নোনাজলের ক্যানভাস

প্রকাশিত: ০৯ মার্চ, ২০২২ ০৩:৪৪:৩৩

নোনাজলের ক্যানভাস

পৌষের শান্ত-শীতল সকালে কুয়াশার চাদরে মোড়ানো এস এম হলের বারান্দা থেকে তাকিয়ে আছি একমনে,দূর দিগন্তে মনোজগতের বিস্তৃর্ন কল্পনার ক্যানভাসে ভেসে বেরাচ্ছে কাঠগোলাপের সাদার মায়ায় মোড়ানো কাননে উড়ে বেড়ানো সুন্দর একটি প্রজাপতি।

সেই প্রজাপতির ডানায় ভর করে এক ঝাপটায় ফিরে যাই ছোট্টবেলায়।প্রজাপতি যে আমার ভীষণ প্রিয়। কত স্মৃতিই মনে পড়ে। নানুবাড়িতে শীতের সকালে বড় মামার কাছে বায়না ধরা,গাছ থেকে খেজুর রস পেরে খাওয়া। সেজন্য খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা।সে না ওঠায় তার চোখে-মুখে ঠান্ডা পানির ছিট দেওয়া।রেগেমেগে লাল চেহারায় তাকে দেখতে যে বেশ লাগে! কিংবা নানু বাড়ির গ্রাম্য মেলায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। সেদিনের কথা আজও মনে হলে হৃদয়ের গভীরে কেমন জানি একটা স্পন্দন অনুভব করি। সেদিনই প্রথম তোমার হাত ধরেছিলাম। অনুভূতির আয়নায় দেখেছিলাম অনন্ত বিশ্বস্ততার এক কোমল মোলায়েম আশ্রয়স্থল। সেদিনের পর থেকেই আমার হৃদমাঝারে তোমার প্রতি ভালোলাগা তৈরি হতে থাকে। 

তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন বুনতে শুরু করি। ক্রমেই স্বপ্নের ডানায় তৈরি হতে থাকে নতুন নতুন পালক। সেদিনের কথা তোমার কি মনে আছে!যেদিন তোমার এস.এস.সি পরীক্ষার প্রথমদিন পরীক্ষার কেন্দ্রে সিট খুঁজে অভয় দিয়ে বসিয়ে রেখে আসলাম, তুমি যতটা না নার্ভাস ছিলে তার থেকে আমিই মনে হয় বেশি নার্ভাস ছিলাম! এদিকে কিছুদিন পর আমারও এইচ.এস.সি পরীক্ষা।বায়োলজি প্র্যাকটিক্যাল খাতার একটা চিত্রও দাগানো হয়নি। তোমাকে বলার সাথে সাথে কি পরম মমতায় সবগুলো ছবি এঁকে দিলে! তোমার কি মনে আছে সেই নৌকাডুবির কথা! তীরে এসে তরী ডোবার মতোই ছিল ব্যাপারটা!! সেদিনের কথা মনে পরলে আজও লজ্জায় লাল হয়ে যাই! তুমি অনেক সাহসী আর দৃঢ়চেতা স্বভাবের মেয়ে। সেদিন তোমাদের সাথে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক কার এক্সিডেন্টের কথা মনে পড়লে আজও ভয়ে গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে। আল্লাহর অশেষ কৃপায় মৃত্যুর কোল থেকে ফিরে এসেছো। জানো, সেদিন আমি কতটা অস্থিরতায় ছিলাম তোমার জন্য!!তারপরও সেই মানসিক ট্রমা থেকে দ্রুত বের হয়ে আসতে পেরেছো।

এখনো কি একটুতেই অভিমান করে মুখ বুজে রাতে না খেয়ে থাকো! পরে না হয় লুকিয়ে লুকিয়ে একটু খেয়ে নিলে!! আমি তো তোমাকে ছেড়ে চলে এলাম নতুন ঠিকানায়। ক্যাম্পাসে এসে তোমাকে ভীষণ মিস করছিলাম। রাতের গভীরে তোমার কথা মনে পড়লে ফোনে তোমার ছবি জুম করে দেখতে দেখতে ভাবতাম আবার কবে দেখা হবে! কখন যে চোখের কিনারে জল ভরে গাল বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়তো অধরের পরে! তারপর এলো করোনার হানা। ছুটে এলাম তোমার শহরে। করোনাকালীন ঘরবন্দি নিরানন্দ নিস্তব্ধ দুপুরে তোমার সাথে লুডু খেলে বা রাতে অলীক কল্পনার সাগরে গা ভাসিয়ে সায়রে জেগে থাকতাম। এরপর এলো ঐ বিভীষিকা। দিন, মাস, বছর পেরিয়ে অভিমানের দেয়ালে ধূলো জমে পাহাড় হয়ে গেল। পেরিয়ে গেল আরও একটি বছর। সেদিন রাতে তোমার জন্য অঝোর ধারায় ঝড়েছিল অজস্র অশ্রুবারি। কপোল গড়িয়ে ভিজে গিয়েছিল বালিশ। তুমি কি তা অনুভব করেছিলে!? 

আজও স্বপ্নের ক্যানভাসে তোমার প্রিয় রঙে আলপনা আঁকবো বলে অধীর আগ্রহে দিন গুনি গ্র‌্যাজুয়েশনটা কম্পিট হবে কবে!!! মনের গভীরে চিত্রপটে আঁকা তুলির আঁচড়গুলির মাঝে খুঁজে নিবো তোমাকে। ভীষণ ভালোলাগে তোমার ঐ হাসিটা। মনে হয় যেন সন্ধ্যার নির্মল মেঘমুক্ত আকাশে শুকতারা মিষ্টি করে হাসছে। সন্ধ্যাতারা হয়ে ফিরে আসো আমার মনের আকাশে। তোমার দীপ্তিমান উজ্জ্বল আলোয় ভরিয়ে দাও আমার হৃদয় আকাশ। খোঁপায় জড়ানো বকুল ফুলের মালায়,কানের পাশে গুজে দেওয়া বেলী ফুলে সুশোভিত অনিন্দিতা অভিমানী মেয়ে তোমায় যে ভীষণ ভালোবাসি। বারবার বলতে গিয়েও সাহস করে এখনো যে বলা হয়ে ওঠেনি, কতটা ভালোবাসি তোমাকে!!!


প্রজন্মনিউজ২৪/সুইট

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ