এলাকাবাসীর অভিযোগ ‘মাজারে চলে অবৈধ কাজ’, পুলিশ বলছে ভিন্নকথা

প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারী, ২০২০ ১১:৩৭:০৮

এলাকাবাসীর অভিযোগ ‘মাজারে চলে অবৈধ কাজ’, পুলিশ বলছে ভিন্নকথা

স্কুল কলেজ বা মাদ্রাসায় লেখাপড়া না করা শাহ আসেদ চান ফকির (২৮) নামের এক তথাকথিত পীরের সন্ধান পাওয়া গেছে। ঢাকা বিভাগের শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সফি কাজীর মোড় এলাকায় এই পীরের মাজার অবস্থিত। তার বাবার নাম মরণ মোল্লা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীর অভিযোগ, অশিক্ষিত আসেদ মোল্লা, পীর সেজে বিভিন্ন মানুষকে তার মুরিদ করছে, ভক্ত বানাচ্ছে। এখানে ধর্মের নামে চলছে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, অবৈধ সম্পর্ক। তাকে সেজদা করে ধর্মকে করছে কুলশিত। এলাকার অনেকের দাবি, এ ধরনের ধর্মব্যবসায়ীকে অচিরেই আইনের আওতায় এনে, কঠিন বিচারের মাধ্যমে, পবিত্র ধর্ম ইসলামকে অপবিত্রতার হাত থেকে রক্ষা করা হোক।

সরেজমিনে জানা যায়, মাথা থেকে কোমরের নিচ পর্যন্ত জটা চুলের কথিত পীরকে ঘিরে বসে আছে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, চট্টগ্রামসহ দূর-দূরান্ত থেকে আগত তার মুরিদান, শুভাকাঙ্ক্ষী ও ভক্তরা। জানা যায়, ২৮ বছর বয়সী অবিবাহিত কথিত এ পীর স্কুল-কলেজ বা কোন মাদ্রাসার বারান্দা পর্যন্ত যায়নি। পীর শাহ আসেদ চান ফকির ও তার বড় ভাই খোরশেদ আলমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে বিডি২৪লাইভ।

তিনি বলেন, ‘সাধারণ আর দশজন মানুষের চেয়ে আমার ভাই একটু ভিন্ন ধরনের। ছোট থেকে আমার ভাইয়ের ছিল অসাধারণ গুণ। মুন্সিগঞ্জ দোহার থানায় অবস্থিত নুরালাপুর হযরত শাহ লাল শাহ চিশতী (র:আ:) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত। ৮ বছর বয়স থেকে সে দরবারের খেদমতে ছিল। এখানে আমরা ১৮ বছর ধরে দরবার শরীফ দিয়েছি। আমার দাদা দাদী ও বাবাসহ চার পুরুষ ধরে মানুষের খেদমত করে আসছি। প্রতিবছর মাঘ মাসের ৬,৭ ও ৮ তারিখে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত দশ হাজারের বেশি লোক নিয়ে ওরস করছি।’

কিন্তু ওরসের সাথে পীরকে সিজদা করার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে সেজদা করতে বলি না, কেউ যদি মনের থেকে সেজদা করে তাহলে আমরা কি করতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানকার পানি পড়া খেয়ে বিভিন্ন লোক জটিল রোগ থেকে মুক্তি পায়। তার পানি পড়া খেয়ে ১৬ বছর পর এক মহিলার ছেলে সন্তান হয়েছে বলেও জানান, পীরের বড় ভাই খোরশেদ আলম।

পুলিশ প্রশাসন, এলাকার দিলু সরদার, সিরাজ সরদার, শফি কাজী , স্থানীয় চেয়ারম্যান, গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত আছেন বলে জানান তিনি। এমনকি তারাও ওরসে নিয়মিত আসেন বলে তিনি স্পষ্ট জানান। সাথে তার ভাই কোন স্কুল কলেজ বা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেনি এ কথাও পীরের বড় ভাই স্বীকারও করেন। বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে যোগাযোগ করে জাজিরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজহারুল ইসলামের সাথে।

কিন্তু ওসি তদন্ত করে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রামে আছেন বলে জানায় সে থানার তদন্ত ইন্সপেক্টর নাসিরুদ্দিন শেখ। তদন্ত ইন্সপেক্টর নাসিরুদ্দিনের কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি ঘটনার বিবরণ দেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আসেদ তার বাড়িতে ওরস মাহফিল করে আসছে। প্রায় ৬০ বছর ধরে তারা মাহফিল করে আসছে এবং তাদের মাজার আছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ওরস করেছে। তবে এখানে দুইটা গ্রুপ আছে। একটা চেয়ারম্যান গ্রুপ অপরটি কমিশনার গ্রুপ। এক গ্রুপকে সেই ওরসে দাওয়াত করায় আরেক পক্ষ এগুলো মিথ্যাচার করছে।’

মাজারে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, অবৈধ সম্পর্ক ও পীরকে সিজদা করায় তা ইসলামী অনুভূতিতে আঘাত হানছে কি না জানতে চাওয়া হলে কিছুটা পীরের ভাইয়ের মতো করেই তিনি বলেন, ‘এগুলা কিছুনা। এখানে শত্রুতার জের ধরে মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে। আর কেউ যদি মনের ইচ্ছায় তাকে সিজদা করে, এখানে তো পীরের কিছু করার নাই। উনি তো কাউকে কিছু বলেননি। সবাই নিজ ইচ্ছায় করে। আর এটা নিয়ে মিথ্যাচার করছে অপরপক্ষ।’

এ ব্যপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ‘পীর ও পীরের ভাই পুলিশকে টাকা দিয়ে এটা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে। উনি যে ভণ্ড তা সকলেই জানে। এ ব্যপারে এখনি ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এ বিষয়ে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানতে পেরে জাজিরা থানার অফিসার ইনচার্জ কে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি।

ধর্মীয় দৃষ্টিতে এটি একটি গর্হিত কাজ। আমি তাৎক্ষণিক একজন ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়েছি, তবে তাকে পাওয়া যায়নি। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি বুঝতে পেরে পালিয়েছে। তাকে খুঁজে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ