জেনে নিন কোন গ্রহে আকাশের রং কেমন

প্রকাশিত: ১৫ মে, ২০১৭ ০৫:০৫:৫৮

জেনে নিন কোন গ্রহে আকাশের রং কেমন

সেই শৈশব থেকেই আমরা সুনীল আকাশের সঙ্গে পরিচিত। আকাশের নীল রঙ আমাদের কাছে এক প্রকার স্বাভাবিকের মতোই মনে হলেও, কেন তা নীল দেখায় সে প্রশ্ন জাগতেই পারে। সেই সঙ্গে সৌরজগতের অন্য গ্রহগুলোর আকাশের রঙ সম্পর্কেও কৌতূহল জাগা স্বাভাবিক।

আসলে পৃথিবী থেকে আমরা যে নীল আকাশ দেখি তা মূলত এক বিস্তৃত শুন্যের অংশ মাত্র। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্যে এই শূন্যের কিছু অংশকে সূর্যের আলোতে আমরা নীল দেখি। পৃথিবীর আকাশ নীল দেখানোর পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল। আমরা জানি সূর্যের আলো সাতটি রঙের সমষ্টি।

সূর্যের আলো যখন পৃথিবীতে আসে তখন এই বায়ুমণ্ডল ভেদ করে তাকে আসতে হয়। এবং এ সময়ে বায়ুকণার ওপরে আলো পড়লে তা সাতটি রঙে বিভক্ত হয়ে যায়। এই সাতটি রঙের মধ্যে লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি এবং বিক্ষেপণ সবচেয়ে কম। আর নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম এবং বিক্ষেপণ সবচেয়ে বেশি।

অর্থাৎ লাল আলো ছড়ায় সবচেয়ে কম আর নীল আলো ছড়ায় সবচেয়ে বেশি। তাই সূর্য থেকে আলো যখন পৃথিবীতে প্রবেশ করে তখন পৃথিবীর বায়ুরকণায় আলো বিভক্ত হয়ে বিক্ষিপ্ত হয়, তখন নীল আলো সবচেয়ে বেশি বিক্ষিপ্ত হয়। আর এই ঘটনার কারণে আমরা পৃথিবী থেকে দিনের বেলায় নীল আকাশ দেখি। কিন্তু বায়ুমণ্ডল না থাকলে দিনের বেলাতেও পৃথিবীর আকাশ থাকতো কালো। দিনের বেলায় সূর্যের পাশাপাশি তারাও দেখা যেতো।

তবে পৃথিবীর মতো অন্য গ্রহদের আকাশ এমন সুনীল দেখায় না। কারণ পৃথিবীর মতো এতো স্বচ্ছ সুন্দর বায়ুমণ্ডল আর কোনো গ্রহের নেই। বুধ গ্রহের প্রসঙ্গে আসা যাক। বুধ গ্রহের কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। এর ফলে সূর্য থেকে আসা সাদা আলো সরাসরি বুধের ওপর পড়ে।

যে কারণে বুধের আকাশে দিনের বেলায় সূর্যের পাশাপাশি বিন্দু বিন্দু তারা দেখা যায়। তবে তার পরিমান খুবই কম কারণ বুধ সূর্যের এতো কাছে অবস্থিত যে সূর্যের উজ্জ্বলতার কারণে সাধারণ চোখে অন্যকিছু দেখা কষ্টকর। পৃথিবী আকাশ থেকে বুধের আকাশে সূর্য প্রায় আড়াই গুণ বড় দেখায়, আর উজ্জ্বলতা হয় ৬ গুণ পর্যন্ত।

বুধ থেকে বেশ ভিন্ন শুক্র গ্রহের আকাশ। এর আকাশে দিনের বেলায় সূর্য কিংবা রাতের বেলায় তারা কোনো কিছুকেই পরিষ্কার দেখা যায় না। এর প্রধান কারণ এর বায়ুমণ্ডলের অস্বচ্ছ সালফিউরিক অ্যাসিডের উপস্থিতি। তবে সূর্যকে পরিষ্কারভাবে শুক্রের আকাশে না দেখা গেলেও দিনের বেলায় শুক্রের আকাশ আলোকিত হয় এবং রাতের বেলায় অন্ধকার হয়ে যায়।

তবে গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে অস্বচ্ছ সালফিউরিক অ্যাসিডের কারণে এর আকাশ অনেকটা কমলা রঙের দেখায়। প্রথমবারের মতো শুক্রের এই কমলা রঙের আকাশের সন্ধান পায় সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশযান ‘ভেনেরা’।

শুক্রের মতো মঙ্গলের একটি বায়ুমণ্ডল থাকলেও তাতে কোনো সালফিউরিক অ্যাসিড নেই। আর এই বায়ুমণ্ডলটি অত্যন্ত পাতলা এবং প্রচুর ধূলিকণায় পরিপূর্ণ। যে কারণে পৃথিবীর মতো স্বাভাবিকভাবে আলোর বিক্ষেপণ ঘটে না। এই সুযোগ গ্রহণ করে লাল রঙ। তার বিক্ষেপণ কম এবং তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় সে অনেক ধূলিকণা অতিক্রম করে দৃশ্যমান হতে পারে। যে কারণে দিনের বেলায় মঙ্গলের আকাশ অনেকটা লালচে ধরনের দেখায়। এই একই কারণে সকাল বেলা বা বিকাল বেলা পৃথিবীর আকাশ লাল হয়ে যায়। কারণ সে সময়ে সূর্যের আলো আমাদের চোখে পৌঁছাতে গেলে শুধু বায়ুমণ্ডল ভেদ করতে হয় না, তির্যকভাবে আসার ফলে বায়ুর পুরু স্তর এবং অনেক ধুলোবালি পেরিয়ে দৃশ্যমান হতে হয়।

এখনো পর্যন্ত বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের ভেতর থেকে কোনো মহাকাশযান ছবি তুলতে সক্ষম হয়নি। তবে মনে করা হয় এর আকাশও পৃথিবীর আকাশের মতোই নীল, তবে এই নীল অনেক বেশি অনুজ্জ্বল। পৃথিবীর তুলনায় বৃহস্পতির আকাশে সূর্যের আলোর উজ্জ্বলতা ২৭ গুণ কম। পৃথিবীর আকাশে আমরা সূর্যকে যতটুকু দেখি বৃহস্পতির আকাশে সূর্যকে সেই আয়তনের চারভাগের এক ভাগের চেয়েও ছোট দেখায়। সূর্যের পরে বৃহস্পতির আকাশে উজ্জ্বল বস্তুরা হল এর প্রধান চারটি চাঁদ। এরা হল আয়ো, ইউরোপা, গ্যানিমিড ও ক্যালিস্টো।

এর মধ্যে আয়ো আমাদের চাঁদের চেয়ে বড় দেখায়। তবে কিছুটা কম উজ্জ্বল। কিন্তু আবার কোনো মাতৃ গ্রহ থেকে দেখা এর চাঁদদের মধ্যে আয়োকেই সবচেয়ে বড় দেখায়। সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ হল গ্যানিমিড। এটি আয়ো ও ইউরোপার কাছাকাছি মানের উজ্জ্বল। তবে দেখতে আয়োর চেয়ে ছোট- অর্ধেক। তবে ইউরোপার চেয়ে অবশ্য দ্বিগুণ দেখায়। ক্যালিস্টো এদের মধ্যে সবচেয়ে দূরে। ফলে এটি দেখতে আয়োর চারভাগের এক ভাগের মতো।

বেশ আগেই আবিষ্কৃত হয়েছে শনি গ্রহের কোনো কঠিন পৃষ্ঠ নেই। এর বায়ুমণ্ডলের ওপরের দিকে থেকে আকাশ নীল দেখালেও যতই গ্রহের ভেতরের দিকে প্রবেশ করা হয় ততই আকাশের রঙ হলুদাভ হয়ে ওঠে।

ইউরেনাসের আকাশ কিছুটা নীল। শনির মতো এই গ্রহটির হালকা বলয় রয়েছে। ইউরেনাসের দক্ষিণ ও উত্তর দুই মেরুতেই একটি করে ধ্রুবতারা আছে। এরা হল যথাক্রমে ‘ওরাইওনিস’ ও ‘সাবিক’। দুটিই আমাদের উত্তর মেরুর ধ্রুবতারার চেয়ে অনুজ্জ্বল।

সৌরজগতের সর্বশেষ গ্রহ হল নেপচুন। এর আকাশের রঙ নীল। তবে এই নীল পৃথিবীর মতো সুনীল রঙ নয়, বরং অনেক উজ্জ্বল নীল। সূর্যের পরে নেপচুনের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল দেখা যায় এর উপগ্রহ ট্রাইটনকে। নেপচুন থেকে এই উপগ্রহটিকে একে আমাদের চাঁদের চেয়ে সামান্য ছোট দেখায়।

গ্রহ নয় বরং বামন গ্রহ হিসেবেই বিজ্ঞানীরা এখন প্লুটোকে বিবেচনা করেন। গ্রহটির ওপরে বায়ুমণ্ডলের একটি আস্তরণ রয়েছে। প্লুটোর বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন, মিথেন ও কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাস বিদ্যমান। তবে এর বায়ুমণ্ডলে সূর্যের আলো সেভাবে বিক্ষিপ্ত হয় না। যে কারণে কিছুটা সাদাটে নিলাভ দেখায় গ্রহটির আকাশ।

অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানীর ধারণা প্লুটোর পর কোনো গ্রহ কিংবা বামনগ্রহ না থাকলেও সৌরজগতের শেষ অঞ্চল প্রচুর গ্রহাণু দিয়ে ঘেরা। তাদের আকাশ কেমন সে সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত কোনো বিবেচনায় যাওয়া হয়নি। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন প্লুটোর পরও প্রায় ৭০ থেকে ৮০ আলোকবর্ষ দূরত্ব পর্যন্ত সূর্যকে খালি চোখে দেখা যায়। এবং সৌরজগতের বাইরেও বহুদূরের আকাশে সূর্য একটি উজ্জ্বল তারকা হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে সেখানে বায়ুমন্ডল যদি না থাকে তাহলে দিন ও রাতের বিবেচনা নেই।

আসলে কোনো গ্রহ বা উপগ্রহ থেকে বাইরে এসে যদি মহাশূন্যের চারিদিকে তাকিয়ে থাকা হয় মূলত সেখানে একটি পৃথিবীর তারাভরা রাতের প্রতিচ্ছবিই ভেসে ওঠে। তারারা বিভিন্ন সময়ে স্থান বদল করলেও এই রাত্রিদৃশ্য কখনো বদলায় না।

প্রজন্মনিউজ২৪/এস ডি

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ