বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের আজ ১৩৩ তম প্রতিষ্ঠা দিবস

প্রকাশিত: ১৫ জুন, ২০২২ ১০:০৮:২২

বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের আজ ১৩৩ তম প্রতিষ্ঠা দিবস

ফকরুল রিয়াজ বরিশাল প্রতিনিধিঃ সত্য প্রেম পবিত্রতার ধারক ও বাহক, দক্ষিণ বাংলার অক্সফোর্ড খ্যাত শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ সরকারি ব্রজমোহন কলেজ কালের প্রবাহে অতিবাহিত হয়ে আজ ১৩৩ তম প্রতিষ্ঠা দিবস।

ইতিহাস-ঐতিহ্যের এক সুমহান গৌরবের পীঠস্হান। বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ যা গড়ে ওঠে সুদূর অতীতে ১৮৮৯ সালে। ইংরেজ শাসনামলে মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্ত পিতা ব্রজমোহন দত্তের নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন।

পরাধীন দেশে, বৈরী পরিবেশে স্কুল, কলেজ স্হাপন সহজ কাজ ছিলনা। অশ্বিনী কুমার সে অসাধ্য কাজটি সম্পন্ন করেন নিজের দৃঢ় ইচ্ছা শক্তির জোরে। প্রকৃতির অপার দান সত্ত্বেও নদী বিধৌত বরিশাল ছিল অবহেলিত অঞ্চল। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত এক পশ্চাৎপদ জনপদ।

ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী ১৮২৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ইংরেজি স্কুল। ১৮৫৩ সালে সেটি বরিশাল জিলা স্কুল এ রূপ নেয়। সেটা ছিলো শাসক গোষ্ঠীর প্রয়োজনে। উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণ অশ্বিনীকুমারকে উদ্বেলিত করে ঘুমন্ত বরিশালকে জাগ্রত করতে শিক্ষার আলোক বর্তিকা রূপে আবির্ভূত হন তিনি।  তৈরি করেন স্কুল, কলেজ। সত্য, প্রেম, পবিত্রতার আলোকে নিজ ছাত্রকে উদ্ভাসিত  করেন।

প্রথম দিকে কলেজটির কার্যক্রম চালু থাকে ব্রজমোহন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। পরে অশ্বিনীকুমার জীবিত থাকতেই ১৯১৭ সালে কলেজটি বর্তমান পুরাতন ক্যাম্পাসে স্হানান্তর করা হয়। সময়টি ছিল বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পরবর্তী স্বদেশী ও অসহযোগ আন্দোলন প্রভাবিত যুগ।

 ফলে শুরুতেই অনেক প্রতিভাবান উচ্চ শিক্ষিত ও স্বাধীনচেতা তরুণ ইংরেজদের গোলামীর সরকারি চাকরির মোহ ত্যাগ করে দেশসেবা ও মানুষ গড়ার সু-মহান ব্রত নিয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। অশ্বিনীকুমার তৎকালীন এ ধরনের অনেক খ্যাতিমান শিক্ষকদের সমাবেশ ঘটিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।

এসময় সহকর্মী হিসেবে সাথে পান শ্রীযুক্ত অক্ষয় কুমার, কালীশচন্দ্র, জগদীশ, ব্রজেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, রজনীকান্ত গুহ, সতীশচন্দ্র চ্যাটার্জী প্রমুখ বাংলার বরেণ্য ব্যক্তিবর্গকে। তাঁর আদর্শিক ভাবধারা, দক্ষ পরিচালনা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার কারনে কলেজের শিক্ষার মান এ পর্যায় এতটাই উন্নত ছিল যে ইংরেজ রাজপুরুষরা একে বাংলার অক্সফোর্ড বলে অভিহিত করেন। শিক্ষকদের অসাধারণ পান্ডিত্য, আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্ব, নৈতিক মূূল্যবোধের প্রখরতার কারনে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষার্থীরা ঈর্ষনীয় ফলাফল করতে থাকে।কলেজের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে বাংলা ছাড়িয়ে উপমহাদেশ ব্যাপী।
                                                                                               
১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সাল ছিল কলেজের স্বর্ণযুগ। এ পর্বে (১৯৩৫-১৯৪৬) কলেজের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন নির্সগের কবি, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ। ১৯২৮ সালে ব্রজমোহন কলেজের কৃতি শিক্ষার্থী শ্রীমতী শান্তি সুধা ঘোষ গণিত এ অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্হান অধিকার করে ঈশান বৃত্তি লাভ করেন। এ ধারাবাহিকতা বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরও অব্যাহত থাকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৭৫ সালে অনার্স পরীক্ষায় কলেজের রসায়ন বিষয়ের ছাত্র দিলীপ কুমার চক্রবর্তী প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হন। অর্জন করেন দুর্লভ কালীনারায়ন বৃত্তি। এছাড়া বোর্ডের অধীনে প্রতিবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কলেজের মেধাগত অবস্হান থাকতো নিয়মিত। সময়ের হাত ধরে সে নাম-যশ-খ্যাতি আজও দীপ্যমান।

 ২০১৬সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বারের মতো অধীনস্হ কলেজ গুলোর ভিতর Ranking এর আয়োজন করে। তাতে ইতিহাসের সাক্ষী এই বিদ্যাপীঠ দেশ সেরা পাঁচটি কলেজের একটি বলে বিবেচিত হয়।

২০১৭তেও সে ধারা বহমান থাকে। এ গৌরব বরিশালবাসীর, এ কৃতিত্ব কলেজের ছাত্র, শিক্ষক,কর্মচারী, অভিভাবক সকলের। কলেজ সরকারিকরণ হয় ১৯৬৫ সালে।
এখান থেকে বর্তমান কাল পর্বকে কলেজের সমৃদ্ধির পর্ব বলা যেতে পারে। একসময় যে কলেজে কেবল উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রী কোর্স চালু ছিল আজ সে কলেজে ২৩ বিষয়ে পাঠদান করা হয়। এরমধ্যে ২২ টিতে অনার্স এবং ২১ টিতে মাষ্টার্স কোর্স চালু আছে।

ইতিহাস-ঐতিহ্যের সমান্তরালে দীর্ঘ দু'দশক পর কলেজের পূর্ব সুনাম ফিরিয়ে আনতে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের দরিদ্র মেধাবী ছাত্রদের মানসন্মত কলেজে পড়ার সুবিধার্থে ও বিজ্ঞানমনস্ক ছাত্র গড়ে তুলতে বন্ধ হয়ে যাওয়া উচ্চ মাধ্যমিক এ বিজ্ঞান শ্রেণীতে পাঠদান পুনরায় আরম্ভ করা হয়।

কলেজ ক্যাম্পাস দৃষ্টিনন্দন করতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শিক্ষার্থীদের মননে সঞ্চারিত করতে  নির্মাণ করা হয় বিজয় প্রাঙ্গণ ও স্বাধীনতা চত্বর। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর স্হাপন করা হয় মহান মুক্তিযুদ্ধে কলেজের শহীদ শিক্ষক-ছাত্রদের স্মরণে কালজয়ী নিদর্শন- গৌরবের অমর গাঁথা শহীদ স্মৃতি ফলক।

ইতিমধ্যে এর স্হাপত্য নিদর্শন বিঙ্গ জনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। উন্নয়নের ছোঁয়ায় জীবনানন্দ ছাত্রাবাসের দীর্ঘদিনের অসমাপ্ত নির্মাণাধীন পাঁচতলা ভবন এখন কেবল উদ্বোধনের অপেক্ষায়। যেমনি পূর্ণ অবয়বের অপেক্ষায় আছে পোষ্ট গ্রাজুয়েট প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন একাডেমিক ভবন, বিজ্ঞান ভবন, এক্সামিনেশন ভবন ও একটি ছাত্রী নিবাস। আশাকরি এগুলির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে প্রিয় বিদ্যাপিঠ নবযাত্রায়- নবরূপে সজ্জিত হবে।

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্ত ছিলেন একজন শিক্ষাব্রতী, মানব হিতৈষী-রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন আধুনিক বরিশালের স্বপ্নদ্রষ্টা। তাঁর সত্য,প্রেম, পবিত্রতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রাচীন এই বিদ্যাপিঠের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারীরা অতীতে যেমন স্বদেশী আন্দোলন থেকে শুরু করে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রেখেছিল তেমনি পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাহান্নোর ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়েছিল। আমরা সেই সুমহান ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার।

বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে উৎযাপিত হয় কলেজটির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী।


প্রজন্মনিঊজ২৪/খতিব

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ