শ্রমিকদের মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন নিয়ে বিপাকে বিজেএমসি

প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল, ২০১৯ ০৩:২৯:৩৮

শ্রমিকদের মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন নিয়ে বিপাকে বিজেএমসি

 

মোঃ মুস্তাইন কবিরঃ শ্রমিকদের আন্দোলনের পর মজুরি কমিশন কার্যকর করার পদক্ষেপ নিয়েছে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকল। কিন্তু মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন নিয়ে বিপাকে পড়েছে পাটকলগুলোর প্রকল্প প্রধান ও বিজেএমসি। আর্থিক সংকটে সময়মতো শ্রমিকদের মজুরি প্রদান করতে পারছে না মিলগুলো। তার ওপর মজুরি কমিশন কার্যকর হলে শ্রমিকদের মজুরি হবে প্রায় দ্বিগুন।

 

এছাড়া মজুরি কমিশনের ৪ বছরের এরিয়ার জন্য প্রয়োজন হবে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। এতো টাকা কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন কর্তৃপক্ষ। তাদের আয় বাড়ছে না অথচ ব্যয় বাড়ছে ব্যাপক।

 

এদিকে পাটকল শ্রমিকরা বকেয়া মজুরি পরিশোধ এবং মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে গত ২ এপ্রিল থেকে ৭২ ঘণ্টা পাটকলে ধর্মঘট এবং প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখে। এরপর ১৫ এপ্রিল থেকে তারা ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট এবং সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষনা করে। ১৫ এপ্রিল রাতে শ্রম প্রতিমন্ত্রী ও বিজেএমসি চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠকের পর তাদের আশ্বাস দিলে শ্রমিক নেতারা অবরোধ স্থগিত করে। বৈঠকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে বকেয়াসহ সব মজুরি পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী মিলগুলো কাজ শুরু করে।

 

বিজেএমসির সূত্রে জানা যায়, ৯টি পাটকলে শ্রমিকদের ৬ থেকে ১০ সপ্তাহের মজুরি এবং কর্মচারীদের ৩ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। তাদের পাওনার পরিমাণ প্রায় ৫২ কোটি টাকা।

 

এদিকে বিজেএমসি এবং পাটকল নেতারা শ্রমিকদের মজুরি কমিশন কার্যকর সংক্রান্ত দাবির সাথে ঐক্যমত্য পোষন করেছে। কিন্তু তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পাটজাত পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। বর্তমানে ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের ৩২ হাজার ৩৮৭ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য বিক্রির অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে। সে কারণে সময়মতো মজুরি দিতে পারছেন না তারা।

 

আরো জানা যায়, ৯টি পাটকলে স্থায়ী শ্রমিক আছে ১৩ হাজার ১৭০ জন এবং বদলি শ্রমিক সংখ্যা ১৭ হাজার ৪১৩ জন। তাদের সাপ্তাহিক মজুরি ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। মজুরি কমিশন কার্যকর হলে মজুরি হবে প্রায় দ্বিগুন। এছাড়া মজুরি কমিশনের ৪ বছরের এরিয়ার জন্য প্রয়োজন হবে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। এই টাকা কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বিজেএমসি ও পাটকল নেতারা।

 

বিজেএমসি কর্মকর্তারা জানান, গড়ে প্রতিবছর ৯টি পাটকলে লোকসান হচ্ছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। তখন লোকসানের পরিমাণ আরও বাড়বে।

 

কয়েকটি জুট মিলের মালিক পক্ষের সাথে কথা বললে তারা জানান,মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন হলে শ্রমিকদের মজুরি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তখন নিয়মিত মজুরি পরিশোধ করা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ উৎপাদিত পণ্যের তো আর মূল্য বাড়ছে না। এছাড়া অন্য কোনো আয়ও বাড়ছে না।

স্টার জুট মিলের প্রকল্প প্রধান শাওন মাহমুদ জানান, তারা মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করতে গেলে আর কত টাকা প্রয়োজন হবে তা ১৭ মে’র মধ্যে বিজেএমসিকে জানাতে হবে।

 তিনি বলেন, উৎপাদিত পণ্যের যদি মূল্য না বাড়ে  আর সরকার যদি ভর্তুকি না দেয় তাহলে সময়মতো শ্রমিকদের মজুরি দিতে সমস্যা হতে পারে।

 

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক মোঃ মুরাদ হোসেন বলেন, পাটকলে লোকসান হয় ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে, শ্রমিকদের কারণে নয়। বিজেএমসিকে বিদেশে নতুন নতুন ক্রেতা খুঁজে বের করতে হবে। মজুরি কমিশন তাদের দাবি নয়, বরং তাদের অধিকার। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে বিসিআইসি ও বিটিএমসিসহ সরকারের ৪টি করপোরেশনের শ্রমিকদের পে-কমিশন কার্যকর হয়েছে। একই সময়ে পাটকল শ্রমিকদের মজুরি কমিশন কার্যকর করার কথা থাকলেও ৪ বছর পেরিয়ে গেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বলেন, পাটকলগুলো পাটের ভরা মৌসুমে কাঁচা পাট কেনে না। মৌসুমে প্রতি মণ পাটের মূল্য থাকে ১৪/১৫শ’ টাকা। কিন্তু সেই পাট পরে কেনা হয় চড়া দামে, মণ প্রতি ২ হাজার ৮শ’ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায়। পাটকলে লোকসানের এটি প্রধান কারণ। এছাড়া পাটকলগুলোর যন্ত্রপাতি ষাটের দশকের, তাই কার্যক্ষমতা কমে গেছে। সে কারণে ঠিকমতো উৎপাদন হয় না, যন্ত্রপাতি দ্রুত আধুনিকায়ন প্রয়োজন। 

 

এ ব্যাপারে বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ৯টি পাটকলে শ্রমিকদের মজুরি ফিক্সেশন হলে জানা যাবে প্রতি সপ্তাহে নতুন করে কত টাকা প্রয়োজন হবে। এবং বিষয়টি বিজেএমসির প্রধান কার্যালয়কে দ্রুত জানানো হবে।

 

 

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ