এবার মিশিগানে ট্রেন দুর্ঘটনা, দুই চালক নিহত

প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ০৬:১৩:২৭

এবার মিশিগানে ট্রেন দুর্ঘটনা, দুই চালক নিহত

যুক্তরাষ্ট্রে আবারও ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওহাইও’র পর এবার মিশিগানের ডেট্রয়েটে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ওহাইও রাজ্যের ইস্ট প্যালেস্টাইনে একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। ওই ঘটনার মাত্র ১৩ দিনের মাথায় মিশিগানের ডেট্রয়েটে লাইনচ্যুত হলো একটি মালগাড়ি। ট্রেন। এতে দুই চালক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুইজন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি এক্সপ্রেস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে মিশিগানের ডেট্রয়েট সাবার্বান এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। মূলত ডেট্রয়েটের ভ্যান বুরেন টাউনশিপের মার্টিন্সভিল ও হাগেটি রোডের মধ্যে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। মালগাড়ির ৬টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে গেছে।

ওই মালগাড়িতে বিভিন্ন ধরনের ‘ক্ষতিকর পদার্থ’ বহন করা হচ্ছিল। তবে কী পদার্থ ছিল তা বলা হয়নি। প্রতিবেদন মতে, মালগাড়ির বগি উল্টে যাওয়ায় ‘ক্ষতিকর পদার্থ’ ছড়িয়ে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তবে স্থানীয় পরিবেশ বিষয়ক কর্মকর্তারা বলেছেন, মালগাড়ি উল্টে গেলেও ভেতরে থাকা ‘ক্ষতিকর পদার্থ’ বাইরে পড়েনি। ফলে দূষণের মতো কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি। কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, এ নিয়ে সাধারণের জীবনে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই।

স্থানীয় রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৬টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় দুই চালক প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুইজন। তবে বগিগুলোতে ‘ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ’ মজুদ থাকলেও তা ছড়িয়ে পড়েনি।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার জেরে ওই লাইনে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে স্থানীয় পুলিশ। দুর্ঘটনা স্থলের দিকের রাস্তা এড়িয়ে যেতে পরামর্শ দেয়া হয়। এর পর উদ্ধারকাজ শুরু হয়। লাইনচ্যুত বগিগুলোকে সরিয়ে নেয়া হয়। এরপর বাকি বগিগুলোও সেখান থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়।

দুর্ঘটনার পর লাইনচ্যুত মালগাড়ির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যা ইতোমধ্যেই কয়েক লক্ষ বার দেখা হয়েছে। এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি ১৫০টি বগি নিয়ে ইলিনয় থেকে পেনসিলভানিয়ার দিকে যাওয়ার পথে ওহাইও’র ইস্ট প্যালেস্টাইন শহরের কাছে লাইনচ্যুত হয় একটি মালবাহী ট্রেন। এতে বিশাল বিস্ফোরণের সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট সেইফটি বোর্ডের (এনটিএসবি) তথ্য অনুযায়ী, ট্রেনটির ৫০টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর মধ্যে অন্তত ২০টি বগিতে বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ ছিল। অন্তত পাঁচটিতে ছিল উচ্চ চাপে রাখা ভিনাইল ক্লোরাইড। এটি একটি রংহীন বিপজ্জনক গ্যাস, যা পিভিসি প্লাস্টিক ও ভিনাইলের পণ্য তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

ভিনাইল ক্লোরাইড কার্সিনোজেন হিসেবেও পরিচিত। এটি দাহ্য ও ক্যান্সার সৃষ্টিকারী গ্যাস। এই রাসায়নিকের তীব্র উপস্থিতির কারণে মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, তন্দ্রাভাব হতে পারে। এছাড়া লিভারের ক্ষতি ও লিভার ক্যান্সারের কারণও হতে পারে এই গ্যাস।

কর্মকর্তারা জানান, লাইনচ্যুত বগিগুলোর পাঁচটি থেকে বিষাক্ত ধোঁয়া বের হচ্ছিল যা কয়েক মাইল দুর থেকে দেখা গেছে। এছাড়া প্রাণঘাতী শ্রাপনেল মাইলখানেক দূরে উড়ে গিয়ে পড়ছিল। এ ঘটনাকে অনেকেই ‘পরমাণু বিস্ফোরণ’ ও ‘আরেকটি চেরনোবিল’ ঘটনা বলেও অভিহিত করেছেন।

তাৎক্ষণিকভাবে আশপাশের কয়েকশত বাড়ির প্রায় দুই হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেয়া হয়। দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশের এক মাইলের মধ্যে বসবাসরত সবাইকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। দুর্ঘটনার কয়েকদিন পর ওই পাঁচটি বগি থেকে ভিনাইল ক্লোরাইড বের করে নিকটবর্তী একটি গর্তে নিয়ে জমা করা হয় ও তা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়।

তবে পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এতে করে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও ইস্ট প্যালেস্টাইনের কর্মকর্তারা বলছেন, ওই এলাকায় এখন আর বিপজ্জনক কিছু নেই। কিন্তু স্থানীয়রা তাদের এ কথায় আশ্বস্ত হতে পারছেন না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী বিশেষ করে টুইটার ও টিকটক ব্যবহারকারীরা ভিনাইল ক্লোরাইড পোড়ানোর ছবি, ক্ষতির শিকার প্রাণীদের ছবি পোস্ট করে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আরও স্পষ্ট জবাব চাইছেন। এ দুর্ঘটনায় ক্ষতিকর রাসায়নিক ছড়িয়ে কয়েক দিনে খাল-বিল ও ছড়াগুলোতে হাজার হাজার মাছ মারা গেছে।

বাসিন্দাদের বরাতে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, খামারের মুরগিও হঠাৎ করে মারা গেছে, শিয়ালগুলো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ও পোষা প্রাণীগুলোও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এছাড়া মাথাব্যথা, চোখ জ্বালাপোড়া, গলা ব্যথার অভিযোগও করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে কেউই তাদের এসব প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে না। 


প্রজন্মনিউজ২৪/একে

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ