নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের

ধর্ষক ও যৌন নিপীড়কদের মদদদাতা শুভ্র

প্রকাশিত: ১২ মার্চ, ২০২৪ ০৩:৩০:৫৬ || পরিবর্তিত: ১২ মার্চ, ২০২৪ ০৩:৩০:৫৬

ধর্ষক ও যৌন নিপীড়কদের মদদদাতা শুভ্র

নিজস্ব প্রতিনিধি: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করার মত অভিযোগ। ধর্ষণের দায়ে জেল খেটেছেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মিনহাজ উদ্দিন, যৌন হয়রানির অভিযোগে চাকরিচ্যুত হয়েছেন নাট্যকলা বিভাগের সাবেক শিক্ষক রুহুল আমিন, নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানির অভিযোগের পরে বিদেশে পলাতক রয়েছেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক হিল্লোল ফৌজদার। সর্বশেষ নিজ বিভাগের নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক সাজন সাহার বিরুদ্ধে। 

তবে এসব ঘটনার প্রত্যেকটিতেই ধর্ষক এবং যৌন নিপীড়নকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ঘটনার মোড় ঘোরানোর চেষ্টা করেছেন এক শিক্ষক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের বর্তমান প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র। 

নানা সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনা করে জানা যায়, উপরোক্ত ৪ টি ঘটনার প্রত্যেকটিতেই রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র সমর্থন দিয়েছিলেন অভিযুক্তদের। পক্ষে অবস্থান নিয়ে করেছেন মানববন্ধন, শিক্ষক নেতাদের বাগিয়ে চাপ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও। 

জানা যায়, ২০১৭ সালের মে মাসে এক ছাত্রীর দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর অ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষক মো. মিনহাজ উদ্দিনকে কারাগারে যেতে হয়। পরে কারা ভোগকারী এই শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু তৎকালীন শিক্ষক সমিতির নেতা শফিকুল ইসলামকে সাথে নিয়ে রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র তৎকালীন প্রশাসনকে চাপে ফেলে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করাতে বাধ্য করেন। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান এই চাপ সামলাতে না পেরে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। এছাড়াও পরে ধর্ষণের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীকে নানাভাবে হুমকি দিয়েছেন রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র ও মিনহাজ।

এরপর ২০১৮ সালের ১৮ জুলাই সহকর্মী তিন নারী শিক্ষককে যৌন হয়রানির অভিযোগে নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার হন। এই ঘটনাতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে যৌন নিপীড়ক রুহুল আমিনের পক্ষে মানববন্ধন করেন রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র। তবে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক তার পক্ষে দাঁড়াননি। রেজুয়ান শুভ্র স্থানীয় কিছু মানুষ ভাড়া করে নিয়ে এসে এই মানববন্ধনের আয়োজন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এ যাত্রায় যৌন নিপীড়ক রুহুল আমিনকে রক্ষা করতে পারেননি তিনি। 

বাদ যায়নি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক হিল্লোল ফৌজদার৷ তার বিরুদ্ধেও যৌন হয়রানির নানা অভিযোগ রয়েছে। সবশেষ গত বছরের শেষদিকে তার সঙ্গে তার স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদকে ঘিরে সামনে আসে নতুন একটি ঘটনা। তার বিভাগেরই 2020-21 শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রীকে ইউরোপে স্টুডেন্ট ভিসার প্রলোভন দেখিয়ে ছলচাতুরী করেন এই শিক্ষক। এরপর সেই ছাত্রীকে নিয়ে চীনে পলাতক রয়েছেন তিনি। সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেন তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করেছেন বর্তমান বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র। এ ঘটনায় মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ‘ম্যানেজ’ করার অভিযোগও রয়েছে শুভ্রের বিরুদ্ধে। 

এবছরের ২ মার্চ নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দা সানজানা আহসান ছোঁয়া যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন তার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে। এদিন রাতে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার বিস্তারিত লিখে একটি পোস্ট করেন। এরপর ৪ মার্চ সেই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর সাজন সাহা ও রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রের স্থায়ী বহিষ্কার চেয়ে আবেদন করেন। তিনি তার অভিযোগে বলেন, ‘সাজন স্যার আমাকে নানাভাবে যৌন হয়রানি করেছেন গত ৫ বছর ধরে। আর শুভ্র স্যারের কাছে এই ঘটনা জানাতে গেলে তিনি আমাকে সহযোগিতা না করে উলটো ভিন্ন কুপ্রস্তাব দেন। মূলত সাজন সাহাকে রক্ষা করতেই তিনি এটি করেন। এছাড়াও যখন আমি অভিযোগ দিয়েছি, তখন তিনি আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়েছেন।’ এই ঘটনার তদন্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অভিযোগ রয়েছে, এই ঘটনার প্রতিবাদে চলমান আন্দোলনে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের অনেককেই হুমকি দিয়েছেন বিভাগীয় প্রধান শুভ্র।

সর্বশেষ, গত ৭ মার্চ দুপুরে বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভাগে তালা মারেন, বিভাগের নামফলকে কালো কাপড় ঝুলিয়ে দেন, সাজন সাহা ও রেজুয়ান শুভ্রের নামফলক ভেঙে তাতে আগুণ জ্বালিয়ে দেন। সর্বশেষ শিক্ষার্থীরা রেজুয়ান শুভ্রকে একটি কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে। শেষমেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের দুয়োধ্বনিতে বিভাগ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।


প্রজন্মনিউজ২৪/এইচআরসি

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ