প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর, ২০২২ ১০:৩৩:২৮
সামিউল, রাবি প্রতিনিধিঃ পৃথিবীর গতিশীলতা টিকিয়ে রাখতে প্রকৃতির নিয়মে জন্ম হয় একেকটি শিশুর। তাদের আগমনের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় আগামীর সফল নেতৃত্বের, সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। আর সম্ভাবনাময় সেই শিশুকে জাতির জন্য প্রস্তুত করতে পরিবার এবং সমাজই হয়ে ওঠে প্রাথমিক অনুশীলন কেন্দ্র।
সামাজিক আচরণ বিধি, পারিবারিক সুশাসন তাদের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও মানসিক বিকাশে মাপকাঠির ন্যায় কাজ করে। তাদের জন্য কার্যকরী ও উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলা না হলে পারিবারিক ও সামাজিক অঙ্গনে যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি বিরাজ করবে, এর প্রভাব শুধু সমাজকেই নয়, পরোক্ষভাবে জাতিকেও পোহাতে হবে। তবে এরকম অবস্থার মুখোমুখি না হওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করে দিতে হবে, যাতে তাদের সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক বিকাশের মধ্য দিয়ে দেশ তার উন্নয়নের যাত্রাকে চলমান রাখতে পারে।
প্রতিটি শিশু জন্মগ্রহণের পর প্রথমেই প্রভাবিত হয়ে থাকে সেই পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে। ভাষাজ্ঞান থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্য তাকিয়ে থাকে নিকটস্থদের দিকে। আর এখান থেকেই শুরু হয় তাদের শেখার পথযাত্রা। তাই পিতা-মাতা ওসকল অভিভাবকদের আচার-আচরণ, কথা-বার্তায় যথেষ্ট সংযত হওয়া চাই। কিন্তু আমাদের পারিবারিক প্রেক্ষাপট পর্যবেক্ষণ করলে দেখলে, অনেকটাই এর ব্যতিক্রম পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
অধিকাংশ অভিভাবক এমন ধারণা পোষণ করেন যে, এই বয়সটাতে যেভাবেই গড়ে উঠুক না কেন, বিদ্যালয়ে পদার্পণের সাথে সাথে শিক্ষক সমাজ তাদের আচরণগত পরিবর্তন সাধন করবে এবং নিষ্ঠাবান মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যার কারণে তাদের তোয়াক্কা না করে নানা ধরনের অশ্লীল শব্দের ব্যবহারসহ যেকোন বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করছে না।
এভাবে পরিবারের দায়িত্বকে ক্ষীণ করে দেখছে অনেক অভিভাবক। যদি নিজেদের অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্বটুকু এভাবে এড়িয়ে শিক্ষকের উপরে ছুঁড়ে দেয়, সেই পরিণতি কতটা মঙ্গলময় হবে, সেটুকু বুঝতে তো কারও কষ্ট হবে না! আর এরকম পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে হবে যেকোন মূল্যে।
তাদের মানসিক বিকাশে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা কোন অংশে কম দায়ী নয়। বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রায় ধরেই নেওয়া যায়, সামাজিক সমস্যা সমূহ তাদের পতনের প্রধান নিয়ামক। কেননা সমাজব্যবস্থা যেমন একজন শিশুকে তার সফলতার সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দেয়, ঠিক একইভাবে এর বিপরীতটাও ঘটে যাচ্ছে নিয়মিত। বন্ধু-বান্ধবের কুপ্রভাব ও নেতিবাচক মনোভাব এখানে উল্লেখযোগ্য।
তাদের প্ররোচনায় পড়ে ও আবেগের বশবর্তী হয়ে ক্রমশ ঝুঁকে পড়ছে মাদকদ্রব্যের প্রতি, আকৃষ্ট হচ্ছে অনৈতিক কর্মকান্ডে। শিক্ষার আলো থেকে সরে গিয়ে অপকর্মের আধারে ডুবে যাচ্ছে হাজারও প্রাণ।ভালো-মন্দ বুঝতে না পারাটা এখানে মুখ্য বিষয় নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সামাজিক অবকাঠামোর দুর্বলতার কারণে এমনটা ঘটে থাকে। এছাড়া নিজ পরিবারের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ গড়ে তুলতে অপারগ হলে তাদের এমন একটা ঝুকিপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক হয়ে পড়ে।
বিদ্যমান সমাজব্যবস্থায় এর লাগাম টানতে না পারলে, এমন সমস্যার মূলোৎপাটনে ব্যর্থ হলে এর ভয়াবহতা যে কতটা আশঙ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে, তা বলা বেশ মুশকিল। এরকম সমস্যার উত্তরণে সকল অভিভাবকদের দায়িত্বশীল আচরণ কাম্য। তারা নিজ নিজ জায়গা থেকে যথেষ্ট সচেতন হলে এবং শিশুদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুললে অনেকটা সুফল পাওয়া যাবে আশা করা যায়।
এছাড়া শিশুরা প্রায়ই যে সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকে, তার মধ্যে অন্যতম হলো দরিদ্রতা। খুব কম সংখ্যক পরিবারই আছে, যাদের আর্থিক অবস্থা তাদের প্রয়োজনের অনূকূলে। তাই আর্থিক চাহিদার যোগান দিতে গিয়ে সরে দাঁড়াতে হচ্ছে পড়াশোনা থেকে, কাঁধে তুলে নিতে হচ্ছে সাংসারিক বোঝা। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আজকাল অর্থাভাবে পারিবারিক চাপে পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়েছে। যেখানে বেঁচে থাকাটাই তাদের ও তাদের পরিবারের জন্য দুরূহ হয়ে পড়েছে, সেখানে শিক্ষাগ্রহনের নিশ্চয়তা কতটা প্রত্যাশা করা যায়?
এর বাহিরেও একশ্রেণির শিশু আছে,যারা সম্পূর্ণভাবে সুবিধাবঞ্চিত, বাবা-মায়ের স্নেহের ঊর্ধ্বে, পথে- ফুটপাতে যাদের বসবাস। তারা নানা ভাবে অনেকের নজরে আসলেও এর কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না, আসছে না তাদের জীবনমানের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন। তবে এদের যদি শিক্ষাক্ষেত্রে মনোনিবেশ করার পর্যাপ্ত সুযোগ করে দেওয়া হয়, সমাজের আগামী নেতৃত্বের দায়িত্ব এদের হাতেও অর্পিত হতে পারে।
আজকের সুবিধা বঞ্চিত শিশুরাও ভবিষ্যতের টেকসই উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে পরিগনিত হওয়ার সুযোগ পেতে পারে। প্রায় প্রতিটি সমাজেই কম-বেশি এদের মত শিশুদের জীবনযাপন লক্ষ্য করা যায়। তাই নৈতিকতা ও মূল্যবোধ থেকে এগিয়ে আসতে হবে সকলকেই।উচ্চমহলেও এদের অধিকার বাস্তবায়নে অভিনব পদ্ধতি উন্মোচিত হতে হবে। এছাড়া বরাদ্দকৃত সরকারি সহায়তাগুলো প্রকৃতপক্ষে তাদের দ্বারে পৌঁছে যাচ্ছে কি না, এ ব্যাপারটাও সতর্ক দৃষ্টিতে দেখতে হবে।
এখনও প্রায় অনেক অনুন্নত গ্রামের সন্ধান মেলে, যেখানে সুশিক্ষাগ্রহণে পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে কোন তাগিদ দেওয়া হচ্ছে না। সেখানকার শিশুরাও গতানুগতিক অবস্থাতেই বেড়ে উঠছে, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার স্রোতে গা ভাসাতে পারছে না। শিক্ষার্জনের সুফল তুলে ধরা পূর্বক বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তাদের আকৃষ্ট করা প্রয়োজন।
যেহেতু আগামীতে দেশ পরিচালনার মহান দায়িত্ব তাদের হাতেই ন্যস্ত হবে, তাই শিশুদের এখন থেকেই বিভিন্ন গুণে গুণান্বিত হওয়ার জন্য বিদ্যমান সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে হবে। বেড়ে উঠতে যেসকল চাহিদার যোগান আবশ্যক, সেগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়ে পিতা-মাতার পাশাপাশি কতৃপক্ষেরও কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। ফলশ্রুতিতে তাদের আলোয় অবশ্যই আলোকিত হবে দেশ তথা সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড।
প্রজন্মনিউজ২৪/এ আর
সিংড়ায় অগ্নিকান্ডে পুড়লো ১২ স্বর্ণের দোকান, অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
প্রচণ্ড গরমে দিনের পরিবর্তে রাতে কাজ করবে ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা
জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ অন্ধকার: কাজী ফিরোজ
আগামীকাল রাজধানীর যেসব এলাকায় ১২ ঘন্টা গ্যাস থাকবে না
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে সমস্যার সমাধান হবে না: আব্দুস সালাম
২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি কমেছে ১৫.৪৯ শতাংশ
ইউএসএ বাংলা সাহিত্য সম্মেলন-২৪