এত পানির মাঝেও ‘পানির কষ্ট মানুষের’

প্রকাশিত: ২২ মার্চ, ২০২৩ ০৫:৪৬:২১

এত পানির মাঝেও ‘পানির কষ্ট মানুষের’

 

অনলাইন ডেস্ক: উপকূলে পানির অভাব নেই, তবুও চারদিকে পানির জন্য হাহাকার। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে খুলনা জেলার বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকার পানি ও জমিতে বাড়ছে লবণাক্ততা। গ্রীষ্মের শুরুতে ওইসব এলাকায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট।

খাবার পানি সংগ্রহের জন্য নারী ও শিশুদের ছুটতে হচ্ছে গ্রাম থেকে গ্রাম, মাইলের পর মাইল। সরকারি প্রকল্পে তিনটি উপজেলায় সীমিত কিছু পরিবারে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও পুকুরের পানি শোধন করে সরবরাহ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খুলনার দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় সারা বছরই থাকে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। গ্রীষ্মের শুরুতে তা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। লবণাক্ততার কারণে এ অঞ্চলের অধিকাংশ নলকূপের পানি পানের অযোগ্য। সুপেয় পানি না পেয়ে লবণ পানি পানে নানা রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। এতে উন্মুক্ত জলাধারই খাবার পানির অন্যতম উৎস। কয়েক গ্রাম পার হয়ে কোন এক গ্রামে মিলতে পারে নলকূপের পানযোগ্য পানি। মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে পানি সংগ্রহ করেন মূলত: নারীরাই। এতে শারীরিক ও মানসিক কষ্টের পাশাপাশি প্রতিদিন ব্যয় করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

তিলডাঙা ইউনিয়নের বাসিন্দা নীরাবতী মণ্ডল বলেন, শারীরিকভাবে আমি অসুস্থ, আমার কিডনিতে সমস্যা। এর মধ্যেই আমাকে কলস নিয়ে এক ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে জল নিতে আসতে হয়, এত কষ্ট আর সইতে পারি না। বাড়িতে যদি সরকারের পক্ষ থেকে ট্যাংক দিয়ে বৃষ্টির জল ধরার ব্যবস্থা করা হতো, তাহলো হয়তো কিছুটা উপকার হতো।

একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা রিপা রায় বলেন, অনেক দূর থেকে জল কিনে খায় অনেকে, আমাদের কি আর টাকা আছে? যাদের টাকা আছে তারা জল কিনে খেতে পারে। ফলে বাধ্য হয়ে লবণ জল খেতে হয়। এতে ডায়রিয়া, চর্ম রোগ হচ্ছে আমাদের।

লবণাক্ত পানির সমস্যা সমাধানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কারিগরি সহায়তায় নারীদের জয়বায়ু পরিবর্তনজনিত লবণাক্ততা মোকাবিলায় অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে, পুকুরের পানি বিশুদ্ধ করে সরবরাহ করছে। তাতে উপকূলীয় এলাকার মাত্র ১০-১৫ শতাংশ মানুষ উপকার পাচ্ছেন। তবে এর পরিধি আরও বাড়ানো সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শিখা রানী দাশ বলেন, আমরা এই স্কুল থেকে জল কিনে খাই। এই গ্রামের ২৫টি পরিবার এখান থেকে জল কিনে খেতে পারে, এতে বহুদিনের কষ্ট কিছুটা কমেছে। কিন্তু গ্রামের সবার জন্য এই ব্যবস্থা করা উচিত।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির প্রকল্প সমন্বয়কারী মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন বলেন, উপকূলীয় এলাকায় পানির সমস্যা সমাধান অনেক বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। আমরা সীমিত আকারে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। তবে সরকারি উদ্যোগেই পরিধি বাড়াতে হবে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পানির সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন বলে স্বীকার করছেন। এজন্য সরকারের বড় উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার দাবি তাদের। দাকোপ উপজেলা চেয়ারম্যান মনসুর আলী খান বলেন, আমরা বারবার চেষ্টা করেও দাকোপে টিউবওয়েল থেকে পানযোগ্য পানি পেতে ব্যর্থ হয়েছি। এ এলাকার এখন এটাই সব থেকে বড় সমস্যা। সমস্যা নিরসনে সরকারের আরও বড় প্রকল্প হাতে নিতে হবে। না হলে এ এলাকার মানুষের লবণ পানিতে আরও বেশী ক্ষতি হয়ে যাবে।

খুলনার তিনটি উপকূলীয় উপজেলায় ২৬ ইউনিয়নে ২৪১টি ওয়ার্ডে চার লাখ মানুষের বাস। এর মধ্যে সরকারি প্রকল্পে সুপেয় পানি পাচ্ছেন ৫০টি ওয়ার্ডের অর্ধেক পরিবার।


প্রজন্মনিউজ২৪/জিসান
 
 

এ সম্পর্কিত খবর

সিংড়ায় অগ্নিকান্ডে পুড়লো ১২ স্বর্ণের দোকান, অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

প্রচণ্ড গরমে দিনের পরিবর্তে রাতে কাজ করবে ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা

আগামীকাল রাজধানীর যেসব এলাকায় ১২ ঘন্টা গ্যাস থাকবে না

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে সমস্যার সমাধান হবে না: আব্দুস সালাম

২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি কমেছে ১৫.৪৯ শতাংশ

এলাকার রেজান আলীর প্রতারণার ফাঁদে ফারুক মিয়া

চুয়াডাঙ্গায় আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৭ ডিগ্রি

এক মিনিটেই তাদের বিসিএসের স্বপ্নভঙ্গ

গাজীপুরে চিরকুট লিখে স্বামী-স্ত্র‌ীর আত্নহত্যা

কাচিয়ায় ৭নং ওয়ার্ড উপনির্বাচনে প্রার্থীর বিরুদ্ধে জ্বিন প্রতারনা মামলার অনুসন্ধানশ্লিপ পাঠিয়েছে সিআইডি

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ