গ্রামীণ জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ ও রস

প্রকাশিত: ০৪ জানুয়ারী, ২০১৯ ০২:১১:৫৯

গ্রামীণ জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ ও রস

সানোয়ারুল ইসলাম রনি মীরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা ঃ খেজুর গাছ ঐতিহ্যবাহী কিছু গাছের মধ্যে অন্যতম। শীত আসলেই খেজুরের রস ও খেজুরের মিঠা (রাভ মিঠা) গন্ধে গ্রামীন জনপদ মৌ মৌ করে। শীত আসলেই গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন খেজুর গাছ পরিষ্কারের করতে ।

এতে গাছিরা এই সময় অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হয়। কালের বিবর্তনে অর্থনীতির চাকাকে চাঙ্গা করতে গিয়ে গ্রামীণ ঐতিহ্যের অনেক গাছের মত খেজুর গাছকে ও কেটে ফেলে লাগালো হয়েছে কাঠের গাছ । একসময় গ্রামীণ উপজেলাগুলোতে অধিকাংশ রাস্তার পাশে, পুকুরপাড়ে ও কৃষিজমির পাশে ছিল প্রচুর পরিমাণ খেজুর গাছ। শীত মৌসুম শুরু হতেই গাছীরা ব্যস্ত হয়ে পড়ত খেজুরের রস সংগ্রহ করার কাজে। সেই রসের চাহিদাও ছিল প্রচুর।

ফলে বিভিন্ন পিঠা, পুলি ও পায়েস সহ নানা প্রকার খাবার তৈরির জন্য খেজুরের রস ছিল অন্যতম উপাদান। এ জন্য গাছীদের চাহিদার কথা বলে রাখতে হতো। ফলে যাদের খেজুর গাছ ছিল না তারাও রস খাওয়া থেকে বঞ্চিত হতেন না। তখন শীতে আনন্দময় পরিবেশ বিরাজ করত।

বিশেষ করে পৌষ-মাঘ শীত মৌসুম এলে গাছীদের আনন্দের সীমা থাকত না। খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য মহাব্যস্ত হয়ে পড়তেন তারা। সকাল হলেই রস সংগ্রহ করতো বাজারে গিয়ে বিক্রি করতো এক কলসি রস ৫০-৭০ টাকা পর্যন্ত।গাছিদের থেকে জানা যায় ৫ লিটার রসে এক কেজি গুড় (মিঠা) হয়। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক এ মধুবৃক্ষকে ঘিরে গ্রামীণ জনপদে থাকত উৎসবমুখর পরিবেশ।

এ সময় মেহমান আসা মানেই খেজুরের রস ও আমনধানের ভাঁপা পিঠা, পুলি ও পায়েশ দিয়ে আপ্যায়ন। তা ছাড়া খেজুরের গুড় দিয়ে মুড়ির মোয়া, চিরার মোয়া ও মুড়ি খাওয়ার জন্য কৃষক পরিবার থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের শীতের মৌসুম ছিল অতি প্রিয়। কিন্তু ইটভাটা, বাণিজ্যিক চাষ, সুষ্ঠু তদারকি না করার ফলে মীরসরাই তথা সারা দেশে ঐতিহ্যের বাহক গ্রাম-গঞ্জ থেকে খেজুরগাছ আজ বিলুপ্তি পথে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের অনুমতি ও বিনা অনুতিতে শত শতইটভাটা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে মীরসরাই উপজেলায় ১৭টি ইটভাটা রয়েছে। এই ইটভাটাগুলোর বেশির ভাগই কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কেবল তা-ই নয়, খেজুর গাছের দহন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় মীরসরাই উপজেলার অধিকাংশ ইটভাটাগুলোতে খেজুরগাছ পোড়ানো হচ্ছে। এতে করে খেজুরগাছ দিনকে দিন কমে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে মীরসরাই উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নের ঘড়ি মার্কেট এলাকার গাছি জসিম উদ্দিন জানান, ইটভাটাগুলোতে প্রধানত খেজুরগাছ পোড়ানো হচ্ছে। আবার অনেকে খেজুরগাছ কেটে সাঁকোসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকেন। এর ফলে গাছ কমে যাওয়াতে তারা খেজুরের রসের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আরেক গাছি সাইদুল ইসলাম জানান, শীত আসলে আমার পরিবার চলতো খেজুরের রস ও গুড় বিক্রির টাকায়। এখন গাছ না থাকায় আমি সেই পেশা ছেড়ে দিয়েছি। এখন মীরসরাই হাট গুলোতে ও গুড় পাওয়া যায় না।

এই বিষয়ে মায়ানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির আহম্মদ নিজামী জানান, আমরা এই ব্যাপারে সচেতন ভবিষ্যৎতে পরিবেশ বান্ধব এই সব গাছ কাটলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবো যথাযথ কতৃপক্ষের কাছে।

এই বিষয়ে দুর্গাপুরের খেজুর রস চাষী আনোয়ারুল হক নিজামী বলেন আমরা জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় প্রচার মাধ্যম রেডিও, টেলিভিশনে পরিবেশ বান্ধব গাছ ফলজ বনজ এবং ওষুধি গাছ লাগানো ও সন্ত্রাসী গাছ লাগাতে নিরুৎসাহিত করার জন্য সরকারের কাছে

আহবান জানাচ্ছি। পুরোনো অনেক মানুষের স্বপ্ন আবার ও হারিয়ে যেতে বসা পরিবেশ বান্ধব খেজুর গাছে বরে উঠবে গ্রামীন জনপথ

গুলো।

প্রজন্মনিউজ২৪/জহুরুল হক/ রনি

 

 

 

এ সম্পর্কিত খবর

তীব্র গরমে ঢাকার বাতাসের কী খবর

হাবিপ্রবি সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাঁচবে হাজারও কোটি টাকার সম্পদ

সরদার পাড়া দারুল কোরআন মডেল মাদ্রাসার পরিক্ষার ফল প্রকাশ

৭ দাবিতে কুবি’র তিন দপ্তরে শিক্ষক সমিতির তালা

চলতি বছর পবিত্র হজ্জ পালনের অনুমতি দেওয়া শুরু করেছে সৌদি আরব

ইসরায়েল থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবিতে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চুয়েট, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ

রোববার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ

বশেমুরবিপ্রবিতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ