দেওলিয়াত্বে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনা: একটি তূলনামূলক সমীক্ষা

প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল, ২০২২ ১১:২৫:৫৪

দেওলিয়াত্বে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনা: একটি তূলনামূলক সমীক্ষা

ফয়সাল মাহমুদ: শ্রীলঙ্কা যে নামটি গুগুল করলেই পাওয়া যায় চা, কফি, নারিকেল, রাবার উৎপাদন ও রফতানিতে বিখ্যাত হরেক রকমের পণ্যের সমাহার। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংবলিত সমুদ্রসৈকত, ভূদৃশ্য তদুপরী সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য শ্রীলঙ্কাকে সারা পৃথিবীর পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে। 

কিন্তু ঠিক কি হলো দেশটির সাথে যাতে করে দেশটি নিজেকে দেওলিয়াত্ব ঘোষণার করল।সরকার পতন হলে নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন করা সম্ভব,কিন্তু রাষ্ট্র পতন হলে তার কি উত্তরণ সম্ভব?এর সাথে পর্যায়কালে আলোচনা হবে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনার দিকটিও। আসুন জেনে নিই 
শ্রীলঙ্কা রাষ্ট্রের কিছু তথ্য:-
এশিয়া মহাদেশের ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি দ্বীপ-দেশ। আরব বণিকরা এই দ্বীপকে সেরেন্দ্বীপ (Serendip) নামে ডাকত। পূর্বে বাংলাতে এই দেশের নাম সিংহল নামে পরিচিত ছিল। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে পর্তুগিজরা এই দ্বীপে পৌঁছে এর নাম দিয়েছিল শেইলাও। ধারণা করা হয়, এই সূত্রে ইংরেজরা এর নামকরণ করেছিল সিলোন (ceylon)। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের সময় এর নাম ছিল সিলোন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে এর নামকরণ করা হয় শ্রীলঙ্কা। 

উল্লেখ্য সংস্কৃত শ্রী শব্দের অর্থ সৌন্দর্যমণ্ডিত এবং লঙ্কা অর্থ দ্বীপ। এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে নাম শ্রীলঙ্কা (সৌন্দর্যমণ্ডিত দ্বীপ)।সৌন্দর্যের অভয়ে ঘেরা এই দ্বীপ রাষ্ট্র প্রচীন কাল থেকেই ভ্রমণপিপাসু মানুষদের নিকট বেশ চমৎকার একটি স্থান।দেশটি ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়।তারপরেই দেশটি গগণতান্ত্রিক রাজনীতীর সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে।বিভিন্ন সময়ে দেশটি তার পার্শবর্তী ক্ষমতাধর রাষ্ট্র চীন ও ভারতের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এসেছে।জাতীয় নির্বাচনেও এ দুটি রাষ্ট্রের ভূমিকা বেশ বড় ভামিকা রাখে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির করুন অবস্থা উন্নয়নশীল মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে বেশ চিন্তিত করেছে।কেউ বলছেন চীন এর ঋনফাঁদ ই এটার মূখ্য কারণ।আবার কেউ বলছেন অপ্রয়োজনীয় কিছু বিলাস বহুল প্রকল্পের নামে অযথা অর্থ খরচ ই এই দশার মূল কারণ।স্বাধীনতা লাভের পর দেশটি কখনই এমন দুরঅবস্থার শিকার হয়নি। গত পনেরো বছরে শ্রীলঙ্কা বেশ কিছু বিলাসবহুল প্রকল্প হাতে নিয়েছে এর মধ্যে অন্যতম চীনা কারিগরি সহায়তায় কলোম্ব পোর্ট সিটি যার ব্যয় ১.৫ বিলিয়ন ডলার।এটি একটি সমুদ্রবন্দের মধ্যে নতুন শহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা।উচ্চাভিলাষী এই পরিকল্পনাটি শেষ হতে সময় লাগবে প্রায় পচিঁশ বছর।

বলা হয়ে থাকে, বিশ্বের অন্যান্য উন্নত শহর গুলির সাথে পাল্লা দিবে এই নতুন সিটি। মেগা প্রকল্পগুলা বাস্তবায়নের জন্য চীন বিভিন্ন উৎস হতে ক্রমাগত ঋণ নিয়েছে।অথচ এগুলা থেকে পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক আয়ের সম্ভাবনার কথা না ভেবেই পরিকল্পনা পাস করা হয়।

এগুলা বাস্তবায়নে চীনের কাছ থেকে এ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা ঋণ নিয়েছে পাঁচ বিলিয়ন ডলার। চীন ছাড়াও জাপান, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজার থেকে শ্রীলঙ্কার ঋণের উৎস। শ্রীলঙ্কার অর্থ যোগানের আরো একটি উৎস হলো সার্বভৌম বন্ড। এটা মূলত আন্তর্জাতিক বাজরে বন্ড ইস্যু করে অর্থ উপার্জনের একটি পথ।অর্থনীতীবিদগণ বলেন, একটি দেশের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশী হলে এ ধরনের সার্বভৌম বন্ড বিক্রি করা হয়। আন্তর্জাতিক বন্ড বাবদ বর্তমানে শ্রীলঙ্কার ঋণ সাড়ে বারো বিলিয়ন ডলার।এই বিপুল ঋণের ঘাটতি কিভাবে পূরণ হবে, সে ব্যাপারে পরিকল্পনার ঘাটতি ছিল প্রথম থেকেই। সব মিলিয়ে চলতি বছরে শ্রীলঙ্কা কে সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে। তার মধ্যে বৈদেশিক ঋণ দেড় বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা বলছে এই ঋণ পরিশোধ করতে শ্রীলঙ্কা অপারগ। 

তবুও শ্রীলঙ্কা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, সব তথ্য সঠিক নয়। তাঁরা বলছেন গত দুই বছরে যে ঋণ নেওয়া হয়েছে সেখান থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। সর্বশেষ জানুয়ারী মাসে পাচশ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে শ্রীলঙ্কা। যার ফলে রিজর্ভে অনেক ঘাটতি দেখা দিয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি তেল সহ মৌলিক সরঞ্জাম কেনায় দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। 

কর কমানো আরেকটি বড় কারণ হতে পারে এই দুরঅবস্থার। ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা নেবার পরে ভ্যাট ও ট্যাক্স কমিয়ে দেন অর্থনীতীতে গতিশীলতা আনবার জন্য। এই পরিমাণ ১৫ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশে নিয়ে আসেন। ২০০৯ সালে তামিল ইলম কে পরাজিত করবার পর প্রধানমন্ত্রী রাজাপাক্ষে অর্থনীতীতে গতীশীলতা আনতে ভ্যাট ও ট্যাক্স কমিয়ে আনেন। তখন এ পদ্ধতি শ্রীলঙ্কার অর্থনীতী তে বেশ বড় ভূমিকা রেখেছিল। ২০১৯ সালে গোতাবায়ে রাজাপাক্ষে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরও এই পদ্ধতি বহাল রাখেন। সাময়িক সময়ে ভ্যাট /ট্যাক্স কমিয়ে সফলতা আসলেও পরবর্তী তে এটা তেমন অবদান রাখতে পারেনি। একই সাথে ২ শতাংশ হারের নেশন উন্নয়ন কর(নেশন বিল্ডং ট্যাক্স) যত আয় তত কর (পে এজ ইউ আর্ন-পিএইউই) ব্যবস্থা বিলুপ্ত করেন। এর প্রভাব পড়ে রাজস্ব আয়ে। 

একই বছরে রাজস্ব আয় ২৫ শতাংশ কমে যায়। মূলত করোনা কালীন অর্থনীতীর চাকা দীর্ঘসময় বন্ধ থাকায় এই পদ্ধতি একরকম ধসে পড়ে। যার ফলে সরকার আরো বেশী করে ঋণ নেওয়ার দিকে ঝুকে পড়ে। পর্যটন ও শিল্প খাত শ্রীলঙ্কার জাতীয় অর্থনীতীকে সচল রাখতে বিশেষ অবদান রাখে। ১০ শতাংশ অবদান রাখে এই খাত জিডিপিতে। অথচ ২০১৯ সালে ঘটে যায় মর্মান্তিক এক দূর্ঘটনা যার প্রভাব সরাসরি এসে পড়ে পর্যটন খাতে। কলম্বোয় তিনিটি গির্জা ও তিনটি হোটেলে বোমা বিস্ফোরণে মারা যায় ২৫৩ জন। সেখান থেকেই মূলত এ শিল্পের অবনতি হওয়া শুরু করে। পরের বছর করোনার তূমুল অর্থনৈতিক ধসে খাতটি সব দিক থেকেই ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। জেনে রাখা ভালো, চীনা পর্যটক হলো শ্রীলঙ্কার প্রধানতম আয়ের উৎস। করোনার উৎপত্তিস্থল চীনে এই ভাইরাসের আক্রমন বেশী হওয়াতে কঠোর বিধিনিষেধ আসে স্বংয় চীনা কতৃপক্ষ থেকেই। বিশ্বের অন্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে শ্রীলঙ্কাও করোনাকালীন বাজেট খাতে ব্যয় বাড়ায় অথচ আয় কম। ফলে বাজেট ঘাটতি হয় ১০ শতাংশ। কৃষি খাতে অর্গানিক সার হটাৎ ব্যবহার কৃষি দ্রব্যের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। যার ফলে ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ শ্রীলঙ্কা ধান আমদানির দিকে ঝুকতে বাধ্য হয়। মূলত অর্গানিক সার ব্যবহার নিয়ে গ্রুপটি ছিল একটা লবিস্ট গ্রুপ। এই গ্রুপটির পরামর্শে গোতাবায়া রাজাপক্ষে ২০২১ সালের মে মাসে বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের চাপ কমাতে রাসায়নিক সার আমদানি নিষিদ্ধ করেন।

পরিবেশ এর মান রক্ষাত্রে হঠাৎ করেই এ সিদ্ধান্ত বিরাট বিপদ ডেকে আনে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে। করোনা কালীন যেখানে কৃষি খাত বহু দেশের মেরুদন্ড হিসাবে কাজ করেছে সেখানে শ্রীলঙ্কার এ সিদ্ধান্ত বড়ই ভূল ছিল বলা যায়। শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি এখন সরকারি হিসাবে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ, আর খাদ্যপণ্যে তা ৩০ দশমিক ১ শতাংশ। তবে বেসরকারি হিসাবে মূল্যস্ফীতি ৫৫ শতাংশের বেশি। এ অবস্থায় খাদ্য আমদানির প্রয়োজন হয়। দেশটির বাণিজ্য ঘাটতিই এখন ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি। রাজনীতীতে স্বজন প্রীতিও একটি বড় কারণ হতে পারে শ্রীলঙ্কার বর্তমান দুঃঅবস্থার। দেশটির রাজনীতীর বড় পর্যায়ে গোটাবায়ে রাজপাকসের পরিবারের বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ রয়েছে।
যাদের বিরুদ্ধে  সীমাহীন দূর্নীতি ও মুদ্রা কালোবাজরির মতন অভিযোগ রয়েছে।

শ্রীলঙ্কার এই অসহনীয় অবস্থার দরুণ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ বেশ চিন্তিত। কেননা বাংলাদশ সহ এশিয়ান ভূক্ত দেশগুলোতে চীনা ঋণ দিন কে দিন বেড়ে চলছে। উপরের আলোচনা হতে অত্যন্ত এটা বোঝা যাচ্ছে শুধু চীনা ঋণ নয় এর পিছনে অভ্যন্তরীন অনেক কারণ বিদ্যমান। শ্রীলঙ্কা চীন থেকে ঋণ এর হার মাত্র ১০ শতাংশ।

বাংলাদেশ ২০২৬ সালের ভিতর স্বল্প উন্নত দেশের তালিকা হতে বের হয়ে যাবে। স্বল্প উন্নত দেশের তালিকা হতে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেতে সরকার বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে দেশের সার্বিক উন্নয়নও জিনিসপত্রের দাম লাগামহীন হওয়াতে মানুষজন বেশ চিন্তিত এ বিষয়টি নিয়ে যে শ্রীলঙ্কার মতন বাংলাদেশের অবস্থা হবে কিনা?

উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪৷ দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশের অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থনীতিগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান৬২, পাকিস্তানের ৫২ ও শ্রীলঙ্কার ৪০৷ অন্যান্য দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের উদীয়মান উন্নয়ন বেশ সম্ভাবনার সাড়া ফেলেছে। সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, কয়লাভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প ও সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প। শ্রীলঙ্কার মতন আমাদের দেশ হয়ত কলম্বো পোর্ট সিটি তৈরী করে কাতার, সিঙ্গাপুরের সাথে টেক্কা দিবে না তবে যে প্রকল্পগুলো এখন পর্যন্ত সরকার নিয়েছে সেগুলা সবই জনগণের কল্যানে। জনগণের সার্বিক সুবিধায় নির্ধারন করে একটি প্রকল্পের সফলতার মান।

শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বিমানবন্দর চীনকে দিয়ে শ্রীলঙ্কার সরকার শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করেছে। অর্থনেতিক ভাবে সফলতার মাপকাঠি নির্ণয় করে নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশকে প্রকল্প গ্রহণে সচেতনতা ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা দেখাতে হবে। প্রায় ৪০০০ ডলার আয়ের মাথাপিছু দেশটি যখন আর্থিক ভাবে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষনা করে তখন বিষয়টা বেশ চিন্তার। বাংলাদেশের প্রক্ষিতে এর সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ। কেননা বর্তমানে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ যেখানে ২ বিলিয়ন ডলার সেখানে বাংলাদেশের ৪৪ বিলিয়ন ডলার অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার মাথাপিছু ঋণ যেখানে ১৬৫৯ ডলার সেখানে বাংলাদেশের ২৯২.১১ ডলার। মুদ্রাস্ফীতি তেও বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে  শ্রীলঙ্কার ৩০% এর জায়গায় ৬.২২%।তবুও বাংলাদেশের এই উন্নয়ন সম্ভাবনা বেশ জটিল কিছু কারণে ব্যহত হতে পারে যেমন- রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যে টাকা দিয়ে নির্মান হচ্ছে সেই অর্থ দিয়ে ভিন্ন উৎস হতে কম টাকায় আমরা বিদুৎ উৎপাদন করতে পারতাম। শ্রীলঙ্কার মতন আমরাও দিনশেষে একটি ক্ষেত্র কে রপ্তানির প্রধান জায়গা বানিয়ে নিয়েছি। তাদের ছিল পর্যটন শিল্প আমাদের হলো গার্মেন্টস শিল্প। রপ্তানির ক্ষেত্রে একমূখী করণ হতে বাংলাদেশকে বের হয়ে আসতে হবে। জিডিপি বেশী বাড়িয়ে রাজস্ব আয় কমানো হলে জাতীয় অর্থনীতি স্থীতিশীল হবে না। ঋণ কাঠামের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে কৌশলী ও জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করতে হবে। প্রকল্প বিলম্ব হলে ঋণ গ্রহণের মাত্রাও বেশী হয় এক্ষেত্রে সময় মতন প্রকল্পগুলা বাস্তবায়নে বিশেষ তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যক্ষ করের উপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে হবে। কর ফাঁকি অপ্রতক্ষ্য খাতের উপর চাপ সৃষ্টি করে। বিদেশে টাকা স্থানান্তর, ব্যাংক লোপাট বিষয়গুলোতে বাংলাদেশকে আরো বেশী করে দৃষ্টি দিতে হবে। 

প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে আরো বেশী করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ভবিষ্যৎ এ কোনো অবকাঠামো প্রকল্প গ্রহণে পূর্বে প্রকল্পটির প্রয়োজনীয়তা, জনকল্যান এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে। প্রকল্প চালুর প্রাথমিক পর্যায়ে সেবা দিতে পারলে ঋনের বোঝা হালকা মনে হবে। আগেই বলেছি ২০২৬ সাল নাগাত বাংলাদেশ আর স্বল্প উন্নত দেশের তালিকায় আর থাকছে না। এই কাতারে থাকার সুবিধা ছিল বাংলাদেশ অল্প সুদে ঋণ নিতে পারত। এটা ২০২৬ সাল পরে আর পারবে  না তখন উচ্চ সুদে ঋণ গ্রহণ এ বাংলাদেশ বাধ্য হবে আন্তর্জাতিক সংস্থা হতে। বাংলাদেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। আমদানির আরো বাড়লে রিজার্ভের টান পড়বে এতে রিজার্ভে অবকাঠামো উন্নয়ন সুযোগ কমে যাবে। এজন্য বড় প্রকল্পের দায় পরিশোধ ও সামষ্টিক অর্থনীতির সূচক নিয়ে সব মিলিয়ে অর্থনীতির উপর চাপ বাড়বে। বাংলাদেশের বিদেশী ঋণের হার জিডিপির ১৩ শতাংশ মাত্র। আই এম এফ বলছে, এই হার ৫৫ পার হলেই মহা বিপদ দেখা দিতে পারে। এদিক থেকে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে।তবে সবকিছু আমলে নিয়ম বাংলাদেশের জি ডি পি,রপ্তানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ,রেমিটেন্স সহ অর্থনীতির অন্যান্য সূচক বিবেচনায় এ কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কা থেকে অনেক গুণে ভালো।

শেষকথা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পলিটিক্যাল ইকোনোমি নামে একটা টার্ম আছে রাজনৈতিক ভাবে অর্থনীতী সেক্টরগুলোর উন্নয়ন, সমন্বয়, বন্ঠন ও মানোন্নয়নই তার কাজ। একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের অর্থনীতীকে আরো বেশী সম্ভাবনাময় করতে এই বিষয়টা বিবেচনায় রাখা যেতে পারে যাতে করে উন্নয়নের ধারাবহিকতা স্থিতিশীল হতে পারে।

লেখক, ফয়সাল মাহমুদ - রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ।


প্রজন্মনিউজ২৪/ নুউদ্দিন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন