বাড়ছে বাইক, কমছে যাত্রী

আশঙ্কাজনক হারে বাইক রাইডারদের আয় কমছে

প্রকাশিত: ০১ নভেম্বর, ২০২০ ০১:৪৮:০০ || পরিবর্তিত: ০১ নভেম্বর, ২০২০ ০১:৪৮:০০

আশঙ্কাজনক হারে বাইক রাইডারদের আয় কমছে

মো: হাবিবুল্লাহ হাবিব, নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীতে গত কয়েকমাসের ব্যবধানে বাইক রাইডারদের আয় আশঙ্কাজনক হারে কমছে। করোনা ভাইরাসের কারণে বেকারত্বের হার বেড়েছে। অন্যদিকে কমেছে পেশাজীবিদের আয়। ফলে খরচ কমাতে গণপরিবহনের ব্যবহার বেড়েছে। একই সাথে রাইড শেয়ারিংয়ে যাত্রীদের চাহিদা কমেছে।

সুত্রমতে, রাজধানী ঢাকায় এখন পাঠাও, উবার, ইজিয়ার, সহজ, ও ভাই, ওবোনসহ বিভিন্ন সেবার মাধ্যমে দুই লাখের বেশি রাইডার রাইড শেয়ারিং সেবার সঙ্গে যুক্ত। রাইডার মধ্যে অধিকাংশই শিক্ষার্থী। বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষসহ, রাজধানীতে লেখাপড়ার পাশাপাশি রাইড শেয়ার করে জীবিকা নির্বাহ করেন থাকেন।

এছাড়াও কম বেতনে চাকরি করা ব্যক্তিরা এবং বিভিন্ন বয়সী বেকার তরুণরাও রাইড শেয়ার করে থাকেন। কিন্তু রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে রাইড শেয়ার করে তারা ততটা সুবিধা করতে পাচ্ছেনা বলে জানা যায়।

বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় রাইডার আয়াতুল্লাহ মানিক জানান, ‘করোনাভাইরাস কালে রাইড শেয়ারে যাত্রীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেকটা কমেছে। এখন আগের মত আয় হয় না। অ্যাপে আগের মত কলও পাওয়া যায় না। অ্যাপ ব্যতিত দীর্ঘ সময় যাত্রীর জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। যাত্রী পাওয়া গেলেও ভাড়া অনেক কম বলে জানান তিনি।’

রাইড শেয়ারিংয়ে আয় কমার কারণ সম্পর্কে ফার্মগেট এলাকার রাইডার আজিজ বলেন, ‘আট-দশ ঘন্টা রাইড শেয়ার করে সাত-আটশত টাকা আয় করা যায়। এতে জ্বালানি ও অন্যান্য খরচ বাদে তিন-চারশত টাকা আয় থাকে। যা আগের তুলনায় অনেক কম। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের হয়রানি, মামলা ও সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাইড শেয়ারিংয়ের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে নতুন হলেও শুরুতে এর বাজার ভালো ছিল। সম্মানের পেশা ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকার বাহিরে থেকে অনেক পেশাজীবি তাদের পেশা বদল করে রাজধানীতে রাইড শেয়ারিং পেশায় যোগ দেন। আবার বাড়তি আয়ের আশায় খন্ডকালীন অনেক চাকুরীজিবীও এ পেশায় এগিয়ে আসে। এছাড়া ছাত্র, চাকুরীজীবি, বেকার অনেকেই এ কাজ কে পেশা হিসেবে বেছে নেন।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা ‘উবার’ বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে। এরপর পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে রাইড শেয়ারিংয়ের জনপ্রিয়তা। এরই ধারবাহিকতায় গত চারবছরের ব্যবধানে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আরো ১২টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০টি এ্যাপস ভিত্তিক সেবা।

বিআরটিএ’র দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে সারা দেশে নতুন মোটরসাইকেল রাস্তায় নেমেছে তিন লাখ ৩২ হাজার ৫৭টি। এর মধ্যে শুধু রাজধানীর রাস্তায় নেমেছে নতুন ৫৩ হাজার ৭৩৮টি মোটরসাইকেল। ২০১৭ সালে পুরো দেশের হিসাবে নতুন মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রি হয়েছে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৫০০টি। এরমধ্যে শুধু ঢাকায় নেমেছে ৭৩ হাজার ২৫১টি।

২০১৮ সালে সারাদেশে যোগ হয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৬০৩টি মোটরসাইকেল। অন্যদিকে শুধু রাজধানীতে যোগ হওয়া মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৪ হাজার ৬৪টি। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সারা দেশে নতুন রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে দুই লাখ ৪৯ হাজার ৯৫০টি, যা বছর শেষে পাঁচ লাখ ছাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বছরের প্রথম ছয় মাসে শুধু রাজধানী ঢাকাতেই নেমেছে ৬১ হাজার ১৩২টি মোটরসাইকেল, যা বছর শেষে সোয়া লাখ ছাড়াতে পারে।

এখন ঢাকায় যেসব মোটরসাইকেল নামছে সেগুলোর সাথে ঢাকার বাইরে থেকে আসা বড় একটি সংখ্যার মোটরসাইকেল বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং কোম্পানিতে তালিকাভুক্ত হচ্ছে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ্যাপসভিত্তিক সেবার যাত্রার শুরুতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও ৩য় বছর থেকে কমতে থাকে এর পরিসর। এর পেছনে নানাবিধ সমস্যা চিহ্নিত হলেও এর সমাধান না হওয়ায় এ্যাপস এর ব্যবহার আগের অবস্থানে যেতে পারেনি। পর্যায়ক্রমে রাইডাররা চুক্তিভিত্তিক আয়ের পথে নেমে পড়ে।

গুলশান-২ অবস্থান করা আরেক রাইডার মো: হামিদুর রহমান বলেন, সেবাদনিকারী প্রতিষ্ঠানের মাত্রারিক্ত কমিশন, যান্ত্রিক ভোগান্তি, গ্রাহকদের কাঙ্খিত সেবা দিতে অক্ষমতা, টার্গেট পূরণে অক্ষমতা ও কাঙ্খিত আয় না হওয়ায় রাইডাররা এ্যাপসভিত্তিক সেবা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যদিও এ্যাপসভিত্তিক সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের নিরাপত্তা বেশি থাকে। আর চুক্তিভিত্তিক সেবার মাধ্যমে নানাধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের ঝুকি থাকে। আর আইনগতভাবেও চুক্তিভিত্তিক সেবা সিদ্ধ নয়। দিন দিন এ সেবার পরিসর বাড়ছে। ভবিষ্যতের বিষয় চিন্ত করে সরকারের উচিত এখনই একটি কার্যকর নীতিমালা তৈরী করা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজপথে যাত্রীর তুলনায় রাইডারের সংখ্যা অনেক বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে দেড়-দুই ঘন্টায়ও একজন পাননি এমন রাইডার দেখা গেছে। তিনি জানান,যাত্রী যত দুরেই যাক, ভাড়া ১০০-১২০ টাকার বেশি  বলতে চাননা তারা। অর্থাৎ বাইক বেশি ও যাত্রীর সংখ্যা কম হওয়ায় এমনটি হচ্ছে বলে জানাযায়।

নতুন বাজারের এক রাইডার বাহারুল। রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে গত বছর মাস্টার্স পাস করেছেন তিনি। কিন্তু এখনো কোনো চাকরি পাননি। অভাবের সংসারের হাল ধরতে ২০১৯ সালে একটি মোটরসাইকেল কিনে অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘শুরুতে প্রতিদিন ভালোই আয় হতো। খরচ বাদে কমপক্ষে এক হাজার টাকা নিয়ে বাসায় যেতে পারতাম। নিজের খরচ চালিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকা পরিবারের খরচও চালাতে পারতাম। কিন্তু করোনাকাল শুরু হওয়ার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে রাইড শেয়ারিং সেবা। দীর্ঘদিন বাসায় বেকার বসে থাকতে থাকতে জমানো সঞ্চয়ও শেষ হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে ফের রাস্তায় নেমেছি। এভাবেই রাস্তায় মোড়ে দাঁড়িয়ে ডেকে ডেকে যাত্রী সংগ্রহ করে চুক্তিভিত্তিক রাইড শেয়ার করছি। তবে আগের মতো এতো যাত্রী পাওয়া যায় না।’

যাত্রাবাড়ী থানার এসআই বাবুল বলেন, রাজধানী ঢাকায় অনেকেই বাইক রাইডশেয়ার এবং ব্যক্তিগত হিসেবে মোটরসাইকেল ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু কোন কারণ ছাড়া আমরা কাউকে জব্দ করিনা। বিশেষ করে হেলমেট ও রং পার্কিংয়ের জন্য আমরা সতর্ক করে থাকি। এছাড়াও সিগন্যাল অমান্য করাসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের কারনে আমরা যেকাউকেই তলব করে থাকি বলে জানান তিনি।

প্রজন্মনিউজ২৪/হাবিব

এ সম্পর্কিত খবর

জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ অন্ধকার: কাজী ফিরোজ

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে সমস্যার সমাধান হবে না: আব্দুস সালাম

২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি কমেছে ১৫.৪৯ শতাংশ

বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবায় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী

চুয়াডাঙ্গায় আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৭ ডিগ্রি

উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীরা প্রভাব ফেলতে পারেন

ঘোড়াঘাটে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চাপমুক্ত আওয়ামী লীগ

বাসের সঙ্গে ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘষে নিহত ১ আহত ৩

ইউএসএ বাংলা সাহিত্য সম্মেলনে আসতে শুরু করেছেন দুই বাংলার কবি সাহিত্যিকগন

সরদার পাড়া দারুল কোরআন মডেল মাদ্রাসার পরিক্ষার ফল প্রকাশ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ