প্রকাশিত: ৩০ অগাস্ট, ২০২৫ ০১:৫৮:০৯
আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম যেন এক ভয়াবহ শব্দে পরিণত হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সমালোচক কিংবা ভিন্নমতের মানুষকে বিভিন্ন সময়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল। তাঁদের কারও কারও লাশ পাওয়া গেলেও অনেকের এখনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৩০০ জন। তাঁদের অনেকেরই ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মনে করছে কমিশন।
এভাবেই অনেকের প্রিয় স্বজন এখন কেবলই নিখোঁজ সংখ্যা হয়ে গেছেন। এমন পরিবারগুলোর অপেক্ষার যেন শেষ নেই।
প্রায় ১২ বছর আগে ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর গুম হন লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম (হিরু) এবং দলের লাকসাম পৌরসভার সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির (পারভেজ)। হুমায়ুন কবিরের ছেলে শাহরিয়ার রাতুল গতকাল শুক্রবার, ‘বাবা নেই, এটা এখনো মাথায় নিতে চাই না।
এরপরও যদি আল্লাহ তাঁর হায়াত না রাখেন, তিনি বেঁচে না থাকেন, সেটা জানলে অন্তত মনটাকে বোঝাতে পারতাম। যে জায়গায় তাঁর দেহাবশেষ আছে, সেখানে গিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ে বাবার জন্য দোয়া-দরুদ পড়তে পারতাম।’
এমন একটা প্রেক্ষাপটে আজ ৩০ আগস্ট পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। গত বছরের ২৯ আগস্ট গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। এর দুদিন আগে, ২৭ আগস্ট বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন করে।
শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলগুলোর নেতা-কর্মী অথবা বিরোধী মতের মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করে গুম করার প্রবণতা শুরু হয় ২০১০ সাল থেকে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের আগে ব্যাপকভাবে গুমের ঘটনা ঘটতে থাকে। তবে শুরু থেকেই তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এই ঘটনাগুলো অস্বীকার করে আসছিল। উল্টো ভুক্তভোগীরা ‘পাওনাদারের ভয়ে পালিয়েছেন’ বা আত্মগোপনে আছেন, এমন অমর্যাদাকর বক্তব্য দেওয়া হয়েছিল।
বাবা নেই, এটা এখনো মাথায় নিতে চাই না। এরপরও যদি আল্লাহ তাঁর হায়াত না রাখেন, তিনি বেঁচে না থাকেন, সেটা জানলে অন্তত মনটাকে বোঝাতে পারতাম। যে জায়গায় তাঁর দেহাবশেষ আছে, সেখানে গিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ে বাবার জন্য দোয়া-দরুদ পড়তে পারতাম
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন বলছে, আওয়ামী লীগের আমলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সম্ভাব্য চার ধরনের পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল। প্রথম পরিণতি ছিল ভুক্তভোগীকে তুলে নিয়ে হত্যা এবং লাশ গুম করে দেওয়া। অন্যদের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো, সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে গ্রেপ্তার করানো এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অল্পসংখ্যক মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হতো।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গোপন বন্দিশালাগুলো থেকে অনেকেই মুক্তি পেয়েছেন। এ জন্য এখনো যাঁরা ফেরেননি, তাঁরা আর বন্দী নেই, এটা নিশ্চিত। তাঁদের বড় অংশই হত্যার শিকার হয়েছেন।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়। গতকাল তাঁর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর (লুনা) প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো তাঁর (ইলিয়াস আলী) বিষয়ে কিছুই জানতে পারিনি। তদন্ত কমিশন অনুসন্ধান করছে। তারা জানিয়েছে, একটি বিশেষ বাহিনী এর সঙ্গে জড়িত ছিল। এ জন্য কমিশনেরও কাজ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। প্রকৃত ঘটনা জানতে চাই।’
নিখোঁজ ব্যক্তিদের ফেরাতে চার ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। এক. পুলিশকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা দিয়ে তাদের খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে। দুই. কমিশন সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজতে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে। তিন. ভারতের কারাগারে বাংলাদেশি বন্দীদের তালিকার সঙ্গে নিখোঁজ তালিকা মেলানো হচ্ছে। চার. সীমান্ত দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে যাদের ‘পুশ ইন’ করা হচ্ছে, সেখানে নিখোঁজ কেউ আছে কি না তা দেখা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) আমলে গুমের যেসব ঘটনায় মামলা বা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সেগুলো নিয়ে এখন কাজ শুরু করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় অনেকে গুম হয়েছেন। সেই ঘটনায় তখন কোনো মামলা হয়নি। এখন সেই ঘটনায় অপহরণের মামলা হচ্ছে। গুম কমিশন এ রকমের ১৬০টি ঘটনা পাঠিয়েছে। সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়েছে।’
ভারতের কারাগারে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সম্পর্কে কমিশন সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত এমন ৯৯৬ জনের একটি তালিকা তাঁরা পেয়েছেন। সেখানে নিখোঁজ ব্যক্তিদের কারও নাম নেই। এখন দ্বিতীয় তালিকার অপেক্ষায় আছে তদন্ত কমিশন।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের বেশির ভাগেরই ১০, ১২, ১৪ বছর ধরে কোনো খোঁজ নেই। আইন অনুযায়ী, ৭ বছর কেউ নিখোঁজ থাকলে ধরে নেওয়া যায় সে আর বেঁচে নেই। তবে এটা সত্য যে নিখোঁজ বেশির ভাগ ব্যক্তির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। তবু খুঁজে পাওয়ার সব ধরনের চেষ্টা করছে কমিশন।
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, গুমের ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৮৫০ অভিযোগ পেয়েছে তারা। এর মধ্যে একাধিক মাধ্যমে অভিযোগ করায় কিছু অভিযোগ দুবার এসেছে। এমন অভিযোগগুলো বাদ দিলে ১ হাজার ৭০০টির বেশি অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার তদন্ত করতে গিয়ে নতুন অনেক ঘটনাও সামনে আসছে, যেগুলোতে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগগুলো নিয়ে তদন্ত শেষ করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে চায় কমিশন। ইতিমধ্যে সরকারকে কমিশন দুটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দিয়েছে।
ভুক্তভোগীরা এখনো একধরনের ভয়ের মধ্যে আছেন বলে জানিয়েছেন কমিশনের একাধিক সদস্য। তাঁরা বলছেন, প্রিয়জনকে না পেয়ে নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের অনেকেই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না। এর মধ্যে আবার গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ভুক্তভোগীদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। কমিশনের কাছে এমন হুমকি দেওয়ার রেকর্ডও এসেছে।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের তদন্তে অগ্রগতির বিষয়ে তদন্ত কমিশনের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের বেশির ভাগেরই ১০, ১২, ১৪ বছর ধরে কোনো খোঁজ নেই।
আইন অনুযায়ী, ৭ বছর কেউ নিখোঁজ থাকলে ধরে নেওয়া যায় সে আর বেঁচে নেই। তবে এটা সত্য যে নিখোঁজ বেশির ভাগ ব্যক্তির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। তবু খুঁজে পাওয়ার সব ধরনের চেষ্টা করছে কমিশন।
প্রজন্মনিউজ/২৪
‘বিএনপির উপর নিরর্ভর করছে এনসিপির সংসদে যাওয়া’
বড় দলের ‘দয়া’ নিয়ে মাঠে নামা প্রার্থীদের সতর্ক করে যা বললেন পিনাকী ভট্টাচার্য
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের সুযোগ নেই: মির্জা ফখরুল
মাইশা মৃত্যুর বছর পেরোলেও দৃশ্যমান হয়নি সড়কের নিরাপত্তা কার্যক্রম
বিএনপির এখন ‘না’ বলার কোনো অপশন নাই: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
মেলিসার তাণ্ডবে ধ্বংসস্তূপ ক্যারিবীয় অঞ্চল, নিহত অন্তত ২৫
১৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
চকলেট খেতে বাধা দেয়ায় ক্ষেপলেন সাবেকমন্ত্রী কামরুল