অবরোধের তিন দিন

প্রকাশিত: ০২ নভেম্বর, ২০২৩ ০৮:১৭:২৪

অবরোধের তিন দিন

মোঃ সাদিকুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক: শনিবার (২৮ অক্টোবর) মহাসমাবেশে হামলা, নেতাকর্মীদের হত্যা, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি-হয়রানি ও নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং চলমান এক দফা দাবিতে (প্রায় আট বছর পর) টানা ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।

সরকার বিরোধী চলমান আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) থেকে বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) পর্যন্ত সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও।

এই অবরোধের প্রভাব সকালের দিকে তেমনটা দেখা না গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাসের স্বল্পতায় প্রথম দিন  (৩১ অক্টোবর) থেকে তৃতীয় দিন পর্যন্ত বেড়ে চলেছিল যাত্রী ভোগান্তি। রাস্তায় বের হয়ে অনেকেই গাড়ি পাচ্ছিলেন না। আর যারাও পেয়েছিল, গাড়ি কম থাকায় খুব কম সময়েই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছিল। যাত্রীদের একজন তো ফাঁকা নগরীতে মাত্র ১৫ মিনিটে ব্যস্ততম সড়ক রামপুরা পাড়ি দিয়ে শাহবাগ পৌঁছে যেন নিজেই বিশ্বাস করতে পারছেন না।

প্রথম দিন-

তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন (৩১ অক্টোবর) মঙ্গলবারে  বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে একজন মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে সড়ক অবরোধ করার সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হলে সড়কের ওপর আগুন জ্বালিয়ে দেয় বিএনপির কর্মীরা। কিশোরগঞ্জ ও সিলেট মিলে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকাসহ ৪ জেলায় ২৭ পুলিশসহ অন্তত ১২৪ জন আহত হয়েছেন।আবার  ঢাকাসহ ২০ জেলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীসহ অন্তত ৩০৫ জনকে আটক করেছে পুুলিশ।এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে উদ্বেগ থাকলেও রুটি-রুজির তাগিদে মানুষকে ঠিকই রাস্তায় বের হতে হয়েছে। বিভিন্ন সড়কের দেখা গেছে অফিসগামীযাত্রীদের ভিড়। তবে মিরপুর ১০, মিরপুর ২, মিরপুর ১, টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর ও শ্যামলী এলাকায় যাত্রী ছিল কম। যেসব বাস রাস্তায় চলছিল, তার অনেক আসনই ছিল ফাঁকা।তবে  ঢাকায় দূরপাল্লার কোনো বাস আসেনি এবং ছেড়েও যায়নি।

কিন্তু ঢাকাসহ  সাড়াদেশে বিভিন্ন সড়কে পুলিশের সতর্ক অবস্থান ছিল।

দ্বিতীয় দিন-

সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মত দেশব্যাপী সড়ক-রেল-নৌপথ, রাজপথসহ সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট। বুধবার (১ নভেম্বর) ভোর হতেই সারা দেশে শুরু হয়েছে এই অবরোধ।এই দিন সকালে ঢাকার তিনটি স্থানে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা মহানগরী জামায়াত ইসলাম। এর মধ্যে গেন্ডারিয়া রেলস্টেশন অবরোধ, পোস্তাগোলায় মহাসড়ক অবরোধ, মালিবাগে রেলপথ অবরোধ করা হয়। ২য় দিনও বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষ,ঢাকায় আসেনি এবং ছেড়েও যায়নি দূরপাল্লার কোনো বাস, ফরিদপুরে ২ জন গুলিবিদ্ধসহ সারাদেশে আহত অর্ধশতাধিক,কিন্তু  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে রাজধানী ছিল কার্যত ফাঁকা।

এই দিনেও ঢাকাসহ  সাড়াদেশে বিভিন্ন সড়কে পুলিশের সতর্ক অবস্থান ছিল।

তৃতীয় দিন-

বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর ডাকা সারাদেশে টানা তিন দিনব্যাপী সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির শেষ দিন আজ।বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বিএনপি-জামায়াতের তৃতীয় দিনের অবরোধ শুরু হয়েছে।আগের দুই দিনে দেখা গেছে, খুব সীমিত আকারে প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশা চলেছে। তবে সারাদেশের সাথে রাজধানীর যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিল। সাধারণ দিনের চেয়ে সারাদেশে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর টহল ছিল সড়কে।এদিকে দেশব্যাপী টানা তিন দিনের অবরোধের দ্বিতীয় দিনে বুধবার ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সারাদেশে বিএনপিসহ বিরোধী দলের শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের মিডিয়া সেল সূত্রে জানা গেছে, অবরোধ চলাকালে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে কমপক্ষে ২১টি অগ্নিসংযোগের খবর পেয়েছেন তারা। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে পাঁচটি, ঢাকা বিভাগে সাতটি (সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ), চট্টগ্রাম (কর্ণফুলী, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ড) এবং রাজশাহী (বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও রংপুর) বিভাগে চারটি করে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

আজ শেষ দিনেও সাড়াদেশে বিভিন্ন সড়কে অসংখ্যা পুলিশের ভীড় ও সতর্ক অবস্থান দেখা যায়।


প্রজন্মনিউজ২৪/এসআই

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ