নিরব ব্যালট বিপ্লবের দিকে সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় ৪৮ ঘণ্টায় গ্রেফতার ১০৩

প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১১:১৩:০৪ || পরিবর্তিত: ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১১:১৩:০৪

সাতক্ষীরায় ৪৮ ঘণ্টায় গ্রেফতার ১০৩

আসাদ, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় গণবিষ্ফোরণ ঠেকাতে গণ গ্রেফতার শুরু করেছে পুলিশ। গত ৪৮ ঘণ্টায় বিএনপি জামায়াতের সভাপতি সম্পাদকসহ ১০৩ জনকে আটক করা হয়েছে। শতাধীক স্থান থেকে ধানের শীষের পোষ্টার তুলে ফেলা হয়েছে।

গত তিনদিকে জেলাতে ধানের শীষের আটটি প্রচার মাইক ভাংচুর করা হয়েছে। ধানের শীষের নির্বাচনি প্রচারের চেষ্টা কালে কলারোয়া ও সাতক্ষীরা সদর থেকে আটক জনকে আটক করে নাশকতার চেষ্টার দায়ের অস্ত্র ও বিষ্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। যারা ধানের শীষের পোষ্টার ঝুলানোর কাজ করছে তাদেরকে তালিকা করে রাতে আটক করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ধানের শীষের পক্ষে যারা কাজ করবে তাদেরকে প্রতিহত করার ডাক দিয়েছে সদর ও শ্যামনগর আসনের নৌকার মাঝিরা। ফলে এখানো পর্যন্ত জেলার কোথায় ধানের শীষের নির্বাচনি প্রচার দেখা মিলছে না। যারা ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করছে তারা বলছে কোথাও তাদের দাড়াতে দেয়া হচ্ছে না।

নির্বাচনি কাজ করলেই ধানের শীষের নেতা-কর্মীদের সরকার দলীয় সংগঠনের সন্ত্রাসীরা আটক করে মারপিট দিয়ে পুলিশের কাছে তুলে দিচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশ মার মুখি অবস্থানে রয়েছে বলে দাবী বিএনপি নেতাদের। আর পুলিশ বলছে তারা নাশকতা কারীদের গ্রেফতার করছে। বৃহষ্পতিবার দিনভর সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন শ্রেণী পেষার মানুষের সাথে কথা হয়।

বেশির ভাগ মানুষ স্থানীয় এমপি ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি নাখোশ। তারা বলছে এলাকাতে ধানের শীষের প্রচার না করতে দিলেও ভোটের দিনে মানুষ নিরব বিপ্লব করবে। জেলাতে ধানের শীষের প্রচার চোখে না পড়লেও বাস্তবতা ভিন্ন বলে দাবী করছে দলটির নেতাকর্মীরা। সাধারণ ভোটারদের দাবী সাতক্ষীরাতে ধানের শীষের পক্ষে নীরব বিপ্লব হতে পারে।

সদরের সরকার সমর্থিত এক জন প্রতিনিধির সাথে কথা হয়। তিনি জানান, নৌকার পক্ষে কাজ করতে সরকার দলীয় এমপির পক্ষে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের ব্যাপক চাপ দেয়া হচ্ছে। এমনকি নৌকার পক্ষে কাজ না করলে আগামীতে দেখে নেয়ার হুমকী দেয়া হচ্ছে।

তার দাবী সদর এমপির পক্ষ্যে এলাকাতে নৌকার পক্ষে ভোট চাইলে ভোটাররা বিরুপ মন্তব্য করছে। এছাড়া পুলিশের বাড়া বাড়ির কারণে এলাকাতে সরকারের জনপ্রিয়তা অনেক খানি হ্রাস পাচ্ছে। নীরপেক্ষ ভোট হলে তারা এর জবাব দিবে। শহরের মিয়াসাহেবের ডাঙ্গা এলাকায় অনেকটা জামায়াত অধ্যুসিত। যে কারণে ধানের শীষের পোষ্টার বিভিন্ন সড়কে ঝুলতে দেখা যাচ্ছে। এতে করে আ’লীগ ও পুলিশের পক্ষ থেকে পোষ্টার খুলে ফেলতে চাপ দিচ্ছে। বললেন কামাল মাষ্টার।

তার দাবী এ ভাবে চাপ দিয়ে পোষ্টার খুললেও মানুষের মণ থেকে তাদের প্ছন্দের প্রাথীর ভালবাসা মুছে ফেলতে পারবে না। ভোররা এলাকার সবজি বিক্রেতা এলাহি বক্স জানন,বাজারে সবজির দাম নেই। ঝালের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি। ফসল উৎপাদনে যে খরচ হয়েছে বিক্রি করে তাতে অনেক লোকশান হবে।

ফলে আগামি নির্বাচনে কৃষক ও সবজি উৎপাদকরা তাদের ক্ষতি উত্তরণে পচ্ছন্দের প্রার্থীকে বাছায় করবে। এদিকে আশাশুনি বিএনপির সেক্রেটারি রুহুল কুদ্দুসসহ ৪৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পযন্ত সাতক্ষীরা জেলার আটটি থানার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া মঙ্গলবার সন্ধা থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলাতে ৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সবমিলে গত দুদিনে গ্রেফতার করা হয়েছে ১০৩ জনকে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর থানা থেকে ২৫ জন,কলারোয়া থানা থেকে ১৩ জন,তালা থানা থেকে ১২ জন,কালিগঞ্জ থানা থেকে ১৪ জন,শ্যামনগর থানা থেকে ১০ জন,আশাশুনি থানা থেকে ১৭ জন, দেবহাটা থানা থেকে ৫ জন ও পাটকেলঘাটা থানা থেকে ৭ জনকে আটক হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর,কলারোয়া,আশাশুনি ও শ্যামনগরে ধানের শীষের ৮টি প্রচার মাইক ভাংচুর করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে একটি,কলারোয়াতে ২টি, আশাশুনিতে ২টি ও শ্যামনগরে ৩টি প্রচার মাইক ভাংচুর করা হয়েছে বলে স্থানীয় ধানের শীষের প্রাথীরা জানিয়েছে। এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর মুফতি রবিউল বাশার জানান, তাদের প্রচার মাইক-ইজিবাইক ভাংচুর, ইজিবাইকের চালককে মারপিট এবং পোস্টার ছিড়ে আগুন দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। কোথাও তাদের সভা সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। পুলিশ দ্বি মুখি আচারণ করছে। জেলা রিটার্নিং অফিসারকে জানানোর পরও তারা প্রতিকার পাচ্ছে না ।

সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম হাবিব অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তালা কলারোয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশের সহযোগীতায় ধানের শীষের পোষ্টা তুলে ফেলছে। প্রচার মাইকে ভাংচুর চালাচ্ছে। আচারণ বিধি লঙ্গনের অভিযোগ করেছেন সাতক্ষীরা-৩ আসনের ২০ দলীয় জোট প্রার্থী ডা: শহিদুল আলম। তার দাবী উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তার নির্বাচনি নেতাকর্মীদের পুলিশ অব্যাহত ভাবে আটক করছে। প্রচার মাইক ভাংচুর করছে। নেতা কর্মীদের বার বার হুমকী দেয়া হচ্ছে। কোথাও কোথও বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের মারপিট করা হচ্ছে।

শ্যামনগর ৪ আসনের ২০ দলীয় জোটের জামায়াত মনোনিত প্রার্থী গাজী নজরুল ইসলাম জানান,লেভেল প্লেয়িং তো দূরের কথা তারা নির্বাচনি মাঠে নামতে পারছে না। পুলিশ ও সরকার দলীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকমীরা তাদের উপর হামলা করছে। তিন জন একত্র হলে পুলিশ নির্বাচন বানচালে নাশকতার গন্ধ পাচ্ছে। এমনকি কোথাও কোথাও অস্ত্র ও বিষ্ফোরক আইনে তাদের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিচ্ছে পুলিশ। এদিকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা এসএম মোস্তফা কামাল জানান, নির্বাচনে আচারণ বিধি লঙ্ঘন হলে তারা কঠোর ব্যবস্থা নেবে। কেউ অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

               

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ