এক সাংবাদিকের গ্রামপ্রীতি ও জনপদ বদলে ফেলার গল্প

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর, ২০১৭ ০১:৫৬:২২

এক সাংবাদিকের গ্রামপ্রীতি ও জনপদ বদলে ফেলার গল্প

কেরামত উল্লাহ বিপ্লব। ঢাকায় সাংবাদিকতা করছেন প্রায় ২ যুগ। প্রথমে দৈনিক সংবাদপত্র এখন টেলিভিশনে। একসময় তার কর্মক্ষেত্র ছিলো গ্রাম। গ্রাম সাংবাদিক হিসেবেই পথে পথে ঘুরে সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। এখন কাজের আঙ্গিকটা ভিন্ন। আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত। তার বর্তমান কর্মস্থল এটিএন বাংলার হয়ে ঘুরছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশের অভিবাসন বিষয়ক সাংবাদিকতায় অনেকটা অগ্রজ বলা হয় তাকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করলেও গ্রামপ্রীতি কমেনি বিপ্লবের। গ্রামের মানুষের পুরনো সেই আবেগ থেকে তিনি পীরগঞ্জের পিছিয়ে পড়া এক জনপদকে প্রায় বদলে দিয়েছেন। পীরগঞ্জ উপজেলা সদরের প্রজাপাড়ায় তার জন্মস্থান।

তার উদ্যোগে বদলে ফেলা গ্রাম খামার সাদুল্যাপুর। পীরগঞ্জের শানেরহাট ইউনিয়নের একটি গ্রাম। গ্রামটির উপর দিয়ে উপজেলা শহর থেকে ৮ কি.মি দুরে শানেরহাট পর্যন্ত গেছে একটি পাকা সড়ক। বছর কয়েক আগেও নিজেদের বঞ্চিত অবহেলিত মনে করতেন গ্রামবাসীরা। মসজিদ ছিলো না। শুক্রবার জুমআর নামাজ পড়তে যেতে হতো ২ কিলোমিটার দুরে। কবরস্থান নেই। কেউ মারা গেলে তার লাশ নিয়ে দাফনের জন্য ছুটতে হতো অন্য গ্রামে। বিদ্যুত নেই। গ্রামের এতিম শিশুরা ভিক্ষে করে বাড়ি বাড়ি। পড়ালেখার সেই সুযোগ ছিল না। এ সব কয়েক বছর আগের কথা। হ্যা- পিছিয়ে থাকা এই খামার সাদুল্যাপুর গ্রামকেই আবেগ ভালোবাসায় অনেকটা বদলে দিয়েছেন সাংবাদিক কেরামত উল্লাহ বিপ্লব। দুবাই থেকে তার বন্ধু মীর সেলিম উদ্দিনকে অবহেলিত গ্রামটি দেখাতে নিয়ে আসেন। তারপর আরও অনেক বন্ধু-শুভাকঙ্খীও আসে। সবাই মিলে খামার সাদুল্যাপুরে গড়লেন দৃষ্টিনন্দন ‘মসজিদে আবু বকর (রাঃ)’। হলো এতিমখানা, মাদরাসা, মক্তব, কবরস্থানসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। ক্লান্ত পথিকের জন্য সেই এতিমখানার পাশে আছে বিশ্রামাগার। বিদ্যুত সংযোগও এলো।

শুক্রবার সেখানে এলাকার গরীব মানুষদের ভালো মানের খাবার খাওয়ানো হয়। খামার সাদুল্যাপুরের আলহাজ্ব আব্দুল কুদ্দুস মিয়া, আলহাজ্ব মাকসুদার রহমান, আলহাজ¦ আব্দুর রউফ মিয়া, মকবুল হোসেন প্রধান, আব্দুর রউফ মিয়া, সুধা মিয়াসহ অনেকেই জানায়, সাংবাদিক কেরামত উল্লাহ বিপ্লব আমাদের খুবই আপন। তিনি দুই তিন মাস পরপর যখন এ গ্রামে আসেন, তখন রীতিমতো গ্রাম জুড়ে উৎসব হয়। উপজেলা সদর থেকেও অনেকেই সেই গ্রামপ্রীতি উৎসব দেখতে আসেন। এতিমখানা, মাদরাসা ও মসজিদের পরিচালক ইব্রাহীম প্রধান বলেন, বিপ্লব ভাই ২ বছর আগে ১৫ শতক জমি ক্রয় করে কবরস্থান করে দিয়েছেন। সেখানে ১০ জনের কবর দেয়া হয়েছে। তার কারণে দিনদিন বদলে যাচ্ছে গ্রামটি। প্রতি বছরের ১৩ ও ১৪ চৈত্র্য ওরস মাহফিল হয়। কেরামত উল্লাহ বিপ্লব জানান, ছোটবেলাটা গ্রামেই কেটেছে। আমাদের নিজেদের সংসারেও অভাব ছিলো। বাবা ব্যাংকে চাকরি করতেন। আমি নিজেও বাইসাইকেলে বাবার সাথে ১৪/১৫ কিলোমিটার দুরে বাজার করতে যেতাম। এখনো সেইসব গ্রাম ভালো লাগে। গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে মনে হয় আমি তো আমার পরিবারের জন্যই করছি। খামার সাদুল্যাপুরের মানুষরাতো আরও সরল। সেখানে নিয়মিতই যাই, অনেকের সাথে কথা বলি। গ্রামটিতে একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স করার চেষ্টা করছি। যেখানে গ্রামের মেয়েরা প্রশিক্ষন পাবে। শিশু-বৃদ্ধরা বিনামুল্যে চিকিৎসা পাবে। থাকবে খামার, কিছু কুটির শিল্পের প্রকল্প। একদিন এভাবেই বদলে যাবে পীরগঞ্জের পিছিয়ে থাকা এই গ্রাম। বদলে যাবে গ্রামের অভাবী মানুষের জীবন জীবিকাও। তিনি আরও বলেন, আমরা যে যেখানেই থাকি নিজেদের অবস্থান থেকে সামর্থ্যমত যদি নিজের এলাকার জন্য কিছু করি তাহলে দেশের হাজারো গ্রাম, লাখো মানুষের উপকার হবে। কোন দয়া বা দান নয়। এ হলো আমাদের প্রত্যেকেরই সামাজিক দায়িত্ব।

 

 

এ সম্পর্কিত খবর

তীব্র গরমে ঢাকার বাতাসের কী খবর

হাবিপ্রবি সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাঁচবে হাজারও কোটি টাকার সম্পদ

সরদার পাড়া দারুল কোরআন মডেল মাদ্রাসার পরিক্ষার ফল প্রকাশ

৭ দাবিতে কুবি’র তিন দপ্তরে শিক্ষক সমিতির তালা

চলতি বছর পবিত্র হজ্জ পালনের অনুমতি দেওয়া শুরু করেছে সৌদি আরব

ইসরায়েল থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবিতে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চুয়েট, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ

রোববার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ

বশেমুরবিপ্রবিতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ