মালায়েশিয়ার আবাসিক হলের শিক্ষার পরিবেশ ও বাংলাদেশের শিক্ষা অঙ্গন।

প্রকাশিত: ১৮ জুলাই, ২০২৪ ১২:২৩:২৩

মালায়েশিয়ার আবাসিক হলের শিক্ষার পরিবেশ ও বাংলাদেশের শিক্ষা অঙ্গন।

নিজস্ব প্রতিনিধি:দক্ষিণ এশিয়ার ইউরোপ হিসেবে পরিচিত আজকের আধুনিক মালায়েশিয়া।  বাংলাদেশের সমসাময়িক সময়ে ব্রিটিশ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করলেও তারা আজ উন্নত বিশ্বের দাবিদার। আমাদের দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী সেখানে অধ্যায়ন করছেন ও লক্ষ লক্ষ কর্মী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। আমি

মালায়েশিয়াতে বিগত ছয় বছর পড়ালেখার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলে থাকার ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর আবাসিক হল সমূহের যে সকল বৈশিষ্ট্য এখন সময়ের দাবি বলে মনে করি। তা নিম্নরূপ -

এক) মালায়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে কোন রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের প্রকাশ্য কার্যক্রম ও কমিটি ছিল না, তবে ঐ রাজনৈতিক দলের আদর্শের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ক্লাব এর কার্যক্রম ছিলো। এমনিভাবে বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোতে ছাত্র রাজনীতি মুক্ত রাখতে হবে তবে সামাজিক সংগঠন বা ক্লাবের শিক্ষামূলক কার্যক্রম চালু রাখা যেতে পারে।  

দুই) রাজনৈতিক বা সরকারের এমপি মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে কোন মিছিল বা মিটিং করার অনুমতি ছিল না তবে সামাজিক সংগঠন ও ক্লাব বিভিন্ন গঠন মূলক সেমিনার ও ওপেন ডিসকাশন সেশন চালু রাখতেন,  সেখানে বিদেশী হিসেবে আমাদেরও অংশগ্রহণ করার সুযোগ ছিল। বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে আমাদের করণীয় হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোতে এমন শিক্ষামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।  

তিন) মালায়েশিয়ার হলের (মহল্লা) সিট বন্টন সম্পূর্ণভাবে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতো এবং হলের শিক্ষকরা সেটিকে সততা ও নিষ্ঠার সাথে বাস্তবায়ন করতেন, উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, করোনার সময়ে যখন লকডাউন চলছিল, তখন আমি আইআইইউএম এর মহাল্লা (হল) সিদ্দিকে থাকতাম, আমার অসুস্থতার কারনে হসপিটালে যাওয়ার প্রয়োজন হলে,  আমার হলের প্রধান শিক্ষক মালয়েশিয়ান প্রফেসর আবু বক্কর বিন রশিদকে জানিয়েছিলাম, তখন তিনি নিজে আমাকে তার গাড়িতে করে হাসপাতাল নিয়ে গিয়েছিলেন এবং ট্রিটমেন্ট করে ও করোনার টিকা দিয়ে আমাকে হলে পৌঁছে দিয়েছিলেন যা ছিলো ঐ সময়ে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব। ভিনদেশী একটি ছাত্রের জন্য তার উদারতা এখনো আমাকে মুগ্ধ করে, মন থেকে তার জন্য আজও দোয়া করতে ইচ্ছে করে। স্বাধীন বাংলাদেশের সকল হলের সকল প্রশাসনিক দায়িত্ব শিক্ষকদের নেতৃত্বে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে। 

চার) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ভিত্তিতে আবাসিক হল নির্মাণ করা হয়,  সে ক্ষেত্রে আবাসিক সংকট থাকেনা ও দলবাজির দরকার হয় না। আগামীর বাংলাদেশের প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যার ভিত্তিতে হলের সিট বৃদ্ধি করতে হবে এবং নতুন নতুন হল নির্মাণ করতে হবে, যেনো সবাই ক্যাম্পাসে থাকতে পারে, বাইরের থাকার প্রয়োজন না হয়।

পাঁচ)  মালেশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি কর্মকর্তাদের পাওয়ার ছিল ৫০ রিঙ্গিত পর্যন্ত জরিমানা করা, সে ক্ষেত্রে তারা অন্যায় দেখলেই জরিমানা করতেন এবং পুলিশ কল করতেন।  বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের 
হলগুলোর সিকিউরিটি কর্মকর্তাদের ক্ষমতা প্রদান করতে হবে, যেন তারা কোনো অন্যায়, মাদক, অস্ত্র, ও বহিরাগত দেখামাত্রই গ্রেফতার করতে পারেন ও জরিমানা করতে পারে।

মোদ্দা কথা হলো, আগামীর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে আদর্শবান, সৎ, দেশ প্রেমিক ও দক্ষ নাগরিক তৈরীর সূতিকাগার, যারা সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচয় তুলে ধরবে, বিশ্ব নেতৃত্বে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করবে, ইনশাল্লাহ। মহান আল্লাহ আমাদের এই দেশটাকে সকল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কালো থাবা থেকে মুক্ত করুন ও বিশ্বের মাঝে লাল সবুজের পতাকা সমুন্নত রাখুন, আমিন।  


প্রজন্মনিউজ২৪/আরাফাত
  
 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ