লক্ষ্মীপুরে সড়ক বিভাগের ভূমি ‘গিলে খাচ্ছে’ভূমিখেঁকোরা

প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ ০৬:২২:৪৬

লক্ষ্মীপুরে সড়ক বিভাগের ভূমি ‘গিলে খাচ্ছে’ভূমিখেঁকোরা

লক্ষ্মীপুরের দালালবাজার এলাকায় রায়পুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত ভূমিগুলো প্রকাশ্যে গিলে খাচ্ছে স্থানীয় ভূমিদস্যুরা। বিগত কয়েকমাস থেকে ভূমিদস্যুদের জবরদখলের কবলে ওই ভূমিগুলো বেহাত হয়ে পড়লেও এখন পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগ দখল বন্ধ ও উচ্ছেদে কার্যকর কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করেনি। চিহ্নিত ভূমিদস্যুদের প্রভাবের কবলে অসহায় হয়ে পড়ার ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে এ ব্যাপারে দায় এড়াতে চাইছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

তবে স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্তাদের ম্যানেজ করে জবরদখলকারিরা সরকারি এসব সম্পত্তি দেদারছে দখল করে চলছে। এসব দখলবাজিতে একদিকে সড়ক বিভাগ হারাচ্ছে অধিগ্রহণকৃত নিজস্ব ভূমি, অপরদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা হারাচ্ছে পারিপার্শ্বিক জীবনমানের সুবিধা। এসব কারণে দখলদারদের কবল থেকে সরকারি ওই সম্পত্তি উদ্ধারে সড়ক বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের অধিন কুমিল্লা-লালমাই-চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-বেগমগঞ্জ(আর- ১৪০) সড়কের ১০৩ তম কি.মি. এর অন্তর্গত লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ২৫ নং দক্ষিন হামছাদি মৌজার সিএস ১৬৩০ খতিয়ানভুক্ত দালালবাজার এলাকায় আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তরপাশে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধিগ্রহণকৃত ব্যাপক পরিমান ভূমি রয়েছে। ওই স্থানে সড়কের পাশের প্রায় ৫০-৬০ ফুট প্রশস্ত এবং প্রায় ১ কি.মি. দীর্ঘ অধিগ্রহণ সীমানার বিস্তর ভূমি বিগত প্রায় ৫ মাস থেকে স্থানীয় চিহ্নিত ভূমিদস্যু আমির হোসেনের নেতৃত্বে দখলবাজরা জবরদখল করে চলেছে। এলাকার পানি নিষ্কাশনসুবিধাজনিত নানা ধরনের ওই ভূমি বালি ভরাট করে চলছে দখল কাজ।

কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে দিনের পর দিন এসব দখলবাজি চলে আসলেও নির্বিকার রয়েছে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত দখলবাজদের বাধা প্রদানে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। কর্তৃপক্ষের নির্বিকার এমন পরিস্থিতিতে দেখাদেখি সরকারি সম্পত্তি জবরদখলে দখলদারদের দৌরাত্ম ক্রমান্বয়ে আরো দীর্ঘ হচ্ছে ওই এলাকায়। বুধবার সরেজমিনে দালালবাজার নামক ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রায়পুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তর পাশে সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত ভূমিসহ লাগোয়া নিজ মালিকানার দাবিকৃত ভূমিতে বহুতল মার্কেট নির্মাণ কাজ করছে স্থানীয় ভূমিদস্যু ও বিএনপি নেতা আমির হোসেন।

নির্মিতব্য ওই মার্কেটের সীমানাবৃদ্ধি ও চলাচল সুবিধার্থে সরকারি ভূমি ভরাট করে দখল করে নিয়েছে সে। তার দেখাদেখি ওই এলাকায় আরও কয়েকজন দখলবাজ একইভাবে সড়ক বিভাগের জমি দখল কার্যক্রম করছে। এসময় সড়ক লাগোয়া প্রায় ৫০-৬০ ফুট দূরত্বে সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণ সীমানা পিলার পরিলক্ষিত হয়। যাতে সিমেন্টের প্রলেপে খোদাইকৃত লেখা রয়েছে ঋগ-ইগ. ঘঙ.৪৪১০;১৯৯০ জবরদখল হয়ে যাওয়া ভূমির বাইরে থাকা অধিগ্রহণকৃত অংশে দেখা যায় এটি নালা অগভীর প্রকৃতির ভূমি। তাছাড়া দখল হয়ে যাওয়া ভূমির লাগোয়া পশ্চিম পাশে প্রধান সড়কের উত্তর দিকে গ্রামের অভিমুখে একটি কাঁচা সংযোগ সড়ক রয়েছে।

প্রধান সড়ক ও কাঁচা সড়কের সংযোগস্থলে সরকারি অর্থে নির্মিত একটি পূর্ব-পশ্চিম মুখি কালভার্ট রয়েছে। দখলদারদের ভরাটের কারণে ওই কালভার্টের পূর্বমুখ আবদ্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানায়, সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত ভূমিটি যুগযুগ ধরে অগভীর নালা প্রকৃতির। কয়েকটি গ্রামের পানি নিষ্কাশনে এই নালা ব্যাপক ভূমিকা বহণ করছে। বর্তমানে নালাটি দখলে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ গ্রামগুলোর পানি নিষ্কাশন ব্যাবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বর্ষার মৌসুমে গ্রামগুলো জলাবদ্ধ হয়ে এখানকার বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্র্মধসঢ়;তাদের ম্যানেজ করে প্রভাবশালী আমির হোসেন সহ ভূমিদস্যুরা সহজেই সরকারি এসব ভূমি জবরদখল করতে সক্ষম হচ্ছে। জানতে চাইলে আমির হোসেন বলেন, আমিতো সরকারি জায়গায় বিল্ডিং বানাই না। সরকারি জমিতে বালি ভরাটের দৃশ্য দেখিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, দখল করেছি তো করবো। কারও কিছু করার নেই। অফিসের লোকজন আসি গেছে। তারাওতো আটকাইতে পারেনাই। এমন কেউ নাই আমার কাজে বাধা দিয়ে রাখবো। পত্রিকায় লেখলে আর টেলিভিশনে দেখাইলেই আর কি হইবো।

লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জানতে চাইলে সার্ভেয়ার নাজমুল হোসেন জানান, কয়েকমাস আগে খবর পেয়ে ওইস্থানে গিয়ে তাদেরকে দখলকাজ বন্ধ করার জন্য জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এখনও দখল চলছে কিনা জানা নেই। একই অফিসের আমির খান প্রথমে জানান, আমির হোসেনকে দখলকাজ বন্ধ রাখতে বলে দিয়েছি। তারপরও সে শুনেনি। তাই নিয়ম অনুযায়ী থানায় তার বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরিকরেছি। এরপর এটি আমাদের দায়িত্বের নয়।

দখলবাজদের কাছে ম্যানেজ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি এটি অস্বিকার করেন। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে তিনি জানান, ওরা এতই প্রভাবশালী, ওদের প্রভাবের কাছে আমরা অসহায়। নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় বারবার ঘটনাস্থলে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।এসময় তার কাছে থানায় দায়েরকৃত সাধারণ ডায়েরির কপি চাইলে তিনি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর লিখিত যে কপিটি দেখান তাতে অভিযোগ গ্রহণ সংক্রান্ত থানার কোন নম্বর-তারিখ কিংবা সাক্ষর নেই।

ওই কপিতে দেখা যায় সাধারণ ডায়েরির অভিযোগটি লেখার তারিখ রয়েছে ১৬/১০/২০১৮ইং। অভিযুক্ত দখলবাজের নাম মো.আমির হোসেন, পিতা-মো.অজিউল্যা, গ্রাম-পশ্চিম লক্ষ্মীপুর। ওই কপিটিতে সড়ক বিভাগের ওইঅফিসের স্মারক নং-৭৫৭/১ এবং অভিযোগ দায়েরকারী হিসেবে উপসহকারী প্রকৌশলী, সওজ, সড়ক শাখা-০২, সড়ক উপবিভাগ, লক্ষ্মীপুর এর সীল সাক্ষর রয়েছে। লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত পাল জানান, অল্প কয়েকদিন হলো  আমি এখানে বদলি হয়ে এসেছি।

এ বিষয়টি এখন পর্যন্ত আমি জানি না। তবে দখলের বিবরণ জেনে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। এসময় তিনি ওই সাইটের দায়িত্বে থাকা সার্ভেয়ার নাজমুল এবং এসও আমির খানকে নিজ কক্ষে ডেকে এনে সরেজমিনে গিয়ে দখল ও দখলবাজদের সম্পূর্ন তথ্য সম্বলিত বিবরণ উল্লেখ করে তাকে জরুরী ভিত্তিতে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেন। একই সাথে তিনি জানান, দখল বন্ধ ও উচ্ছেদে দ্রুত সর্বোচ্চ কার্যকরী ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং দখলবাজদের বিরুদ্ধেও শাস্তির ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের সদস্য মো.আরিফ হোসেন জানান, আঞ্চলিক এই মহাসড়কটি ফোর লেন এর প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। অচিরেই এই কাজ বাস্তবায়ন হবে। তবে অধিগ্রহণভূমিগুলো বেদখল হয়ে গেলে ফোর লেন কাজ বাস্তবায়ন সংকটের মুখে পড়বে।

প্রজন্মনিউজ২৪/আলমগীর হোসেন

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ