সরকারের কথা অনুযায়ী চললে, সেটা বিশ্ববিদ্যালয় থাকেনা: অনু মুহাম্মদ

প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারী, ২০২৩ ০৫:৫৭:২৩

সরকারের কথা অনুযায়ী চললে, সেটা বিশ্ববিদ্যালয় থাকেনা: অনু মুহাম্মদ

রাবি প্রতিনিধিঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ অনু মুহাম্মদ বলেছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মানে হলো সার্বজনীন বিশ্ববিদ্যালয়। সরকার যা বলবে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি তা অনুসরণ করে, তাহলে কখনো সেটা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না। এরকম হলে, সেখানে কোন সৃজনশীলতা থাকে না, সেখানে কোন নতুন জ্ঞানের যোগ হয় না। নতুন জ্ঞান যোগ হতে হলে, সেখানে প্রশ্ন থাকতে হবে, পর্যালোচনা থাকতে হবে এবং সেখানে প্রত্যাখ্যানও থাকতে হবে। সেই প্রত্যাখ্যানের শক্তি যদি একটা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে না থাকে, তাহলে তা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় না।

মঙ্গলবার (৩১জানুয়ারি) সকাল ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলায় রাকসু আন্দোলন মঞ্চ আয়োজিত ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং রাকসু ও সিনেট কার্যকর করাসহ ১৪ দফা দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে সবার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. শামসুজ্জোহার মতো শিক্ষক ছিলেন। যিনি স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার উত্তরসূরি যারা শিক্ষক, তারা কেন অবনত, আত্মসমর্পণকারী, আপোষকারী, সুবিধাবাদী হবে? প্রশ্নটা তো সকলের মধ্যে আসার কথা।

তিনি বলেন, অনেক শিক্ষক বলে আমরা সরকারের টাকা খায়, সরকারের বিরুদ্ধে কিভাবে কথা বলবো। এ কথার ভয়ংকর রকমের আত্মসম্মানহীন অর্থ রয়েছে। সরকারের টাকা বলে কোন টাকা নাই, এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। কারণ আমরা সরকারের টাকা খায় না। আমরা খায় জনমানুষের টাকা। কারণ সেটা হলো পাবলিক মানি। সরকারও সে সর্বজনের টাকা দিয়ে পরিচালিত হয়।

এই অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, বর্তমান সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগটা খুব গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছে। এবং এমনসব উপাচার্য নিয়োগ দিচ্ছে যার প্রধান যোগ্যতা সরকারের আনুগত্য। তাদের মাথায় আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদেরকে সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের হলগুলোতে যাতে আনুগত্য থাকে, যাতে মত প্রকাশের অধিকার না থাকে, যাতে সেখানে একটা ভয়ের রাজত্ব তৈরি হয়, নির্যাতনের অবস্থা তৈরি হয়, সেটা যারা নিশ্চিত করবে তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হবে। আর সেটাই হবে উপাচার্যের কাজ।

সম্মানিত আলোচকের বক্তব্যে রাবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, যদি ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ না থাকে, তবে ক্ষমতা মানুষকে দানবে পরিণত করে। এটি মানুষের অন্তর্গত ব্যাপার। ক্ষমতা মূলত চর্চা করার ব্যপার নয় বরং এর সাথে স্বচ্ছতা ও দায়িত্ব ব্যাপারটি জড়িত, যা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের ছাত্র হিসেবে, নাগরিক হিসেবে এবং মানুষ হিসেবে যে দায়িত্ব সে দায়িত্বের জায়গাটা আমাদের ছেড়ে দিলে চলবে না। প্রকৃত অর্থে আমরা সে জায়গাটা ছেড়ে দিয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা একরকম ছেড়ে দিতে বাধ্যও হয়েছি।

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তরের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমানুল্লাহ খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে সম্মানিত আলোচক হিসেবে আরো বক্তব্য প্রদান করেন রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আর রাজী।

এসময় আরো বক্তব্য প্রদান করেন, রাবির ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসুদ, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সাবেক নির্বাচন কমিশনার মীর শাহজাহান, নাগরিক ছাত্র ঐক্য রাবি শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান মুন্না, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ রাবি শাখার সভাপতি নাইমুল ইসলাম নাইম, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার কেন্দ্রীয় পরিষদের যুগ্ন- সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম।

সমাবেশে ঘোষিত রাকসু আন্দোলন মঞ্চের ১৪ দফা দাবিগুলো হলো, রাকসু ও সিনেট কার্যকর করা, মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দের ব্যবস্থা করা, হলে রাজনৈতিক ব্লকের নামে দখলদারিত্ব নিষিদ্ধ করা, হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিনের খাবারের পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সপ্তাহে সাত দিন সার্বক্ষণিক খোলা রাখা, যাতায়াতের জন্য রুট বৃদ্ধি সহ পর্যাপ্তসংখ্যক বাস সংযুক্ত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের অবস্থান, চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা।

এছাড়া, গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা, পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি নির্মাণ করা, নামে-বেনামে আদায়কৃত অযৌক্তিক ফি বাতিল করা, জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, সান্ধ্য আইন ও সান্ধ্য কোর্স বন্ধ করা, পরীক্ষার উত্তরপত্রে রোল নম্বরের পরিবর্তে মাধ্যমিক পরীক্ষার মতো কোড সিস্টেম চালু করা এবং পোষ্য কোটা বাতিল করার দাবি জানায় সংগঠনটি।


প্রজন্মনিউজ২৪/এ কে

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ