প্রসবের পর থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ কেন হয়? 

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর, ২০২১ ০৭:৩৩:১৩

প্রসবের পর থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ কেন হয়? 

অন্তঃসত্ত্বা অবস্থা ও সন্তান জন্ম দেওয়ার পর নারীদের শরীরে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দেয়।  শরীরবৃত্তীয় এসব পরিবর্তনের মধ্যে সন্তান প্রসবের পর থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যাওয়াও একটি।  এটি একটি জটিল সমস্যা। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে পুরোপুরি মুক্ত হওয়া যায়। 


প্রসূতির থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহের জন্য মায়েদের আগে থেকে থাইরয়েড হিস্ট্রি থাকতে হবে এমন নয়।  গর্ভকালের আগে বা গর্ভকালীন যাদের থাইরয়েড ফাংশন ভালো ছিল, তারাও এতে আক্রান্ত হতে পারেন। 
এ সমস্যায় আক্রান্ত অধিকাংশ নারীর থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে; তবে কারও কারও এ সমস্যা আজীবন থেকে যায়।
প্রসবপরবর্তী সময়ে মায়ের থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহের কারণ, লক্ষণ ও করণীয় নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের  সহকারী অধ্যাপক এবং হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাদা সেলিম। 

লক্ষণ

লক্ষণগুলো দুই পর্যায়ের হতে পারে; প্রথম পর্যায়ে থাইরয়েড হরমোন অতিরিক্ত হলে যে লক্ষণগুলো দেখা যায়, অনেকটা সে রকম লক্ষণই দেখা দেয়। যেমন— বুক ধড়ফড় করা, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, হার্ট ফেইলিউর, এনজাইনা বা বুকব্যথা, ঘন ঘন পায়খানা হওয়া, খাওয়ার অরুচি, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, অবসন্নতা বা নার্ভাসনেস, উত্তেজনা, আবেগপ্রবণতা, সাইকোসিস বা মানসিক বিষাদগ্রস্ততা; হাত-পা কাঁপা, নিদ্রাহীনতা, ঘাম বেড়ে যাওয়া, চুলকানি, হাতের তালু লাল হওয়া, গরম সহ্য করতে না পারা।
এ লক্ষণগুলো প্রসবের পরের এক থেকে চার মাসের মধ্যেই সাধারণত দেখা দেয়। পরবর্তী পর্যায়ের লক্ষণগুলো হলো— শারীরিক দুর্বলতা, শীত সহ্য করতে না পারা, ত্বক শুকনো লাগা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অবসন্নতা ও ওজন বৃদ্ধি পাওয়া। এ লক্ষণগুলো পরবর্তী চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে শুরু হয়ে ১২ মাস পর্যন্ত থাকতে পারে।

কারণ

প্রসবপরবর্তী থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহের সঠিক কারণটি এখনও পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি। তবে এদের প্রায় সবারই রক্তে এন্টিথাইরয়েড এন্টিবডি থাকে, যা এ ঘটনাটি ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন

যাদের অন্য কোনো অটোইমিউন রোগ আছে, তাদের প্রসবপরবর্তী থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এ তালিকায় টাইপ১ ডায়াবেটিস, প্রসবপরবর্তী থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহের আগের ইতিহাস পরিবারের আর কারও থাইরয়েড গ্রন্থির রোগের ইতিহাস ইত্যাদি। প্রসবপরবর্তী বিষণ্ণতার সঙ্গে এর একটি সংযোগ থাকতে পারে বলেও ধারণা করা হয়।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

অনেক সময় রোগ শনাক্ত করতে সময় লেগে যায়। কেননা এ লক্ষণ নিয়ে রোগী হয়তো হরমোন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে দেরি করে ফেলেছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে থাইরয়েড ও হরমোনের পরীক্ষা (TSH, FT4) গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে এন্টিথাইরয়েড এন্টিবডি, থাইরয়েড গ্রন্থির আল্ট্রাসনোগ্রাম দরকার হতে পারে। খুব কমক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থির রেডিও আয়োডিন আপটেক টেস্ট দরকার হতে পারে।

প্রতিরোধ

প্রসবপরবর্তী থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ সবসময় প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে তা নয়। তবে যাদের ঝুঁকি বেশি তাদের সতর্ক হয়ে যেতে হবে। ওপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলেই দ্রুত হরমোন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।

প্রজন্ম/এসকে

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ