ভারত বিষয়ে কৌশল ঠিক করছে বিএনপি

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ, ২০২৪ ০১:০৬:২৭

ভারত বিষয়ে কৌশল ঠিক করছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ রাজপথে যুগপতের শরিক কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোটের ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এ ইস্যুতে দলের অবস্থান কী হবে, তার কৌশল ঠিক করছে বিএনপি। এটা নিয়ে গত সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আগামীতে এটি নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা-বিশ্লেষণের পর এ বিষয়ে অবস্থান ঠিক করবে বিএনপি। কৌশলের অংশ হিসেবে তারা ভারতের পণ্য বর্জনের আন্দোলনে দলগতভাবে সরাসরি অংশগ্রহণ কিংবা কথা বলতে চায় না। তবে দলের সিনিয়র নেতা রুহুল কবি রিজভীর সাম্প্রতিক ভারত বিরোধিতাকে ভালো চোখে দেখছেন না স্থায়ী কমিটিতে অংশ নেওয়া অনেক নেতা। বৈঠকে তারা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এদিকে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে দলীয় প্রতীকে না হওয়ায় সরকারবিরোধী আন্দোলনের পর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সংগঠন ও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে নির্বাচনে কৌশলে যাওয়ার পক্ষে দল। তবে সেই কৌশল কী হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ মুহূর্তে সেই কৌশল ঠিক করা হবে। স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ভারত বিষয়ে কৌশল ঠিক করছে বিএনপি সরকারকে বিদায়ে আন্দোলনের বিকল্প নেই : তাঁতী দল সূত্র মতে, বৈঠকে উপস্থিত সবাই বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে ভারতের অবস্থান নিয়ে

আলোচনা করেন। তবে পার্শ্ববর্তী ও প্রভাবশালী রাষ্ট্র হওয়ায় ভারত ইস্যুতে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কৌশলী হতে চায় তারা। সে কারণে তারা ভারতের পণ্য বর্জনের আন্দোলনে দলগতভাবে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে কিংবা কথা বলতে চান না। অবশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো গোষ্ঠী কিংবা জনগণ যদি ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয়, তাহলে বিএনপি সেটি ইগনোরও (এড়িয়ে যাওয়া) করবে না।

ভারতীয় পণ্য বর্জনের একটি আন্দোলনের বিষয় সামাজিক মাধ্যমে সম্প্রতি ছড়িয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গত ২০ মার্চ নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সেই আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। এরপর একদল কর্মীকে নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে তার গায়ে থাকা ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলে দেন। তখন তার সঙ্গে থাকা কর্মীরা সেই চাদর সেখানে আগুন দিয়ে পোড়ান। পরে এ ঘটনার ব্যাখ্যায় রিজভী বলেন, ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেইনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে তিনি তার ব্যবহার করা ভারতীয় চাদর ফেলে দিয়েছেন। তিনি সম্পূর্ণ তার নিজের চিন্তা থেকে এই কাজ করেছেন। তিনি আরও বলেন, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিতে পারে। কিন্তু সব মহলে, সব জনগণের মধ্যে এটি আজ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সুতরাং ভারতীয় পণ্য বর্জনে তারা যে সংহতি জানিয়েছেন, তা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে।

রিজভীর ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলার ঘটনাটি বিএনপির ভেতরে নানা আলোচনার সৃষ্টি করে। দলের স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকের আলোচনায়ও বিষয়টি উঠে এসেছে। দায়িত্বশীল পদে থেকে রিজভীর এ ধরনের কর্মকাণ্ড শোভনীয় হয়নি বলে মনে করে স্থায়ী কমিটি। দুজন সদস্য এ প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে বলেন, রিজভী ব্যক্তিগত চিন্তা থেকে কাজটি করেছেন—এমনটা বললেও সেটি ব্যক্তিগত ছিল না। দায়িত্বশীল পদে থাকায় দেশবাসী মনে করে দলের সিদ্ধান্তেই তিনি এমনটা করেছেন। স্থায়ী কমিটির ওই দুজন সদস্যের একজন বলেন, আমরা ভারতের বিরোধিতা করব। কিন্তু কৌশল ঠিক করতে হবে। সেটা না করে যে যার মতো বক্তব্য দেওয়া উচিত হবে না। অপরজন বলেন, ধরা যাক বিএনপি যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে, আমরা কি ভারতীয় পণ্য বর্জন করে দেশ চালাতে পারব? এ বিষয়টাতে আমাদের সুনির্দিষ্ট কৌশল ঠিক করা দরকার।

আলোচনার এ পর্যায়ে সদ্য কারামুক্ত একজন নেতা বলেন, আমরা সরকারের বিরুদ্ধে একটি দীর্ঘ আন্দোলন করেছি। সব সময় বড় আন্দোলনের সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ন হয়। সে মূল্যায়ন আমরা করিনি। আমাদের উচিত আগে সে মূল্যায়ন করা, তারপর তার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করা। আমরা যদি ভারত বিরোধিতা করি, তাহলে তার কৌশল কী হবে সেটা নির্ধারণ করতে হবে। এটা নিয়ে আগামীতে পরিপূর্ণ আলোচনা হওয়া উচিত। তারপর কৌশল ঠিক করতে হবে।

তপশিল ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নেতারা বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন বর্জনের চার মাসের মধ্যে সেই সরকারের অধীনে দলীয়ভাবে উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি যেসব কারণে ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি, সেগুলো এখনো বিদ্যমান রয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সংগঠন ও তৃণমূলকে চাঙ্গা করতে উপজেলা নির্বাচনে কৌশলে যাওয়ার পক্ষে মত দেন তারা। এ আলোচনায় যোগ দিয়ে স্বতন্ত্রভাবে দলের কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তার বিরুদ্ধে বহিষ্কারের মতো কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের বিপক্ষে মত দেন স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য।

তখন দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, এখনো সময় রয়েছে। আমরা এখনই যদি কৌশল নিয়ে নিই, তাহলে সরকারও সতর্ক হয়ে যাবে, তাদের কৌশলও পরিবর্তন করে ফেলবে। মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ মুহূর্তে কৌশল নির্ধারণ করা হবে।


প্রজন্মনিউজ২৪/আরা 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ