পবিত্র মাহে রমাদান ও আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা

প্রকাশিত: ১৫ মার্চ, ২০২৪ ০৫:৩১:৩৯ || পরিবর্তিত: ১৫ মার্চ, ২০২৪ ০৫:৩১:৩৯

পবিত্র মাহে রমাদান ও আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা


আজ ১৪ই মার্চ, ২০২৪ সাল ও রমজানের প্রথম জুম্মাবার। এই  উপলক্ষ্যে জুমার নামাজ আদায় করি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদে। সম্মানিত খতিব বাংলায় যে বক্তব্য দিয়েছেন তার উপর ভিত্তি করে আজকে আমি আমার এই লেখাটি সংকলন করছি। খতিব সাহেবের বক্তব্যটি ফাজায়েলের বর্ণনা থেকে সামাজিক সমস্যার সমাধানে মুসল্লিদের করনীয় কি হবে, সেই বিষয়ে বেশি আলোচনা করেছেন। আমার দৃষ্টিতে এই বক্তব্য যদি সমাজে বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে সামাজিক সমস্যার সমাধান করাটা অনেক সহজ হবে, ইনশাআল্লাহ। 

প্রথমত: আমাদের সমাজের অন্যায়ের উৎস সম্পর্কে বলতে গেলে বলা যায়, মানুষের চোখ হলো সব অন্যায় কাজের প্রাথমিক উৎস, কারণ চোখ দিয়ে দেখে সে অন্যায় কাজ করতে উৎসাহী হয়। একারণে আমাদের সবচয়ে জরুরী কাজ হলো আমাদের চেখের হিফাজত করা। অশ্লীল, অন্যায় ও খারাপ কাজ থেকে চোখকে হেফাজত করতে পারলে সমাজের অনেক অপরাধ সহজেই দূর হয়ে যাবে। কেননা চোখের দৃষ্টি অন্যায় কাজকে আকর্ষণ করলে মস্তিষ্ক সেই পাপকে বাস্তবায়নের জন্য প্লান তৈরি করে ও পরবর্তীতে  মানুষের অঙ্গ পতঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে। এ জন্য চেখের হেফাজত করা সবার আগে জরুরী। "অন্যায় জিনিসের প্রতি প্রথম দৃষ্টিপাত নিজের ও পরবর্তী দৃষ্টিপাত শয়তানের" ইসলামের সভ্যতা এভাবে মূল্যায়ন করে।

দ্বিতীয়তঃ এই রমাদানে আমাদের মুখের হেফাজত করতে হবে। আমাদের মুখ দিয়ে অন্যায় কথা বলা ও অপরজনের গোপন কথা বলা, বিশেষ করে গীবত করা যাবেনা। গীবত ও বুহতান আমাদের সমাজের সম্প্রীতি নষ্টের অন্যতম নিয়ামক শক্তি। দুজন একত্রিত হলেই অনুপস্থিত অন্য ব্যক্তিকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করতে থাকি এটাই অশান্তির মূল কারণ। এ কারণে দুজন মিলে অন্যের দোষ ও মিথ্যা অপবাদ দেওয়া যাবেনা। সেক্ষেত্রে একটি হাদিসের ঘটনা উল্লেখ্য করা যায় রাসূলুল্লাহ (সা) সময় দুই মহিলা সাহাবি রমজানে  মাংস-রক্ত বমি করেছিলেন। সাহাবিরা এ ঘটনাটি রাসুলকে (সা) বললে তিনি বলেন ওদেরকে আরো রক্ত-বমি করতে বলো যেন পেটে থাকা খারাপ বস্তু বের হয়ে যায়। তারা গীবত করেছে আর গীবত হলো মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়ার সমতুল্য। আজকের সমাজের বাস্তবতা হলো পরনিন্দা ও মিথ্যা অপবাদ সামাজিক অশান্তির অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। এ কারণে আমাদেরকে গীবত ও বুহতান থেকে নিজেদের হেফাজতে রাখা দরকার। 

তৃতীয়ত: বেশি বেশি  কোরআন তেলাওয়াত করা ও  ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এর মর্ম বাণী বাস্তবায়নের চেষ্টা করা। তাহলে সমাজের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও অশান্তি থেকে মুক্তি মিলবে। বিশেষ করে আজকের সমাজে ভালো কথা বলার এবং শোনার লোক থাকলেও ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনে সেগুলো প্রতিষ্ঠার ও অনুশীলনের অনেক অভাব রয়েছে।  এই রমাদানে আমাদের এই দুর্বলতা দূর করে ও সঠিকভাবে আসমানী জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা একান্ত জরুরী।  

চতুর্থত: বর্তমানে আমাদের পার্থিব জীবনের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হলো অর্থ সম্পদ অর্জন করা ও ভোগ বিলাসিতায় সময় পার করা। এজন্য   গরিব-দুখী মানুষ কিভাবে খাদ্যের অভাবে দিন অতিবাহিত করে তার শিক্ষা দেওয়ার জন্যই পবিত্র রমাদান মাস। এ মাসে বেশি বেশি অর্থ দান করা ও গরিবের সহযোগী হিসেবে দাঁড়াতে পারাটাই মূল সফলতা। সেজন্য আমাদের সকলকে আর্থিক কুরবানীকে প্রাধান্য দিতে হবে ও সমাজের অবহেলিত, নির্যাতিত মানুষের আর্থিক মুক্তির জন্য ব্যক্তিগত ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সর্বশেষ প্রত্যেকটি মুসলিমের আত্মিক প্রশান্তির জন্য মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা ও সকল মানুষের জন্য কল্যাণ কামনা করা ও কল্যাণকামী হওয়া। এভাবে আমাদের সমাজের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও প্রশান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এই রমাদান থেকে এই শিক্ষাগুলো গ্রহণ করে পরবর্তী সময়ে তা বাস্তবায়ন করাই এই  সংযম মাসের মূল উদ্দেশ্য। 

ড.একরাম উদ্দীন সুমন 
নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ