প্রকাশিত: ১৫ মে, ২০১৯ ০৫:৩৮:৩৬
দুঃসহ যানজটে ক্রমেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে রাজধানী। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি সড়ক, মোড়, রেল ক্রসিংয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকা মানুষকে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন ভোগান্তি ।
রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার রেলক্রসিং দিয়ে প্রতিদিন ঢাকায় আসা-যাওয়া করে শতাধিক ট্রেন। এ কারণে যানজট এখানে লেগেই থাকে। সকাল ও রাতের বেলা মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে গেলে মহাখালী কাঁচাবাজারের রেলক্রসিংয়ের যানজট আরও ছড়িয়ে যায় বহুদূর। তখন এটি একদিকে ফার্মগেট অন্যদিকে আমতলী পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। শুধু মহাখালী কাঁচাবাজার নয়, রাজধানী যেসব রেলক্রসিংয়ে ওভারপাস নেই তার সবগুলোরই একই দশা।
রেলক্রসিংয়ের ফেলে রাখার কারণে পুরো রাজধানীতে যান চলাচল বন্ধ থাকে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে রাজধানীর ওপর দিয়ে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। আর এমনটি হলে রেলক্রসিংকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে যানজটের মাত্রা আরও কয়েক গুণ বাড়বে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকা থেকে টঙ্গী রেলস্টেশন পর্যন্ত মোট ৩১টি বৈধ রেলক্রসিং রয়েছে।
প্রতিদিন আন্তনগরের বিভিন্ন রুটের ৫১টি ট্রেন ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে আসে। ট্রেন চলাচলের কারণে সারা দিন ১০২ বার প্রতিটি রেলক্রসিংয়ের প্রতিবন্ধকগুলো ফেলা হয়। প্রতিবার গড়ে তিন মিনিট করে রেলক্রসিংয়ের বন্ধ রাখা হয়। সেই হিসেবে একটি রেলক্রসিংয়ের ওপর দিয়ে প্রতিদিন ৩০৬ মিনিট বা পাঁচ ঘণ্টা ছয় মিনিট করে যান চলাচল বন্ধ থাকে। কোনো কোনো দিন সাত থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত প্রতিটি রেলক্রসিংয়ের বার ফেলে রাখা হয়।
সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ট্রেন আসার আগে রেলক্রসিংয়ের চারটি প্রতিবন্ধক ফেলার আগে বেঁধে যায় হুড়োহুড়ি। পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, পিকআপ ভ্যানসহ যানবাহনগুলো দ্রুত পারাপারের চেষ্টা করতে থাকে। প্রতিবন্ধকগুলো ফেলার পর হুড়োহুড়ির মাত্রা আরও বেড়ে যায়।এই জটলার কারণে যানজটের লাইন দীর্ঘ হয়।
আরেকটি ট্রেন আসার সময় যেন দুর্ঘটনা না ঘটে, তাই অনেক সময় ১০ মিনিটেরও বেশি সময় ক্রসিং বার ফেলে রাখা ছাড়া উপায় থাকে না। মোটরসাইকেল আরোহীদের অনেকে সেগুলো উঁচু করে বের হয়ে যান। এই সুযোগ নেন পথচারীরাও। বাধ্য হয়ে অনবরত হুইসিল বাজিয়ে ধীর গতিতে চলতে থাকে ট্রেনগুলো। ট্রেনের ধীর গতির কারণে যানজট ছড়িয়ে যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, রেলক্রসিংয়ে আধুনিকায়নের কাজ সম্পন্ন হলে যানজট কিছুটা কমতে পারে। তিনি বলেন, ‘লেভেল ক্রসিংয়ের মান উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের প্রকল্প চলমান রয়েছে। এটি শেষ হলে ও গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া হলে আশা করছি বর্তমান সমস্যার কিছুটা উন্নতি হবে। রেললাইনের পাশে যেকোনো দোকানপাটই অবৈধ। এসব অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা আমাদের রুটিন ওয়ার্ক।
কিন্তু উচ্ছেদের পর আবারও দোকান বসে যায়। তা ছাড়া রেলক্রসিং গেটের পাশে রেলের কর্মচারীরা যদি দোকানপাট বসিয়ে থাকে তাহলে সেটি যাচাই করে তাদের আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ধরনের পরিস্থিতি শুধু মহাখালী কাঁচাবাজারে নয়, রাজধানীর প্রায় রেলক্রসিংয়ে। সম্প্রতি রাজধানীর কারওয়ান বাজার এফডিসি এলাকার রেলক্রসিং ঘুরে দেখা যায় একই চিত্র। এখানেও দখলদারদের দাপট। রেলক্রসিংয়ের উত্তর পাশে রয়েছে অসংখ্য ঝুপড়ি ঘর। প্রতিদিন সকালে রেললাইনের ওপর বসে মাছের বাজার। দুপুর থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাদকের ব্যবসা।
২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সকালে রেলক্রসিংয়ের পাশে এই মাছবাজারে ঘটেছিল ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এখানেই ময়মনসিংহ থেকে ঢাকামুখী যমুনা এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেসের মাঝে পড়ে ও ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারান চারজন। গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা করা আরও চারজনকে। এর পর কিছুটা নড়েচড়ে বসে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলপুলিশ, ঢাকা মহানগর পুলিশকে নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রেললাইনের ওপর গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা, বাজার, দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদে বন্ধ হয়ে যায় কারওয়ান বাজার রেললাইনের মাছ বাজারটি। কিন্তু দুই বছর যেতে না যেতেই ২০১৭ সাল থেকে আবারও সেখানে বসেছে মাছের বাজার। গড়ে উঠেছে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের কার্যালয়। মগবাজার উড়াল সেতু চালু হলেও কারওয়ান বাজার রেলক্রসিংয়ে এখনো প্রতিদিন তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা উড়াল সড়ক বা ওভারপাস নির্মাণের। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের রেলক্রসিংয়ের ওপর উড়াল সড়ক নির্মাণ হলে যানজট না কমে আরও বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ, রেলটাকে আলাদা করতে হবে রাস্তা থেকে।
আমরা এখন উড়াল সড়ক বানিয়ে রাস্তাকে আলাদা করছি। খিলগাঁওয়ে উড়াল সড়ক নির্মাণ করে এখন নিচে যানজট থাকে, ওপরে থাকে। উড়াল সড়ক না বানিয়ে উড়াল রেল সড়ক তৈরি করতে হবে অনেকটা মেট্রোরেলের মতো করে উড়াল রেল সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন।
তীব্র গরমে ঢাকার বাতাসের কী খবর
টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশেই থাকবে : শিল্পমন্ত্রী
জামায়াত ইসলামীর উদ্যোগে মোহাম্মদপুরে ইস্তিস্কার নামাজ আদায়
হিট স্ট্রোকে শিক্ষার্থীর মৃত্যু
আদালত অবমাননা : বিএনপিপন্থি সাত আইনজীবীর বিষয়ে আদেশ পেছাল
জলবায়ু পরিবর্তনের মূল আঘাত যাচ্ছে এশিয়ার ওপর দিয়ে: জাতিসংঘ
বান্দরবানের তিন উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি