এর পরিণাম হবে ভয়াবহবিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘আমরা যেমন স্নান করি, সুতিবস্ত্র পরি, তেমনি বাড়ির চারদিকে একটি বাগান করে রাখা ভদ্রপ্রথার প্রকাশ্য কর্তব্য হওয়া উচিত।’ সরকার বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব সবাইকে অনুধাবন করতে বৃক্ষরোপণকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে তৎপর হয়েছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/শেখ ফরিদ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ