এক বার ঢুকলে জীবিত ফেরে না কেউ মৃত্যু উপত্যকাই

প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:২৬:৩৮

এক বার ঢুকলে জীবিত ফেরে না কেউ মৃত্যু উপত্যকাই

প্রজন্মডেক্স: বরফে মোড়া আগ্নেয়গিরির উপত্যকা। আর সেই উপত্যকারই পরতে পরতে রহস্য। রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপ সে রকমই এক রহস্যের আধার। সেখানে রহস্য এবং জীববৈচিত্র একে অপরকে পাল্লা দেয়
কামচাটকা উপদ্বীপের জনস‌ংখ্যা সাড়ে ৩ লাখেরও কম। এখানে বেশির ভাগ আগ্নেয়গিরিই অতি সক্রিয়।
বরফে ঢাকা আগ্নেয়গিরির এই উপত্যকাকে ইউনেস্কো ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-এর তকমা দিয়েছে। অনুমতি সাপেক্ষে এর বহু অংশেই যাওয়া যায়। উৎসাহী, গবেষক এবং পর্যটকেরা যানও এই উপদ্বীপে।
হিমশীতল কামচাটকা উপদ্বীপের এক প্রান্তে থাকা একটি ছোট উপত্যকায় হাজারো রহস্য ছড়িয়ে। উপদ্বীপের ওই নির্দিষ্ট উপত্যকায় এক বার কোনও জীবজন্তু প্রবেশ করলে, তার বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা নাকি খুবই ক্ষীণ। আর সেই কারণেই উপত্যকাটির নাম ‘ভ্যালি অফ ডেথ’ বা ‘মৃত্যু উপত্যকা’।

কিন্তু কেন এমন নাম? এর নেপথ্যে কোন রহস্য লুকিয়ে? গ্রীষ্মে যখন বরফ গলতে শুরু করে, তখন ওই উপত্যকায় খরগোশ, পাখি-সহ বিভিন্ন জীবজন্তু ঢোকে খাবারের আশায়। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই সেখানে মারা যায়।

নেকড়ের মতো শিকারি পশু, শিয়াল, ইগল থেকে শুরু করে ভল্লুকের মতো বড় প্রাণীও ১.২ মাইল লম্বা সেই মৃত্যুফাঁদে পা দিয়েছে।

তীব্র ঠান্ডায় মৃত প্রাণীগুলির নিথর দেহ অবিকৃত অবস্থাতেই পড়ে থাকে। কোনও অসুখ বা বাইরে থেকে কোনও আঘাতের চিহ্নও দেখা যায় না। তা হলে? কী ভাবে মৃত্যু হয় প্রাণীগুলির?

১৯৭৫ সালে কামচাটকা উপদ্বীপের ওই উপত্যকার অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিলেন রাশিয়ার ইনস্টিটিউট অব ভলক্যানোলজি অ্যান্ড সিসমোলজি-র আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ ভ্লাদিমির লিয়োনোভ। সে বছরই তিনি জানিয়েছিলেন, প্রাণীগুলির রহস্যমৃত্যুর কারণ আগ্নেয়গিরি।

জনশ্রুতি রয়েছে, এই উপত্যকা থেকে জীবজন্তুর যেমন মৃত্যু হয়, তেমনি নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেই দেহ নিয়মিত সরিয়েও নেওয়া হয়। তবে সে কাজ কে করে, সেই রহস্য আজও অন্ধকারে।

সাতের দশকের মাঝে লিয়োনোভের ছাত্র এবং গবেষণায় সহকারী ভিক্টর দেরিয়াজিন দাবি করেছিলেন, সোভিয়েত সেনাবাহিনী সেই উপত্যকার অস্তিত্ব জানতে পেরেই সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। হেলিকপ্টার পাঠিয়ে উপত্যকা থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছিল সেনা।

সোভিয়েত আমলে সেই মৃত্যু উপত্যকা আবিষ্কার হওয়ার পরেই নাকি খবর দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনকে। ভূবিজ্ঞানীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে তড়িঘড়ি সেখানে পাঠানো হয়েছিল হেলিকপ্টার। ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল মৃত প্রাণীদের। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে লোকমুখে প্রচলিত, সেই পরীক্ষার অনেক তথ্যই লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, উপত্যকার ‘ভ্যালি অফ ডেথ’ অংশে সাধারণের প্রবেশ কার্যত নিষিদ্ধ। গেজারনায়া নদীর কাছে এই অংশে আছে বিপজ্জনক তুষারখাঁড়ি। সব জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে হিমশীতল প্রাণীর দেহ।

এই উপত্যকায় পা রাখলেই নাকি মাথা ঝিমঝিম করে। ঘুম পায়। এমনকি, মাথাব্যথাও করে। এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে বহু বিজ্ঞানী এবং গবেষকেরই। কিন্তু এখনও অবধি কোনও মানুষের মৃত্যু সেখানে হয়নি।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, সালফার ডাই অক্সাইড, হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের মতো গ্যাসের কারণেই জীবজন্তুরা সেখানে মারা যায়। যে পরিমাণ গ্যাস সেই উপদ্বীপে আছে, তার থেকে বেশি থাকলে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।

মৃত্যুর কারণ হিসাবে কার্বন ডাই অক্সাইডের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। মৃত্যু উপত্যকার বাতাসে এই মারণ গ্যাসের উপস্থিতি এতটাই বেশি যে, জীবজন্তুরা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে নিজেদের অজান্তেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ফলে তাদের দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় না।

রাশিয়ার মৃত্যু উপত্যকা আবিষ্কার হওয়ার পরে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জল্পনাকল্পনা। লিয়োনোভ যখন এই উপত্যকা আবিষ্কার করেছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন এখানে যারা আসে, তারা সকলেই আতঙ্কিত হয়ে থাকে।

পাশাপাশি, তিনি এ-ও চেয়েছিলেন উপত্যকা ঘিরে রহস্য দ্রুত দূর হয়ে প্রকাশিত হোক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। তাঁর আশা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। প্রত্যন্ত এবং ভয়ঙ্কর এই উপত্যকা ঘিরে বিজ্ঞানীদের গবেষণা চলছে।


প্রজন্মনিউজ/২৪

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ