প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ০৭:৫৬:০১
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ধাপে ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মতো কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরাও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। তারা জানতে চান, কবে অনুষ্ঠিত হবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন।
প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণ হলো শিক্ষার্থীরা। সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া ও প্রয়োজনীয় চাহিদা থাকে। এসব দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরতে এবং সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ছাত্র সংসদ।
একটি গণতান্ত্রিক ও শিক্ষার্থীবান্ধব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে ছাত্র সংসদের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা এটি শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চা শেখায় এবং নেতৃত্বগুণ তৈরিতে সহায়তা করে। আগামীর গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশ পরিচালনায় যোগ্য করে গড়ে তুলতে ছাত্রসংসদের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
জানা গেছে, সর্বশেষ ২০০২ সালে কবি নজরুল সরকারি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর পর থেকে দীর্ঘ ২৩ বছর ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য বিস্তারের ফলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। তৎকালীন সময়ে কলেজের ছাত্র সংসদ ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের কার্যালয় করে দখল করে রেখেছিল।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিবছর ছাত্র সংসদ বাবদ ২৫ টাকা করে আদায় করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই টাকার কোনো হিসেব শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থাপন করা হয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে কোনো ছাত্র সংসদ নেই, তাহলে কোথায় ব্যয় হচ্ছে এই টাকা? এমন প্রশ্নই তুলছেন প্রতিটি শিক্ষার্থী।
বর্তমানে কলেজে ছাত্র সংসদ শুধু নামেই টিকে আছে। এটি কলেজের নতুন ছয়তলা ভবন নির্মাণকাজে নিযুক্ত রাজমিস্ত্রিদের অস্থায়ী আবাসন হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে কলেজ প্রশাসন।
ছাত্র সংসদ ঘিরে শিক্ষার্থীদের ভাবনা
কবি নজরুল সরকারি কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুফিয়ান সরকার পারভেজ বলেন, পুরান ঢাকার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান কবি নজরুল সরকারি কলেজে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার, চাহিদা ও সমস্যাগুলো যথাযথভাবে তুলে ধরার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একটি গণতান্ত্রিক শিক্ষাঙ্গনের মূল শক্তি হলো নির্বাচিত নেতৃত্ব। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কেবল তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনই করে না, বরং গণতন্ত্র, নেতৃত্ব এবং সংগঠনের চর্চা শিখে নেয়। কিন্তু নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারছে না, তাদের সমস্যা ও দাবি যথাযথভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।
কবি নজরুল সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আজম খান বলেন, ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তারা সুষ্ঠু রাজনীতির চর্চা করবে। এতে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে ও শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ না থাকায় নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ক্লাস সংকট। অনেক বিভাগের শিক্ষকেরা নিয়মিত ক্লাস তো নেই-ই, এমনকি বিভাগেও আসেন না বলে শোনা যায়। অথচ তারা বাসায় বসেই বেতন পাচ্ছেন। যদি ছাত্র সংসদ থাকত, তবে এর দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে পারত।’
কবি নজরুল সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবদুন নুর বলেন, ‘ছাত্র সংসদ হলো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দ্বারা গঠিত সংস্থা বা দল। যার মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা, অধিকার আদায়, শিক্ষার মানোন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং কখনও কখনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কাজ করা। ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থী ও কলেজ প্রশাসনের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, আর এ জন্যই আমি ছাত্র সংসদ নির্বাচন চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্র সংসদ না থাকার কারণে বর্তমানে শিক্ষার্থীরা একপ্রকার অভিভাবক শূন্য। কেননা ছাত্র সংসদ নির্বাচিত প্রতিনিধি মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা খুব সহজে তাদের চাওয়া-পাওয়া, যেকোনো যৌক্তিক দাবি খুব সহজে প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দিতে পারত, যা ছাত্র সংসদ না থাকার কারণে সঠিকভাবে পারছে না। দীর্ঘদিন ফ্যাসিস্ট শাসকের একক আধিপত্য থাকার কারণে ছাত্র সংসদ বলতে কী তা প্রায় ভুলে যেতে বসেছেন শিক্ষার্থীরা। ঠিক কবে এ ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে তা আমার জানা নেই। তাই আমরা দ্রুত ছাত্রসংসদ নির্বাচন চাই।’
ছাত্র সংসদ নিয়ে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের চিন্তাধারা
কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি দেওয়ান মুহাম্মাদ তাজিম বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমরা বহু আগে থেকেই কথা বলে আসছি। এ বিষয়ে কয়েকবার প্রশাসনের কাছে আমরা স্মারকলিপিও দিয়েছি। কিন্তু প্রশাসনের কাছে আমরা আশাবাদী কোনো কথা শুনতে পাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি ডাকসু, জাকসু নির্বাচনের পরে নতুন করে ক্যাম্পাসগুলোয় ছাত্র সংসদের একটি আমেজ তৈরি হয়েছে। আমরা চাই তারই ধারাবাহিকতায় ৭ কলেজের প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হোক। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করার জন্য আমরা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করছি। প্রশাসন যদি সহজভাবে আমাদের এই ন্যায়সংগত দাবি না মানে, তাহলে অতি শিগগির আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য সংঘবদ্ধ আন্দোলনে রাজপথে নামতে বাধ্য হব।’
কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি নাহিদ হাসান বলেন, ‘কবি নজরুল কলেজে আমরাই প্রথম ছাত্র সংসদের দাবিতে আওয়াজ তুলেছি। একটি শিক্ষার্থীবান্ধব, আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে ছাত্র অধিকার পরিষদ সর্বদাই ছাত্র সংসদ নির্বাচন দাবি করে আসছে। একটি ক্যাম্পাসকে উন্নয়নশীল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে হলে অবশ্যই সেই প্রতিষ্ঠানে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ছাত্র সংসদ থাকলে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা ও সমস্যাগুলো প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে তুলে ধরতে পারে। ছাত্র সংসদ কেবল শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্রের চর্চা, নেতৃত্বের গুণাবলি এবং সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জনেও সহায়তা করে। তাই শিক্ষকদের সমন্বয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি।
কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি হাসিব বিন হাসান বলেন, ‘আমরা অনেক আগেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিবৃতি দিয়েছি। ছাত্র সংসদ একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি কার্যকর যোগাযোগের মাধ্যম। শিক্ষার্থীদের সমস্যা, দাবি বা প্রস্তাবগুলো ছাত্রসংসদ প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করে এবং সমাধানের পথ বের করতে সাহায্য করে। তাই আমরা চাই দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক।’
কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ইরফান আহমদ ফাহিম বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নিয়ে আমরা সব সময় ইতিবাচক। যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তবে তা অবশ্যই শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণকর হবে। আমরা মনে করি, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের মন খুলে কথা বলার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হচ্ছে ছাত্র সংসদ। এটি কলেজ ও শিক্ষার্থীদের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ছাত্র সংসদ না থাকায় শিক্ষার্থীরা তাদের অভিযোগ ও দাবি নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না। যদি ছাত্র সংসদ থাকত তবে এসব বিষয় সঠিকভাবে সেখানে উপস্থাপন করা যেত।
এ বিষয়ে কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে এখনো এ ব্যাপারে কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। এটা তো আমাদের একক সিদ্ধান্তে করতে পারব না, এটি মূলত সরকারি সিদ্ধান্ত। মন্ত্রণালয় থেকে যদি আমাদের চিঠি ও নীতিমালা দেওয়া হয় এবং ছাত্র সংসদ করতে বলা হয় , তখনই আমরা কার্যক্রম শুরু করতে পারব। বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত হলেও সরকারি অনুমতির প্রয়োজন হয়। আর আমাদের কলেজ তো পুরোপুরি সরকারি প্রতিষ্ঠান।’
প্রজন্মনিউজ২৪
‘বিএনপির উপর নিরর্ভর করছে এনসিপির সংসদে যাওয়া’
সাভারের ভাকুর্তায় জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদাণ
নোট অব ডিসেন্টের মাধ্যমে বিএনপির স্বৈরাচার হওয়ার চিন্তাভাবনা বোঝা যায়: তাহের
ফের জামায়াত আমির নির্বাচিত হলেন শফিকুর রহমান
বড় দলের ‘দয়া’ নিয়ে মাঠে নামা প্রার্থীদের সতর্ক করে যা বললেন পিনাকী ভট্টাচার্য
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের সুযোগ নেই: মির্জা ফখরুল
মাইশা মৃত্যুর বছর পেরোলেও দৃশ্যমান হয়নি সড়কের নিরাপত্তা কার্যক্রম
ইসির প্রতীক তালিকায় যুক্ত হলো শাপলা কলি