দেশের দ্বিতীয় শহীদমিনারে প্রভাভাতফেরী ও ব্লাডগ্রুপ ক্যাম্পিং এবং স্বেচ্ছায়রক্তদান কর্মসূচি

প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১১:৪২:৫৭

দেশের দ্বিতীয় শহীদমিনারে প্রভাভাতফেরী ও ব্লাডগ্রুপ ক্যাম্পিং এবং স্বেচ্ছায়রক্তদান কর্মসূচি

পটুয়াখালী: পটুয়াখালী ব্লাড ফাউন্ডেশন পিবিএফ এর প্রভাভাতফেরী ২১শে ফেব্রুয়ারী সকাল ৮ টার সময় পটুয়াখালী ব্লাড ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জেল খান এর মাধ্যমে পটুয়াখালী ছোট্ট চৌরাস্তা থেকে রেলী শুরু হয়ে পটুয়াখালী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এসে ফুল অর্পন করেন এবং পাশেই ফ্রি ব্লাড গ্রুপ ক্যাম্পিং ও স্বচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ও ভাষা শহীদদের স্মরণে ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি এর আয়োজন করা হয়। পটুয়াখালী ব্লাড ফাউন্ডেশন প্রভাতফেরী শেষ করে এবং মানবিক ৯০, পটুয়াখালী। মেডিসিন ক্লাব পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ইউনিট এ আয়োজন করেন।

এক বছর আগেও পটুয়াখালী পৌরসভার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ভাষা শহিদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো জেলার সর্বস্তরের মানুষকে। অমর একুশের প্রথম প্রহরে ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কির মতো ঘটনা ঘটতো। আর অপ্রশস্ত সড়কের কারণে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় যানজটে দুর্ভোগে পড়তে হতো স্থানীয়দের। তবে সম্প্রতি সময়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে পটুয়াখালীতে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দৃষ্টিনন্দন শহিদ মিনার নির্মাণ করেছে পটুয়াখালী পৌরসভা কতৃপক্ষ। এতে সকল প্রকার ভোগান্তি দূর হবে বলে আশা স্থানীয়দের। নব নির্মিত শহিদ মিনারের বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে বলে খুশী স্থানীয়রা।

উপস্থিত ছিলেন পিবিএফ এর সহ সভাপতি জনাব মোঃ জুবায়ের হোসেন সাংগঠনি সম্পাদক শফিকুল ইসলাম অর্থ সম্পাদক আরিফুর রহমান ত্রান ও দুর্যোগ সমাপাদক ইব্রাহিম শরিফ'সহ বিভিন্ন পিবিএফ এর কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলগন আরও উপস্থিত ছিলেন সদস্যগণ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ও ভাষা শহীদদের স্মরণে ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি সকাল ৯ টা থেকে ১২.৩০ প্রর্যন্ত ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং ৮৫ টা বিকাল ৪ টা থেকে রাত্র ৮ প্রর্যন্ত ১১৫ টি ব্লাড গ্রুপিং চেক করা হয়েছে। সচেতনতা নিলপলেট পিবিএফ এর সদস্য ফরম বিতরণ করা হ'য়েছে।

সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম আকন জানান, মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। এই সংগঠন এর প্রতিষ্ঠাতা, প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এবং যারা এ প্রর্যন্ত বিভিন্ন দায়িত্বের সাথে জড়িত ছিলেন এবং কাজ করেছেন। সকলের জন্য দোয়া আছে থাকবে। পটুয়াখালী ব্লাড ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে পটুয়াখালী জেলার সর্বস্তরের মানুষ এবং রক্তদানের মতো মহৎ কাজের সাথে জড়িত সকলকে শুভেচ্ছা জানাই। আশা করি সকলে এই সংগঠন এর সাথে থেকে সমাজের অগ্রগতির পক্ষে কাজ করবেন এবং সাহায্য করবেন। "পটুয়াখালী ব্লাড ফাউন্ডেশন-পিবিএফ" এর সার্বিক উন্নতি, অগ্রগতি এবং সাফল্য কামনা করছি।

সহ সভাপতি জুবায়ের হোসেন বলেন, “পটুয়াখালী ব্লাড ফাউন্ডেশন-”পিবিএফ" থেকে প্রভাতফেরী ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এ সকল ভাষা শহীদের প্রতি Patuakhali Blood Foundation-PBF টিমের পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি ও রেলী হয়েছে সকাল ৮ টায়। যাঁরা অংশগ্রহণ করেছেন সকলকে ধন্যবাদ।

তিনি আরও বলেন, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে বাংলাদেশের তরুণদের আত্মদান ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। পৃথিবীর বুকে বাংলাই একমাত্র ভাষা যার জন্যে অসংখ্য মানুষের রক্ত ঝরেছে। তাই এ ঐতিহাসিক দিনটি স্বাধীন বাংলাদেশের গৌরবের বিষয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট অবিভক্ত ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তানের ছিল দুটি অংশ। একটি পশ্চিম পাকিস্তান অপরটি পূর্ব পাকিস্তান। এ পূর্ব পাকিস্তানই বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশ। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা আমাদের ওপর উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।

১৯৪৮ সালের ২১শে মার্চ পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এক জনসভায় ঘোষণা করেন যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। একথা শুনে বাংলার দামাল ছেলেরা সাথে সাথেই এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। আবার ১৯৫২ সালের ৩০শে জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নাজিমউদ্দীনও এক জনসভায় দাম্ভিকতার সঙ্গে একই ঘোষণা দেন। প্রতিবাদে ছাত্ররা ধর্মঘট পালন করে। তারা ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। পুলিশ নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর বন্দুক, বেয়নেট, টিয়ারগ্যাস আর লাঠিসোটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। এতে সালাম, বরকত, জব্বার, রফিকসহ নাম না জানা অনেকে শহিদ হলেন। বিনিময়ে রক্ষা পেল মাতৃভাষা ।

" মানুষ মানুষের জন্য,
রক্ত জীবনের জন্য "

সাধারণ সম্পাদক বলেন তোফাজ্জেল খান বলেন , আমরা পটুয়াখালী ব্লাড ফাউন্ডেশন থেকে ৪০ টি আইডি কার্ড করেছি প্রথম ধাপে এবং ২য় ধাবে ১০টি সহ মোট ৫০ টি আইডি কার্ড করেছি , ৬৯৫ টি ব্লাড দান করেছি ব্লাড ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে এবং ১৮ অক্টোবর ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আজ অব্দি ৭ টি সেমিনার, ২৮ টি মাসিক মিটিং, এবং ইফতার মাহফিল, বৃক্ষ রোপণসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে একটি স্মরণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এটি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের রক্তে রাঙা একটি ঐতিহাসিক দিন। মাতৃভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্যে যাঁরা শহিদ হয়েছেন তাদের রক্তে রাঙা এ দিন।
আমরা সেই বীর ভাষাশহিদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা সকল শহিদদেরকে সারাজীবন কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করব। একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটির তাৎপর্য স্বদেশের প্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে, বিশ্বসভায় পরিচিতি লাভ করেছে এবং এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পটুয়াখালীতে যথাযোগ্য মর্যাদা ও শ্রদ্ধাভরে ভাষা শহীদদের স্মরন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে।

গত মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় শহরের ঝাউতলা সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে নব-নির্মিত শহীদ মিনারের পাদদেশে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় একুশের অনুষ্ঠানমালা। নাচ, গান, আবৃত্তি ও অভিনয়ের মাধ্যমে শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরন করেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা। পরে একুশের প্রথম প্রহরে শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে ভীড় করেন বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ।

১২টা ১ মিনিটে শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পার্ঘ অর্পন করে রাষ্ট্রের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পটুয়াখালী -১ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পর্টির কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুম আমিন হাওলাদার ও জেলা প্রশাসক মোঃ নূর কুতুবুল আলম পরে জেলা পুলিশের পক্ষে পুলিশ সুপার মো: সাইদুল ইসলাম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ হাফিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ভিপি আব্দুল মান্নান, মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী সাবেক সাংসদ কাজী কানিজ সুলতানা হেলেন, পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ সহ সকল সরকারি বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারি, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এদিকে কুয়াকাটা পৌরসভাস্থ শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মুহিব্বুর রহমান। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে দিনব্যাপী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নানা আয়োজন রয়েছে জেলা প্রশাসনের আযোজনে বিকেলে উদ্বোধন হবে বই মেলা।


প্রজন্মনিউজ২৪/এইচআরসি

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ