চেয়ারম্যান ভালো মানুষ, তার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ নাই : মামলার বাদী

প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর, ২০২১ ০৪:০৬:০৭

চেয়ারম্যান ভালো মানুষ, তার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ নাই : মামলার বাদী

নাঈম, পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড় সদর উপজেলায় উত্তরাধিকার সনদ প্রদানকে কেন্দ্র করে করা মামলায় ৪ দিন ধরে কারাগারে আছে সাইয়েদ নূর-ই-আলম (৪৫) নামের এক ইউপি চেয়ারম্যান। তবে চেয়ারম্যান নির্দোষ এবং ভালো মানুষ। তাকে ফাঁসানো হয়েছে এমন দাবী খোদ মামলার বাদীর।

গত ১১ অক্টোবর (সোমবার) পঞ্চগড় সদর থানায় হাড়িভাসা ইউনিয়নের ওই চেয়ারম্যান এবং দুই ইউপি সদস্যসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন একই ইউনিয়নের গাড়াতিপাড়া এলাকার কালু মিয়া (ফালু) নামের এক ব্যক্তি। মামলায় ৫ নং আসামী করা হয় চেয়ারম্যানকে। গত ১২ অক্টোবর (মঙ্গলবার) পঞ্চগড় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন আবেদন করলে বিচারক হুমায়ুন কবির সরকার মামলার ৩নং আসামী মকবুল হোসেন ও ৫নং আসামী সাইয়েদ নূর-ই-আলমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, বাদীর জমি জোরপূর্বক দখলে নিতে মৃত আছিম উদ্দীনের জীবিত পূত্র কালু মিয়াকে (ফালু) ভুয়া দাবি করে মৃত দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ হতে চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত উত্তরাধিকার সনদ নেন আসামী মকবুল। ওই সনদে বাদীকে ওয়ারিশবিহীন দেখানো হয়েছে। বাদী জীবিত জানা স্বত্ত্বেও চেয়ারম্যান সনদে স্বাক্ষর করেছেন।

তবে চেয়ারম্যান নির্দোষ, তাকে ফাঁসানো হয়েছে দাবি করে মামলার বাদী কালু মিয়া (ফালু) বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান খুব ভালো মানুষ, তিনি কারো কাছ থেকে এক টাকা ঘুষ খাননা। আমার বয়সে এত ভালো চেয়ারম্যান দেখিনি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে মামলা করার কোন উদ্দেশ্য ছিলোনা আমার। তিনি ওই ভুল তথ্যের উত্তরাধিকার সনদ প্রদান করেছেন এজন্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে মামলায় উল্লেখ করেছি। চেয়ারম্যান আটক হোক এটা আমার কাম্য ছিলোনা। আমি চেয়েছিলাম প্রধান আসামীদের আটক করবে। কিন্তু ৫নং আসামী নির্দোষ চেয়ারম্যান কারাগারে থাকায় আমারও খারাপ লাগছে।

তিনি বলেন, আমাদের ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তৌহিদুল ইসলাম ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য সাহেরা বেগম চেয়ারম্যানকে ভুল তথ্য দিয়ে ওই ভুয়া উত্তরাধিকার সনদটি দিয়েছেন। পরে আমি চেয়ারম্যানের কাছে সমাধান চাইলে চেয়ারম্যানই আমাকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। কিন্তু কে জানে তাকে আটক করা হবে? কালু মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নিয়ে আমরা অহংকার করি। তার মত সৎ চেয়ারম্যান কয়েক ইউনিয়নে নেই। তিনি ভুল বুঝাবুঝির শিকার। তার মুক্তি হলে আমাদের কোন আপত্তি নেই।

এদিকে, ইউনিয়ন পরিষদ ও চেয়ারম্যানের ঘনিষ্টজনরা জানান, আসলেই চেয়ারম্যান সম্পূর্ণ নির্দোষ। তবে ইউপি সদস্য তৌহিদুল ইসলাম ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য সাহেরা খাতুন দায় এড়াতে পারেননা। আসামীরা চেয়ারম্যান বরাবর উত্তরাধিকার সনদের আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের এই দুই সদস্যকে তদন্তের দায়িত্ব দেন চেয়ারম্যান। পরে তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম উত্তরাধিকার সনদে স্বাক্ষর করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখবার দাবি জানিয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, যেই উত্তরাধিকার সনদকে কেন্দ্র করে এই মামলা, সেই সনদে কালু মিয়ার কোন স্ত্রী-সন্তান নেই উল্লেখ ছিলো। অথচ মামলায় উল্লেখ রয়েছে, বাদী কালু মিয়ার তিন ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, মামলাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং ইউনিয়ন পরিষদের সুনামক্ষুন্ন করতেই করা হয়েছে সম্ভবত। 

এদিকে, গাড়াতি পাড়া এলাকার লোকজন জানান, মামলার বাদীর প্রকৃত নাম ফালু মোহাম্মদ। তার বাবার নাম সুরুজ আলী। এই নামেই তিনি পরিচিত। অপরদিকে, ফালু মোহাম্মদের শ্বশুর আব্দুল গফুর মুন্সীর ছোট ভাই ছিলেন কালু মিয়া। তিনি ১২ বিঘা জমি রেখে মারা যান। তার কোন স্ত্রী-সন্তান ছিলনা। প্রকৃত কালু মিয়ার এই সম্পত্তি দখলে নিতে ফালু মোহাম্মদ দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছিলো।

পরে ২০০৮ সালে কৌশলে ভোটার আইডি কার্ডে নাম বদলে কালু মিয়া (ফালু) হন। দাবী করতে থাকেন গফুর মুন্সীর ভাইয়ের সম্পত্তি। এ নিয়ে গফুর মুন্সীর ওয়ারিশদের সঙ্গে কলহ দীর্ঘদিনের। সবশেষ, ২০১৮ সালে মৃত গফুর মুন্সীর ছেলে মকবুল তার দাদা মৃত আছিম উদ্দীন এবং বাবার উত্তরাধিকার হিসেবে সনদের আবেদন করেন চেয়ারম্যান বরাবর। চেয়ারম্যানের দেয়া সনদটি নির্ভুল দাবি করছেন স্থানীয় সুরুজ (৮০), তারাব আলী (৬১), আজিমুলসহ (৭৫) অনেকেই।

আটক আসামী মকবুলের হোসেনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা আমার দাদার উত্তরাধিকার হিসেবে সনদ নিয়েছি। ফালু মোহাম্মদের (কালু) এখানে সমস্যা থাকার কথা নয়। আমাদের হয়রানি করতেই এই মামলা করেছেন তিনি।

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য তৌহিদুল ইসলাম বলেন, প্রকৃত কালু মিয়া অনেক আগেই মারা গেছেন এবং তার কোন স্ত্রী-সন্তান ছিলোনা। আর বাদী কালু মিয়ার প্রকৃত নাম ফালু মিয়া এবং তার বাবার নাম সুরুজ আলী। এই নামে তিনি দীর্ঘদিন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন। পরে ২০০৮ সালে কৌশলে জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম বদলে কালু মিয়া (ফালু) হয়েছেন। এই উত্তরাধিকার সনদ দেয়া হয়েছে ২০১৮ সালে। সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এতদিন পর এই মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে আসামী পক্ষের আইনজীবি অ্যাড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা গত মঙ্গলবার আদালতে জামিন আবেদন করেছিলাম। আদালত ৭ জনের মধ্যে ৫ জনকে জামিন দিয়েছেন এবং দুইজনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। আবারো জামিনের আবেদন করবো। ইনশাআল্লাহ বাকী দুজনও ন্যায় বিচার পাবেন।

প্রজন্মনিউজ২৪/এন হাসান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ