দক্ষিণ লেবাননে ফসফরাস বোমা হামলার কারণ জানালো ইসরায়েল

প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ১১:৪৬:২৩

দক্ষিণ লেবাননে ফসফরাস বোমা হামলার কারণ জানালো ইসরায়েল

অনলাইন ডেস্ক: গত প্রায় ছয় মাস ধরে ইসরায়েল দক্ষিণ লেবানন সীমান্তের উপর দিয়ে সাদা ফসফরাস বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। বিষাক্ত এই গ্যাস চোখ ও ফুসফুসের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি চামড়া মারাত্মকভাবে পুড়িয়ে দিতে পারে, আর সে কারণে আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা এর ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।

কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী বলছে গাজা ও লেবাননের 'সশস্ত্র জঙ্গীদের' বিরুদ্ধে তাদের এই অস্ত্রের ব্যবহার পুরোপুরি বৈধ। যদিও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে এর ব্যবহারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত হওয়া দরকার।

যুক্তরাষ্ট্র বলছে ইসরায়েল ওই দুই দেশে আসলেই সাদা ফসফরাস ব্যবহার করেছে কি না তা তদন্ত করে দেখবে।

এখন বেসামরিক মানুষের অবস্থানের খুব কাছে এ ধরনের যুদ্ধ উপকরণ ব্যবহার করে ইসরায়েল কি আইন ভঙ্গ করছে? নাকি যুদ্ধের সময় তাদের এটি ব্যবহারের অধিকার আছে?

“এটি আসে সাদা মেঘের মতো। কিন্তু মাটিতে পড়া মাত্র এটি পাউডার হয়ে যায়।”

আলী আহমেদ আবু সামরা, দক্ষিণ লেবাননের ৪৮ বছর বয়সী এই কৃষক বলেন, গত ১৯শে অক্টোবর, ২০২৩ তিনি নিজে সাদা ধোঁয়ার মেঘের মধ্যে পড়ে যান।

“তারা বলে যে এটির গন্ধ রসুনের মতো, কিন্তু এটা আসলে তার চেয়েও খারাপ। গন্ধটা নেয়াই যাচ্ছিল না। সুয়ারেজ লাইনের চেয়েও বাজে।”

আলী একটা সাদা ফসফরাস হামলার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।

ধায়রা গ্রামে সাদা ফসফরাস হামলার বর্ননা দেন আলী

৮১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পুড়তে থাকা সাদা ফসফরাস ভয়ংকর বিষাক্ত এবং দ্রুত আগুন ছড়ায়।

“আমার চোখ থেকে পানি পড়তে শুরু করে,” বলছিলেন ধায়রা গ্রামের আলী, “যদি আমরা তখন ভেজা কাপড়ে নাক ও মুখ না চেপে ধরতাম তাহলে হয়তো আজ বেঁচেই থাকতাম না।”

ইরানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও হামাসের মিত্র হিসেবে হেজবুল্লাহ কোন রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সামরিক বাহিনী না হয়েও পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী বাহিনী, যাদের প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে।

হেজবুল্লাহ যোদ্ধাদের প্রায় প্রতিদিনের রকেট ও ড্রোন হামলা ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) মোকাবেলা করেছে বিমান হামলা এবং ভারী ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে। যার মধ্যে সাদা ফসফরাস হামলাও আছে।

যখন সাদা ফরফরাস বোমা থেকে বের হয়, তখন এটি অক্সিজেনের সাথে মিশে একটি ভারী ধোঁয়ার আস্তরণ তৈরি করে।

এটা মাটিতে লড়তে থাকা সৈন্যদের জন্য একরকম তাৎক্ষণিক আড়াল তৈরি করে, যাতে শত্রুরা তাদের অবস্থান বুঝতে না পারে।

কিন্তু জাতিসংঘ যখন বলে যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী “কৌশলগতভাবে এর যথেচ্ছাচার করেছে” তখন ২০১৩ সালে আইডিএফ জানায় তারা “খুব শিগগিরই এটি সরিয়ে নেবে”।

হেজবুল্লাহ যোদ্ধারা সাধারণত দুই বা চারজনের ছোট ছোট গ্রুপে চলাফেরা করে। জঙ্গলকে তারা আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে এবং তারা সীমান্তের উপর দিয়ে প্রতিনিয়ত অন্য প্রান্তে থাকা ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্য করে মিসাইল ও রকেট হামলা চালায়। আর সেকারণেই হয়তো ইসরায়েলিদের জন্য এই ধোঁয়া তাদের মোকাবেলার একটি মাধ্যম।

গত ১০ থেকে ১৯শে অক্টোবরের মধ্যে যেদিন আলীর গ্রামে হামলা চালানো হয়, তিনি জানান ঐ সময় কোন সশস্ত্র গোষ্ঠীর অবস্থান তাদের ওখানে ছিল না।

“যদি হেজবুল্লাহ সেখানে থাকতো তাহলে গ্রামের লোকজন তাদের চলে যেতে বলতো কারণ তারা মরতে চায় না,” আলী বলেন, “সেখানে কোন হেজবুল্লাহর অস্তিত্ব ছিল না।”

“আপনি চিন্তা করুন যে এই পদার্থ আপনার কাপড় থেকে সরানোর চেষ্টা করছেন যখন এটি জ্বলছে এবং আপনার চামড়ার সাথে লেগে রয়েছে।”

তিনি জানান এমনকি ৩০ দিন পরেও এর ভেতরে সাদা ফসফরাসের অস্তিত্ব মেলে।

এই হামলার পর প্রথম সাড়া দেয়া স্বেচ্ছাসেবী খালেদ কারিতাম ইসরায়েলকে দায়ী করে বলেন যে তারা এটা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার করছে যাতে সীমান্ত এলাকা থেকে লোকজন অন্যত্র সরে যায়।

খালেদের এই অভিযোগের জবাবে আইডিএফ জানায়, “শেল ফেলে ধোঁয়া তৈরির মাধ্যমে লেবাননের সীমান্ত থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে দেয়ার সবরকম দাবি আইডিএফ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করছে।”

সাদা ফসফরাসকে কেমিক্যাল অস্ত্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না এবং এটাকে আগ্নেয়াস্ত্র বলা হবে কি না, তা নিয়েও বিতর্ক আছে।

কিন্তু এ বিষয়ে ইসারয়েলসহ বেশিরভাগ রাষ্ট্র সম্মত হয় যে সাদা ফসফরাস দিয়ে শুধুমাত্র ধোঁয়া তৈরি করা হয়, বিস্ফোরণ করা হয় না (এমনকি যদি দুর্ঘটনাবশত বিস্ফোরণ হয়) তাহলে এই আইনটি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

তবে এটা নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়্যাচের আপত্তি আছে। তারা বলছে এই সিসিডব্লিউ-তে অনেকগুলো ফাঁকফোঁকর আছে।

এখন ইসরায়েল এই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন (আইএইচএল) ভেঙেছে সেটা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে। স্বাধীন আইনজীবী ও সামরিক বিশেষজ্ঞ বিল বুথবি মনে করেন, একটা বড় সমস্যা হল “প্রমাণ নিয়ে বিতর্ক”।

“ইসরায়েলিদের দাবি তাদের উদ্দেশ্য হল শুধু ধোঁয়া তৈরি,” বলেন অধ্যাপক বুথবি।

“গ্রামবাসীদের দাবি সেখানে ধোঁয়া তৈরির কোন দরকারই পড়ে না কারণ সেখানে কোন জঙ্গি গোষ্ঠী নেই। এখন সাদা ফসফরাস ব্যবহারের আসল উদ্দেশ্য কী, সেটা জানতে হলে যারা এটি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তাদের মনে কী চলছে সেটা জানতে হবে।”

বিল বুথবি বলেন, “সমানুপাতিকতা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। যে ক্ষয়ক্ষতি করা হচ্ছে তা যেন প্রত্যাশিত সামরিক লক্ষ্যের চেয়ে বেশি না হয়ে যায়।”

“আমরা বলছি তারা হামলার পূর্বে যে সামরিক সুবিধার আশা করে হামলায় যায়, সেখানে বেসামরিক লোকদের হতাহত ও স্থাপনা ধ্বংসের ঘটনা তাদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি না হয়ে যায়।”

ধায়রাতে তাদের লক্ষ্যবস্তু কী ছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে আইডিএফ বলে, “হামলা বিষয়ে কৌশলগত নির্দেশনা একান্ত গোপনীয় এবং তা কোনভাবেই প্রকাশ করা যাবে না।”


প্রজন্মনিউজ২৪/এএন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ