সোলাইমানি হত্যার সাতকাহন, ইরান বনাম আমেরিকার ভবিষ্যৎ

প্রকাশিত: ০৫ জানুয়ারী, ২০২০ ০৩:১৭:০৫ || পরিবর্তিত: ০৫ জানুয়ারী, ২০২০ ০৩:১৭:০৫

সোলাইমানি হত্যার সাতকাহন, ইরান বনাম আমেরিকার ভবিষ্যৎ

ইতিকথা

মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের অন্যতম শীর্ষ সেনাকর্তা কাসেম সোলেমানি। খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশেই শুক্রবার ভোররাতে ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে এই হামলা চালানো হয়। সোলেমানি ছাড়া আরও ছ’জন এই হামলায় নিহত হয়েছেন। তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করে ইরান হুমকি দিয়েছে, এর ফল ভুগতে হবে আমেরিকাকে। পেন্টাগনের তরফ থেকেও স্বীকার করে নেওয়া হয়, ‘জঙ্গি’ সোলেমানিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশেই হত্যা করা হয়েছে।

কে এই সোলেমানি

আমেরিকা সোলেমানিকে ‘জঙ্গি’ আখ্যা দিলেও আদতে তিনি ইরানি সেনাবাহিনীর অন্যতম শীর্ষকর্তা এবং পশ্চিম এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী ব্যক্তি ছিলেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ও সে দেশের ধর্মগুরু আলি খামেনেইয়ের পরেই তাঁর স্থান ছিল। ১৯৯৮ সাল থেকে তিনি কাডস বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।

ভারতে নাশকতার ছকে কি ইরানের অন্যতম শীর্ষ সেনাকর্তা কাসেম সোলেমানির মদত ছিল? গতকাল মার্কিন ড্রোন হানায় নিহত ইরানের কাডস বাহিনীর শীর্ষকর্তাকে নিয়ে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংবাদমাধ্যমে তিনি দাবি করেছেন, ইরানে বসেই কাসেম সোলেমানি দিল্লি ও লন্ডনে হামলায় মদত দিয়েছিলেন।

কেন এই হত্যাকাণ্ড

বিশ্বের দরবারে চৌকস সমরবিদ জেনারেল কাসেম সোলেমানি। গত অক্টোবর মাসে পেন্টাগনের নিশানা ছিল আইএস জঙ্গি প্রধান আবু বকর আল বাগদাদি। নতুন বছরের শুরুতেই টার্গেট ইরানের অন্যতম শীর্ষকর্তা কাসেম সোলেমানি। দুটি ক্ষেত্রেই ‘সাফল্য’ মিলেছে।

বলা হয়ে থাকে, ইরানের বিশেষ গোপন অভিযানিক দল কুদস ফোর্স। ‘অপ্রচলিত যুদ্ধের’ জন্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে এটি। ইতোমধ্যে এর সামরিক অবদান ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে। ইরানের বৈশ্বিক উত্থানের পেছনেও এই ফোর্সের কাজ অপ্রতিরোধ্য। যা কি-না প্রতিষ্ঠা করে আবার সুচারু পরিচালনা করছিলেন কাসেম সোলেমানি। আর তিনি এই বাহিনীর পুরো কাজের জন্য জবাবদিহি করতেন শুধু দেশের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে।

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান যে সামরিক প্রভাব তৈরি করতে চাইছ, তার মূল কারিগর এই কুদস ফোর্স। অর্থাৎ ইরাকে এক ধরনের প্রভাব তৈরি করা, সিরিয়াতে প্রভাব তৈরি করা, লেবাননে প্রভাব তৈরি করা, বিভিন্ন জায়গায়, এমনকি ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে ইরানের যে যোগাযোগ আছে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, সেখানেও সোলেমানির একটা বড় ধরনের ভূমিকা ছিল বলে পশ্চিমারা ধারণা করে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, ইরানের পররাষ্ট্রনীতি কী হবে, ইরান কোন দেশের সঙ্গে কী আচরণ করবে, কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে, সেখানে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের কোনো দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও শেষ কথাটি কিন্তু জেনারেল সোলেমানিই বলতেন। অর্থাৎ তিনি যে মতামত দিতেন, সেটিই গ্রহণ করা হতো এবং সে অনুযায়ীই ইরানের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করা হতো।

ইরান ও আমেরিকার ভবিষ্যৎ

ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়া শুরু করেছে। যা দিন দিন আরো বাড়তে থাকবে। অপরদিকে এই ঘটনার ফলে ইরানের সাথে আমেরিকার পারস্পরিক আলোচনার দরজা বন্ধ হবে। তবে ইরান সুলেমানির মতো আরো একজন চৌকস নেতা তৈরির পূর্ব পর্যন্ত আমেরিকার সাথে যুদ্ধে বা প্রতিশোধে লিপ্ত হবেনা। তাছাড়া তারা এখন আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া মানে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের সাথেও তার যুদ্ধ করতে হবে । তাই এটা ইরানের জন্য কঠিন হবে।

প্রজন্মনিউজ২৪/ সজীব

 

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ