কাউকে অশ্লীল ভাষায় গালি দেবার পরিনাম কী ?

প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারী, ২০১৯ ১১:০৭:৫৪

কাউকে অশ্লীল ভাষায় গালি দেবার পরিনাম কী ?

মাও. মো.হামিদুর রহমান : গালি আমাদের সমাজের এক মারাত্মক ব্যাধি। গালি দেয়া পাপের কাজ। গালিগালাজ করা কোনো সুস্থ মানসিকতার পরিচয় নয়। মুদ্রাদোষ বা অভ্যাসবশত অনেকেই কথায় কথায় গালি দেন, অনেকেই হাসি-তামাশা ও ঠাট্টাচ্ছলেও অন্যকে গালি দিয়ে বসেন এসবের কোনোটিই ঠিক নয়।

সমাজে এখন গালি দেয়াকে কোন দোষের বলে মনেই করেননা অনেকে । আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা এ কাজে একধাপ এগিয়ে আছে বলতেই হয়। সাধারণ কোন ব্যাপারেই একদল আরেকদলকে গালি দিয়ে বসেন। ভাবটা এমন যে আমি গালি দিলামতো জিতে গেলাম। আসলে কি তাই! আসুন ইসলাম কি বলে দেখি।

গালি সম্বন্ধে হজরত রাসুলুল্লাহ [সা.] বলেছেন, এমন দুই ব্যক্তি, যারা একে অপরকে গালমন্দ করল, তখন ওই গালির পাপ সে ব্যক্তির ওপরই পতিত হবে, যে প্রথমে গালি দিয়েছে যে পর্যন্ত না নির্যাতিত ব্যক্তি সীমা অতিক্রম করে। এই হাদিসের আলোকে বোঝা যায় যে, গালির সূচনাকারী ব্যক্তি অত্যাচারী এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি অত্যাচারিত।

আর অত্যাচারিত ব্যক্তি ওই পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারে যে পরিমাণ সে নির্যাতিত হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে গালি দ্বারা গালির প্রতিশোধ গ্রহণ না করাই উত্তম। অন্যথায় উত্তম ও অধমের প্রভেদ থাকবে না। এতে বোঝা যায় যে, কোনো মন্দ কাজের জবাব ভালো দ্বারা দেয়াই উত্তম। ইসলামের সৌন্দর্য হলো এমন কথা, কাজ ও বিষয় পরিহার করা যা নিরর্থক।

অর্থাৎ যেসব কথা, কাজ ও বিষয়ে দুনিয়া ও আখেরাতের কোনো ফায়দা নেই তা পরিহার করা। গালি দেয়ার ফলে দুনিয়া ও আখেরাতের কোনো উপকার হয় না বরং ক্ষতিই সাধিত হয় তাই আমাদের উচিত গালির অভ্যাস পরিত্যাগ করার। কেননা হজরত রাসুলুল্লাহ [সা.] বলেছেন, কোনো মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকি।

বোখারি ও মুসলিম জিহ্বার সংযত ও পরিমিত ব্যবহার সমাজ, পরিবারে ও রাষ্ট্রে শান্তি আসে। জিহ্বার ব্যবহার প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহ [সা.] বলেছেন, যখন আদম সন্তান ভোরে ঘুম থেকে উঠে তখন তার অঙ্গসমূহ জিহ্বাকে বিনয়ের সঙ্গে বলে আমাদের সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা আমরা তোমার সঙ্গে জড়িত।

সুতরাং তুমি ঠিক থাকলে আমরাও ঠিক থাকব। আর তুমি বাঁকা হলে আমরা ও বাঁকা হয়ে পড়ব। কিন্তু জিহ্বা যেহেতু মনের মুখপাত্র তাই সব অঙ্গের কার্যকলাপ জিহ্বা দ্বারা প্রকাশ পায়। সে জন্য অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, মন্দ কথা, খারাপ উক্তি ও গালি থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। হজরত রাসুলুল্লাহ [সা.] বলেছেন, যে নীরব থেকেছে সে মুক্তি পেয়েছে। [তিরমিজি]

যারা প্রতিশোধ না নিয়ে ধৈর্য ধারণ করতে পারে, তারা সফলকাম। তাদের জন্য আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং আকাশ থেকে ফেরেশতা নাযিল হয়ে তাদের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রাঃ) বলেন, ‘একদা রাসূল (ছাঃ) তাঁর ছাহাবীদের নিয়ে বসে ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে আবুবকর (রাঃ)-কে গালি দিয়ে কষ্ট দিল, কিন্তু আবুবকর (রাঃ) কোন জবাব না দিয়ে চুপ থাকলেন।

তারপর লোকটা দ্বিতীয়বার আবুবকর (রাঃ)-কে কষ্ট দিল। কিন্তু তিনি কোন জবাব না দিয়ে চুপ থাকলেন। তৃতীয়বার লোকটা আবারও আবুবকর (রাঃ)-কে গালি দিয়ে কষ্ট দিল, কিন্তু তিনি এবার লোকটির প্রতিশোধ নিলেন (অর্থাৎ লোকটাকে পাল্টা জবাব দিলেন)। যখন আবুবকর (রাঃ) তার প্রতিশোধ নিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উঠে দাঁড়ালেন।

আবুবকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, (যখন তুমি চুপ ছিলে) আসমান থেকে একজন ফেরেশতা অবতরণ করে তোমার পক্ষ হয়ে জবাব দিচ্ছিলেন। কিন্তু যখন তুমি তার প্রতিশোধ নিলে, তখন এখানে শয়তান উপস্থিত হ’ল। আর যেখানে শয়তান উপস্থিত হয়, সেখানে আমি বসে থাকতে পারি না’।[আবূদাঊদ হা/৪৮৯৬; শু‘আবুল ঈমান হা/৬২৪২; ছহীহাহ হা/২৩৭৬।]

তারপর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন,‘হে আবুবকর! তিনটি বিষয় আছে, যেগুলোর প্রত্যেকটি সত্য। (১) যদি কোন ব্যক্তির উপর যুলুম করা হয়, আর সে যুলুমের প্রতিবাদ না করে চুপ থাকে, তাহ’লে মহান আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করবেন। (২) যদি কোন ব্যক্তি তার দানের দরজা খুলে দেওয়ার মাধ্যমে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার ইচ্ছা পোষণ করে, তাহ’লে আল্লাহ অবশ্যই তা বৃদ্ধি করে দিবেন। (৩) কোন ব্যক্তি ভিক্ষার দরজা খুলে দিলে এবং এর মাধ্যমে তার সম্পদ বৃদ্ধি করতে চাইলে আল্লাহ তার সম্পদ কমিয়ে দিবেন’। [মুসনাদে আহমাদ হা/৯৬২২; মিশকাত হা/৫১০২; ছহীহাহ হা/২২৩১।]

তাই আসুন, আজ থেকেই সতর্ক হই , খেয়াল রাখি আমার কথার দ্বারা যাতে অন্য কেউ কষ্ট না পেয়ে যায় , আর কাউকে যদি কষ্ট দিয়েই ফেলি তাহলে তার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নেই , তা না হলে পরকালে এর কঠিন হিসাব দিতে হবে ।
আল্লাহ আমাকে, আপনাকে ও সবাইকে আমল করার তওফিক দান করুক,আমিন।

লেখক: মাওলানা, সাংবাদিক

এ সম্পর্কিত খবর

জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ অন্ধকার: কাজী ফিরোজ

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে সমস্যার সমাধান হবে না: আব্দুস সালাম

কাশ্মীর উপত্যকায় উত্তেজনা, সেনা অভিযানে একজন নিহত

গাজীপুরে চিরকুট লিখে স্বামী-স্ত্র‌ীর আত্নহত্যা

কাচিয়ায় ৭নং ওয়ার্ড উপনির্বাচনে প্রার্থীর বিরুদ্ধে জ্বিন প্রতারনা মামলার অনুসন্ধানশ্লিপ পাঠিয়েছে সিআইডি

তীব্র গরমে ঢাকার বাতাসের কী খবর

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাঁচবে হাজারও কোটি টাকার সম্পদ

সরদার পাড়া দারুল কোরআন মডেল মাদ্রাসার পরিক্ষার ফল প্রকাশ

৭ দাবিতে কুবি’র তিন দপ্তরে শিক্ষক সমিতির তালা

ইসরায়েল থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবিতে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ