প্রকাশিত: ২৬ জুলাই, ২০২৫ ০২:৪৮:১৭
উত্তরা প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো আরিয়ান, ওমাইর ও বাপ্পি নামের তিন আত্মীয় শিশুর একসঙ্গে মৃত্যুতে শোকের মাতম চলছে ঢাকার তারারটেক এলাকায়। পরিবার হারিয়েছে স্বপ্ন, প্রতিবেশীরা হারিয়েছে হাসি, দেশ হারিয়েছে সম্ভাবনাময় তিনটি শিশু।
ছোট্ট আরিয়ান, ওমাইর আর বাপ্পির কবর পাশাপাশি। তিনজনেই আত্মীয়, বড় হচ্ছিল একসঙ্গে, একই স্কুলে। এখন তারা ঘুমিয়ে আছে পাশাপাশি, পারিবারিক কবরস্থানে। কবরগুলোর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না কেউই। অনেকেই দাঁড়িয়ে পড়ছেন, মাথা নিচু করে একটুখানি কেঁদে নিচ্ছেন। কান্না যেন সংক্রমিত হচ্ছে চারপাশে।
আল্লাহ আমারে না নিয়া এই তিন অবুঝ শিশুরে কেন নিল?
আরিয়ানের দাদি রাবেয়া খাতুন লাঠিতে ভর দিয়ে এসে দাঁড়ালেন কবরগুলোর সামনে। তার প্রশ্ন, ‘ওদের তো যাওয়ার বয়স হয় নাই।’ চোখের পানি থামছে না। কীভাবে থামবে? সোমবারের সেই বিভীষিকাময় বিকেল থেকে তাদের জীবনে যেন থেমে গেছে সময়।
তিন শিশুর মধ্যে আরিয়ান (চতুর্থ শ্রেণি), ওমাইর ও বাপ্পি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুলে। গত সোমবার সেই স্কুল ভবনের ওপরই বিধ্বস্ত হয় একটি যুদ্ধবিমান। মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। তাদের শরীর পুড়ে যায়, স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে যায়। হাসপাতালে একে একে মারা যায় তারা।
আরিয়ানের শেষ কথা: আম্মু, আমার নাকটা কি আছে?
মাহিদ হাসান আরিয়ান, চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। সোমবার জ্বরের পর প্রথমদিন স্কুলে গিয়েছিল। মা মনিকা আক্তার ভেবেছিলেন, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে ছেলের মন ভালো হবে। সকালে ভুনা খিচুড়ি রান্না করে স্কুলে পাঠিয়েছিলেন। দুপুরে খবর আসে—আরিয়ান পুড়ে গেছে।
উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে গিয়ে মা শুনতে পান ছেলের শেষ আর্তনাদ—“আম্মু!” তারপর আর কোনো শব্দ ছিল না, শুধু পোড়া শরীর, ঝলসে যাওয়া চামড়া, আর নিঃশেষ হওয়া এক শিশুর জীবন।
পরে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয় তাকে। সেখানে আরিয়ান একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে, ‘পানি দাও, অক্সিজেন দাও… আমার নাকটা কি আছে?’ সে বোঝাতে পারছিল, যন্ত্রণার অতল গহ্বরে সে ডুবে যাচ্ছে।
আরিয়ানকে বাঁচাতে না পেরে বড় ভাই জুবায়ের মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। সেও মাইলস্টোন কলেজে পড়ে। স্কুল ভবন থেকে নেমে ভাইকে খুঁজে ফেরে, চিৎকার করে, ‘আমার ভাইকে কেউ দেখছ!’ কিন্তু আরিয়ানকে আর কখনো দেখা যাবে না।
ওমাইর: তেলাপোকা দেখলে ভয় পেত, শব্দেও কেঁপে উঠত
ওমাইর নূর আসফিক, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। তার ছিল জন্মগত হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা। শব্দ শুনলে ভয় পেত। সোমবারের বিকেলের সেই আগুন-চিৎকার-ধোঁয়া—সবই যেন তার ভয়গুলোর সীমা ছাড়িয়ে যায়।
ওমাইরের চাচা শফিকুল ইসলাম দৌড়ে স্কুলে গিয়েছিলেন। আগুনের মধ্যে ওমাইরকে যখন সেনাবাহিনীর সদস্যরা বের করে আনেন, তিনি তখনই বুঝে গিয়েছিলেন, ওমাইর আর নেই। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও চিকিৎসকেরা বলেন, বাঁচানোর আর কিছু নেই।
মা-বাবা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না। মা ছেলের একটি আধপোড়া জুতা বুকের মাঝে আগলে রেখেছেন, ছেলের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে ভেঙে পড়ছেন।
বাপ্পির মা যদি ছেলেকে খাওয়াতে যেতেন, তিনজনই মারা যেতেন
বোরহান উদ্দিন বাপ্পি, তৃতীয় শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী। মামাতো ভাই ওমাইরের সঙ্গে একই ক্লাসে পড়ত। ঘটনার দিন তার মা বীথি আক্তার টিফিনবক্স হাতে স্কুলে গিয়ে ছেলেকে খাওয়াতে চেয়েছিলেন। কোচিং থাকায় পরে রেখে আসেন। ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। কিন্তু সন্তান হারান চিরতরে।
বাপ্পির বাবা আবু শাহীন বলেন, ‘ঘটনার পর স্কুলে গিয়ে দেখি, ক্লাস ভবনের নিচেই বিধ্বস্ত হয়েছে বিমান। তখনই বুঝলাম, আমার ছেলেকে আর পাব না।’
বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয় বাপ্পিকে। চিকিৎসকেরা জানান, তার শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। সন্ধ্যায় মারা যায় বাপ্পি। পুড়ে গেছে স্কুলড্রেস, পরিচয়পত্র, ব্যাগ—সবই। মা-বাবা বাড়িতে পড়ে থাকা কিছু খেলনা, বই, পোশাক জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছেন।
একটি পরিবার হারাল তিনটি শিশু
এই দুর্ঘটনায় শুধু আরিয়ান, ওমাইর আর বাপ্পিই নয়, তাদের পরিবারের আরও তিন শিশুও আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। একজন স্কুলের আয়াও আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
মো. রাসেল, আরিয়ানের চাচা বলেন, ‘আমাদের বংশের এই তিনটা শিশু একসঙ্গে গেল। ওদের কবর পাশাপাশি। এলাকায় চলছে কান্নার হাহাকার।
’প্রজন্মনিউজ/২৪
১০৮৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হচ্ছে, ফাইলে প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষর
গার্মেন্টস শ্রমিদের বিক্ষোভ,তীব্র যানজট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে
‘বিএনপির উপর নিরর্ভর করছে এনসিপির সংসদে যাওয়া’
সাভারের ভাকুর্তায় জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদাণ
নোট অব ডিসেন্টের মাধ্যমে বিএনপির স্বৈরাচার হওয়ার চিন্তাভাবনা বোঝা যায়: তাহের
বরগুনাতে চাঁদা দাবি ব্যবসায়ীকে প্রাণনাশের হুমকি
ফের জামায়াত আমির নির্বাচিত হলেন শফিকুর রহমান
বড় দলের ‘দয়া’ নিয়ে মাঠে নামা প্রার্থীদের সতর্ক করে যা বললেন পিনাকী ভট্টাচার্য
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের সুযোগ নেই: মির্জা ফখরুল
মাইশা মৃত্যুর বছর পেরোলেও দৃশ্যমান হয়নি সড়কের নিরাপত্তা কার্যক্রম