তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাঁচবে হাজারও কোটি টাকার সম্পদ

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ০৭:৩১:২৪

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাঁচবে হাজারও কোটি টাকার সম্পদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাঁচবে হাজারও কোটি টাকার সম্পদ
ভারত কিংবা চীনের আশায় না থেকে পদ্মা সেতুর মতো নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাসহ ছয়দফা দাবি জানিয়েছে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। এ দাবি আদায়ে রংপুর অঞ্চলে তিস্তা নদীর দুই তীরের ১১টি উপজেলায় একযোগে মানববন্ধন, সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে রংপুরের কাউনিয়া, পীরগাছা, গংগাচড়াসহ তিস্তা নদীবেষ্টিত ১১টি উপজেলায় ঘণ্টাব্যাপী চলে মানববন্ধন ও সমাবেশ। কর্মসূচিতে তিস্তাপাড়ের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শত শত মানুষ অংশ নেন। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিককর্মী, রাজনীতিকসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন।

এ সময় বক্তারা বলেন, গত বছরের ২ আগস্ট রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ওই দিন বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেছেন আমাদের তিস্তা মহাপরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন করবো। শুধু তাই নয়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে লালমনিরহাটের কালেক্টরেট মাঠের ভার্চুয়াল সভায় যুক্ত হয়েও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিষয়ে একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তিস্তাপাড়ের কোটি মানুষকে তিস্তা মহাপরিকল্পনার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আমরা চাই অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্বপ্নের তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও তিস্তার বুকে ব্যাপক খনন করা হোক।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, আমরা তিস্তা নিয়ে টানাটানি দেখতে চাই না। ভারত না চীন কে অর্থ দেবে তা নদীপাড়ের মানুষ বোঝে না। দুই কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ খেলার অধিকার রাখে না। সরকারপ্রধান নিজেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দেশে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে কিন্তু রংপুর অঞ্চল কোনো প্রকল্পই পাচ্ছে না, এই বৈষম্য দূর করতে হবে। যদি দেশের টাকায় পদ্মা সেতু করা যায় তাহলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশের অর্থায়ন কেন সম্ভব নয়? এত এত প্রকল্প চলছে কিন্তু তিস্তার জন্য কেন সরকার মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে না। অথচ তিস্তা মহাপরিকল্পনা দেশের জন্য সবচেয়ে লাভজনক। এই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হলে ভাঙন ও ফসলহানির হাত থেকে রক্ষা পাবে লাখো মানুষ এবং হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ।

তিনি আরও বলেন, নদীভাঙন ও বন্যায় প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে নিজ দেশেই হচ্ছে শরণার্থী। বিলীন হচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। তিস্তা তীরের মানুষের মুখে মুখে একটাই স্লোগান- তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও, কৃষকের জান বাঁচাও, তিস্তা খননের কাজ শুরু করো, মহাপরিকল্পনার কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করো। তিস্তা চুক্তির অপেক্ষায় মহাপরিকল্পনার কাজ ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও রংপুর বিভাগে কোনো মেগা প্রকল্প নেই। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বৈষম্য দূরীকরণ। কিন্তু রংপুরের মানুষ বরাবরই বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন।

এদিকে কাউনিয়ায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী, কেন্দ্রীয় সদস্য মোস্তাফিজার রহমান, আশিকুর রহমান, গনেশ শর্মা। পীরগাছা উপজেলায় ছিলেন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় নেতা বাবুল আকতার, রফিকুল ইসলাম, গংগাচড়া উপজেলায় ছিলেন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ছাদেকুল ইসলাম, মাহমুদ আলম, আশরাফুল ইসলাম, আশরাফুজ্জামান প্রমুখ।

লালমনিরহাট উপজেলায় ছিলেন সংগঠনের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য গেরিলা লিডার শফিকুল ইসলাম কানু, কেন্দ্রীয় নেতা চিত্ত রঞ্জন বর্মন; হাতীবান্ধা উপজেলায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা ওসমান গনি, অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান; কালীগঞ্জ উপজেলায় ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম, অধ্যক্ষ ড. মনওয়ারুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম হেলাল; আদিতমারীতে ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা দীলিপ কুমার ও অ্যাডভোকেট মঞ্জু।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় ছিলেন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য বখতিয়ার হোসেন শিশির, সাজু সরকার সরকার, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস ছালাম, মোশারফ হোসেন, জাহিদুল হক; উলিপুরে ছিলেন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য মশিয়ার রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা মোশাররফ মুন্সি, অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান, ডিমলা উপজেলায় ছিলেন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মোজাফ্ফর হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক নুর মহাম্মদ খান, সোহেল হোসেন, হাফিজার রহমান, গোলাম মোস্তফা, জলঢাকা উপজেলায় ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম পাশা এলিস ও মাইদুল ইসলাম এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা ও উপজেলা সভাপতি সাজু মুন্সি, হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ১১ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ সময় ছয়টি দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান সংগঠনটির নেতারা। তাদের দাবিগুলো হলো- ১. তিস্তা নদী সুরক্ষায় মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন। অভিন্ন নদী হিসেবে ভারতের সঙ্গে ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন, তিস্তা নদীতে সারা বছর পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে জলাধার নির্মাণ। ২. তিস্তার ভাঙন, বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ। ৩. ভাঙনের শিকার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন। ৪. তিস্তা নদী সুরক্ষায় বিজ্ঞানসম্মত খনন, মহাপরিকল্পনায় তিস্তা নদী ও তিস্তা তীরবর্তী কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় কৃষক সমবায় এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলা। ৫. তিস্তা নদীর শাখা-প্রশাখা ও উপ-শাখাগুলোর সঙ্গে নদীর আগেকার সংযোগ স্থাপন এবং দখল-দুষণমুক্ত করা। নৌ চলাচল পুনরায় চালু। ৬. মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তাপাড়ের মানুষদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।


প্রজন্মনিউজ২৪/এমএম

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ