প্রতিবছর গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়ের একই নৈরাজ্য

প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:৪৯:৫৪ || পরিবর্তিত: ১৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:৪৯:৫৪

প্রতিবছর গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়ের একই নৈরাজ্য

ঢাকা প্রতিনিধি: ঈদে গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায় করবে না, এটা আদৌ এদেশে সম্ভব? ঈদের আগের পাঁচ দিন থেকে ঈদের পরের দশদিন পর্যন্ত তাদের ঈদ বোনাসের নামে বাড়তি ভাড়া আদায় চলতে থাকে। বাড়তি ভাড়া আদায় করার পেছনে তাদের অযুহাতের‌ শেষ নেই। যুগ যুগ ধরে কমন অযুহাত শুনে আসছি, বাস মালিকরা নাকি তাদের স্টাফদের ঈদ বোনাস দেয়না, তাই তারা যাত্রীদের থেকে আদায় করে। আবার অনেকে বলে, যাওয়ার সময় যাত্রী নিয়ে যায়, আসার সময় খালি আসে তাই ডবল ভাড়া নিতে হয়। কিন্তু বাস্তবে কোনো বাস খালি আসতে দেখি না!

এদিকে দূর পাল্লার বাসের সাথে তাল মিলিয়ে সিটি বাসগুলো-ও ডবল ভাড়া আদায় করা শুরু করে দিয়েছে। সিটি বাসে আজ হেল্পাররা দরজা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের চাহিদা মতো ভাড়া দিতে রাজি হলে দরজা খুলে বাসে উঠতে দিচ্ছে। 

'এবার ভাড়া বেশি নেওয়া যাবে না' প্রশাসন থেকে এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি জারি করার পরেও ভাড়া বেশি আদায় করার কারন হিসেবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছে, আসার সময় খালি আসতে হয় বলে ভাড়া বেশি নিতে হচ্ছে। দূর পাল্লার বাসের না হয় এই অযুহাত। তাহলে সিটি বাসের অযুহাত কি? আজকেও কর্মস্থলে বাসে ঝুলে ঝুলে গিয়েছি এবং ফিরেছি। তাও আবার তাদের চাহিদা মতো ভাড়ার চুক্তিতে রাজি হলে বাসে উঠতে দিয়েছে। 

গতকাল আশুলিয়ায় বাড়তি বাস ভাড়া নেওয়াকে কেন্দ্র করে গণপিটুনিতে বাসের চালক হেলপার নিহতের ঘটনাতেও কারো টনক নড়েনি। 

প্রসাশন, মালিক-শ্রমিক নেতা সহ সংশ্লিষ্ট সবাই বরাবরই ঘোষণা দেন, বাড়তি ভাড়া আদায় করা হবে না। অথবা বাড়তি ভাড়া আদায় করলে কঠোর ব্যবস্থা! কিন্তু তা শুধু ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি। আমরা দেখিনি। বাস্তবটা হলো, যারা এসব ঘোষণা দেন তারাও অসৎভাবে পকেট ভারী করায় ব্যস্ত থাকেন। তাহলে বাস্তবে সাধারণ মানুষ সুবিধা ভোগ করবে কবে? 

অন্যদিকে বাংলাদেশ রেলওয়েতে প্রতিবছর একই হযবরল অবস্থা। গতবছরের মতো এ বছরেও টিকেটধারী যাত্রীরা যাতে সুষ্ঠুভাবে ট্রেনে উঠতে পারে তার জন্য বাঁশ থেরাপি অথবা কথিত তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোটি কোটি টাকা খরচ করেও তাদের এই থেরাপি ব্যর্থ হয়েছে। তাই কথিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলেছি। এবার রেলওয়ের বাড়াবাড়ি একটু বেশিই ছিল। তাদের অতিরিক্ত হাঁকডাকে মনে হয়েছে এবার কিছু একটা আসলেই হবে। কিন্তু হলো না। 

তবে বিনা টিকেটের যাত্রীদের চাপে এবারও টিকেটধারী যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কেউ কেউ টিকেট থাকার পরেও ট্রেনে উঠতেই পারেনি। সিট থাকার পরেও সিট পর্যন্ত যেতে পারেননি। এখন প্রশ্ন- তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে এতো লোক স্টেশনে প্রবেশ করলো কিভাবে? অনেকে অভিযোগ করেছেন, স্টেশনে নিরাপত্তা রক্ষীদের ম্যানেজ করে স্টেশনে প্রবেশ করেছেন। যেসব অসাধু নিরাপত্তা রক্ষীদের কারণে রেলওয়ের এই তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আজ বিতর্কিত ও ব্যর্থ। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এছাড়া প্রতিটি লোকাল ট্রেনেও তিন গুণ ভাড়া আদায় করেছে। যারা ময়মনসিংহের লোকাল ট্রেনে করে কমলাপুর থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত গিয়েছেন তাদেরকেও ২০ টাকার টিকেটের পরিবর্তে বাধ্যতামূলক ভাবে ৯৫ টাকার টিকেট কিনে ট্রেনে উঠতে হয়েছে। এই নৈরাজ্য যাত্রীরা ট্রেন বাড়ায় আগে দেখেনি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে ব্যখ্যা দিয়েছে, 'যেন বিমানবন্দর, জয়দেবপুরের যাত্রীরা ট্রেনে ভিড় না করে। আবার অনেকে ২০ টাকার টিকেট কিনে ময়মনসিংহ পর্যন্ত চলে যায়। তাই ঈদ উপলক্ষে সর্বনিম্ন ৯৫ টাকা ভাড়ার নিয়ম।' 

এটা কোনো যথাযত যুক্তি হতে পারে বলে মনে করি না।  সবাই যেহেতু পাবলিকের পকেট কাঁটায় ব্যস্ত তাহলে তারাই বা বাদ যাবে কেন? ঈদের সুযোগে তারাও বাড়তি ভাড়া আদায় করবে এটাই আসল কারণ।


প্রজন্মনিউজ২৪/এইচআরসি

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ