যেভাবে ঘরেই চাষ হচ্ছে জাফরান

প্রকাশিত: ১৯ মার্চ, ২০২৫ ১১:৪০:৩৩

যেভাবে ঘরেই চাষ হচ্ছে জাফরান

প্রজন্মডেক্স: কাশ্মীরের জাফরান বিশ্বের সবচেয়ে দামি মশলা হিসেবে পরিচিত। তবে জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানান কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর উত্পাদন অনেক কমে গেছে।

অবশ্য কিছু মানুষ এখন তাদের ঘরের খামারে টেকসইভাবে জাফরান চাষ করছেন।
তাদের একজন রমেশ গেরা। ঘরে জাফরান চাষ সম্ভব করতে তিনি তার বাড়ির একটি ঘরে কাশ্মীরের মতো ঠান্ডা আবহাওয়া তৈরি করেছেন।

রমেশ গেরা বলেন, ‘জলবায়ুর চারটি প্যারামিটার আছে, প্রথমটি তাপমাত্রা, দ্বিতীয়টি আর্দ্রতা, এরপর আছে আলো নিয়ন্ত্রণ ও বায়ু প্রবাহ। এখানে আমরা এই চারটি প্যারামিটারই কাশ্মীরের মতো করে তৈরি করি। কাশ্মীরে বছরের বিভিন্ন সময়ে জলবায়ুতে যেমন পরিবর্তন হয় আমরাও এখানে তা করে থাকি।’


জাফরান ফুল ফোটার জন্য শীতল পরিবেশ দরকার হয়। এসির সাহায্য সেটি এই ঘরে নিশ্চিত করা হয়। আর বিশেষ আলোর ব্যবস্থা করে সূর্যের আলোর অভাব পূরণ করা হয়। এই ঘরে এয়ারোপনিক্স পদ্ধতিতে জাফরান চাষ করা হয় বলে মাটি বা পানির প্রয়োজন হয় না। এই গাছগুলো মাটিতে আট মাস রাখা হয়, এবং তারপর এই শীতল ঘরে চার মাস থাকে।

রমেশ গেরা বলেন, ‘জাফরান বাল্বের নিচে একটা বাল্ব আছে, আর উপরে আছে কাণ্ড। বাল্বটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রকৃতি বা ঈশ্বর এতে পর্যাপ্ত খাবার দিয়ে রেখেছে। তাই কাশ্মীরের মতো আবহাওয়া পেলেই এটি অঙ্কুরিত হতে থাকে। দেড় থেকে দুই মাস পর অঙ্কুর থেকে ফুল ফুটতে থাকে। এরপর আমরা ফুল থেকে জাফরান সংগ্রহ করি।’

ড. নাশিমান আশরাফ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাহায্যে জাফরানের মান উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। জাফরান নিয়ে তিনি বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করেছেন। তিনি বলছেন, ঘরে জাফরান চাষের অনেক ভালো দিক আছে।

ড. আশরাফ বলেন, ‘ঘরে জাফরান চাষের ভালো দিকের মধ্যে আছে, এর ফলে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায় ও নির্দিষ্ট সময়ে সেচ দেওয়া যায়। এসব কারণে ভালো মানের জাফরান পাওয়া যায়। আর খোলা মাঠে জাফরান চাষ করলে কিছু বিষয়ে আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না, যেমন, যখন বৃষ্টি হওয়া ঠিক নয়, তখন বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ফসলের ক্ষতি হতে পারে। খোলা মাঠের কারণে রোগ ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা থাকে। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগতো আছেই। ঘরে চাষ করলে এসব এড়ানো যেতে পারে।’

কাশ্মীর থেকে প্রায় সাড়ে ৫০০ কিলোমিটার দূরে চণ্ডিগড়ে একটি কারখানা ভবনের বেসমেন্টে এই জাফরান খেতটি অবস্থিত। নলিন গুপ্ত কয়েক বছর ধরে সেখানে জাফরান চাষ করছেন। তিনি বলছেন, এভাবে জাফরান চাষ বেশ লাভজনক এবং এতে অনেক সম্পদও বাঁচে।

নলিন গুপ্ত জানান, ‘আপনার বিশ্বাস হবে না যে, কাশ্মীরে এক একর জমিতে যে পরিমাণ জাফরান চাষ করা যায়, তা এখানে মাত্র ৭০০-৮০০ বর্গফুটে সম্ভব। আপনি যদি একটি ঘরেই সমপরিমাণ জাফরান পান তাহলে পানি ও শ্রমিকের মতো বিষয়গুলো অনেক কম লাগে।’

এখন এই জাফরান গাছগুলোকে হিমঘর থেকে বের করে আবার মাটিতে লাগানো হবে - যেখানে তারা সংখ্যাবৃদ্ধি করবে। অর্থাৎ একটি গাছ থেকে দুই থেকে পাঁচটি এবং কখনও কখনও একটি গাছ থেকে দশটি নতুন গাছও তৈরি হয়।

রমেশ গেরা জানান, ‘আপনি হিমাগারে ফসল পান, এবং যখন সেগুলো আবার মাটিতে রোপণ করা হয়, তখন আমরা সেখানে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের কোনো কাজ করি না। বীজের সংখ্যাবৃদ্ধি মাটিতে হয়, কারণ, এতে কোনো ধরনের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয় না। এগুলি -৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে যে-কোনো তাপমাত্রায় সংখ্যাবৃদ্ধি করে।’

রমেশ গেরা খুশি যে এই জাফরান চাষ তাকে অবসর নেওয়ার পরেও অবসর নিতে দেয়নি। তিনি বলছেন যে, যখন তিনি অন্য লোকদের ঘরে জাফরান চাষের প্রশিক্ষণ দেন, তখন তার অভিজ্ঞতাও বহুগুণ বেড়ে যায়। ঠিক এই জাফরানের চারাগুলোর মতো, যা তিনি এখন মাটিতে রোপণ করছেন।


প্রজন্মনিউজ/২৪জেএ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ