বোমা বানানোর কারিগরের মনটাই যেভাবে উড়ে গেল!

প্রকাশিত: ০২ মার্চ, ২০২৪ ১২:৪৫:৩৭

বোমা বানানোর কারিগরের মনটাই যেভাবে উড়ে গেল!

প্রজন্ম অনলাইন: পরমাণু বোমার জনক হিসেবে বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত বিজ্ঞানী জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহাইমারের জীবনের ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে সিনেমাটি। স্বাভাবিকভাবেই এতে যেমন পরমাণু বোমা বানানোর ঘটনা প্রাধান্য পেয়েছে বেশি, তেমনি ওপেনহাইমারের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের নানা ঘটনাও উঠে এসেছে প্রাসঙ্গিকভাবেই।

তেমনটাই হয়েছে ‘ওপেনহাইমার’ ছবিতে। পরিচালক হিসেবে ক্রিস্টোফার নোলান বেশ ভারী নাম। সেই ভার ২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতেও অনুভূত হয়েছে ভালোই। পরমাণু বোমার জনক হিসেবে বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত বিজ্ঞানী জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহাইমারের জীবনের ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে সিনেমাটি। স্বাভাবিকভাবেই এতে যেমন পরমাণু বোমা বানানোর ঘটনা প্রাধান্য পেয়েছে বেশি, তেমনি ওপেনহাইমারের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের নানা ঘটনাও উঠে এসেছে প্রাসঙ্গিকভাবেই।

সিনেমার শুরুটা হয় ব্যক্তি ওপেনহাইমারের বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার যাত্রা দেখানোর মধ্য দিয়ে। অবশ্য দৃশ্যের ধারাবাহিকতার সঙ্গে ঘটনার ধারাবাহিকতা সব সময় সঙ্গত দেয়নি। মাঝে মাঝেই অতীতে গিয়ে আবার বর্তমানে ফিরে আসা হচ্ছিল। যদিও পুরো সিনেমার নিউক্লিয়াস ছিল পরমাণু বোমার সৃষ্টি। এর আগে-পরের ঘটনা তাই মাঝে মাঝেই দর্শকদের কখনো ওপেনহাইমারের ছাত্রজীবনে, আবার কখনো জেরাকক্ষে নিয়ে যাচ্ছিল। তবে তাতে সিনেমা দেখে যাওয়ার আগ্রহ আরও বাড়বে বৈ কমবে না। সময় নিয়ে এই লুফালুফি খেলাটা ক্রিস্টোফার নোলানের পুরোনো অভ্যাস। ‘

‘ওপেনহাইমার’–এ পরমাণু বোমার জনকের মানসিক পৃথিবীকে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে প্রবলভাবে। ঐতিহাসিক ঘটনার চিত্রায়নের পাশাপাশি এই বিষয়টিকে ক্যামেরার চোখে অন্যতম প্রধান করে তোলার কারণেই ছবিটি উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। পরমাণু বোমা বানানোর বিষয়টি তৎকালীন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে যতটা না যুদ্ধ সংহারক ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের হাতিয়ার। সেই সঙ্গে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণও ছিল এটি। যদিও ওপেনহাইমার ব্যক্তি হিসেবে যুদ্ধ বা রাজনীতি বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। তিনি হতে চেয়েছিলেন নিখাদ বিজ্ঞানী, কিন্তু শেষতক তিনি হয়ে যান মৃত্যুর অপর নাম।

যে বিতর্কটি সবচেয়ে বেশি সামনে আসে, তা হলো—পরমাণু বোমা তৈরির মতো একটি বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে এই বিজ্ঞানী কি আদৌ অনুশোচনায় ভুগেছেন কখনো? ছবিতে অন্তত এটুকু বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, বিষয়টি এতটা সরল নয়। বিশেষ করে, বৈজ্ঞানিক প্রকল্পের সফলতা যে পুরো বিশ্বকে একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং সেটি যে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে—সেটি বোঝা কঠিন কোনো ব্যাপার ছিল না ওপেনহাইমারের কাছে। তবে এটি একইসঙ্গে তাঁকে ফেলে দেয় এক বিশাল দ্বিধার সাগরে।

বিজ্ঞানীর অনুসন্ধিৎসু মন, সফল হওয়ার আকাঙ্ক্ষা, প্রেমে মশগুল হয়ে যাওয়া বা হাড়ভাঙা খাটুনিতে পাওয়া সফলতার পর নাম না জানা অগণিত মানুষের রক্তে নিজের হাত লাল হওয়ার অনুভূতি—সবক’টিতেই মারফি ছিলেন অনবদ্য। এর বাইরে ওপেনহাইমারের মিত্রপক্ষ জেনারেল লেসলি গ্রোভসের চরিত্রে ম্যাট ডেমন এবং বিরোধী পক্ষ হয়ে ওঠা লুইস স্ট্রসের চরিত্রে রবার্ট ডাউনি জুনিয়রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই দুই হেভিওয়েট অভিনেতা এতটাই নিপুণভাবে চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন যে, তাঁদের বিকল্প কোনো অভিনয়শিল্পীর নাম আর মাথায় উঁকি দেওয়ার সাহস পায় না। ওপেনহাইমারের স্ত্রীর ভূমিকায় এমিলি ব্লন্টও ছিলেন অতুলনীয়।

পরিচালকের এমন বক্তব্যের সঙ্গে দর্শকেরাও যে কিছুটা একমত, তা বক্স অফিসে ‘ওপেনহাইমার’ সিনেমার তুমুল ব্যবসা করা দেখেও কিছুটা আঁচ করা যায়। একই সাথে সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ানো ও পকেট ভরে ডলার কামানো—তুলনামূলকভাবে কঠিন কাজ। সেটিই অবলীলায় করে ফেলেছে ‘ওপেনহাইমার’। বিভিন্ন পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চে এরই মধ্যে তিন শ’রও বেশি পুরস্কার জিতেছে এই সিনেমা। এবারের অস্কার আসরেও পেয়েছে সর্বাধিক ১৩টি বিভাগে মনোনয়ন। হলিউডে এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছে ফিসফাস—পুরো অস্কার আসর একাই মাত করে দিতে পারে ‘ওপেনহাইমার’! গুঞ্জন শেষ পর্যন্ত সত্যে পরিণত হয় কি-না, তার জন্য অবশ্য অপেক্ষাই ভরসা।


প্রজন্মনিউজ২৪/এএন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ