পিলখানা ট্রাজেডির ১৫ বছর, বিচার হয়নি আজও

প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ০৫:৫৪:৩০

পিলখানা ট্রাজেডির ১৫ বছর, বিচার হয়নি আজও

অনলাইন ডেস্ক: আজ ২৫শে ফেব্রুয়ারি রোজ রবিবার বাংলাদেশিদের জন্য একটি শোকাহত দিন। ১৫ বছর আগে ২০০৯ সালের এইদিনে বিডিআর ও বর্তমান বিজিবির সদরদপ্তর পিলখানায় সংগঠিত হয় এক নৃশংস হত্যাকান্ড। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সংগঠিত হওয়া বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। সেনা কর্মকর্তা ছাড়াও রেহাই পায়নি শিশু ও নারীরাও। নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তাদের। সেই থেকে এইদিনটি পিলখানা ট্রাজেডি দিবস হিসেবে পালিত হয়। 

কি ঘটেছিল সেদিন?
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯ টায় বিজিবির বার্ষিক দরবার চলাকালে দরবার হলে প্রবেশ করেন একদল বিদ্রোহী সৈনিক। তাদের মধ্যে একজন তৎকালিন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ এর বুকে অস্ত্র তাক করান। এরপর বিদ্রোহী সৈনিকরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেনা কর্মকর্তাদের উপর। তারা সেনা অফিসারদের হত্যা করে তাদের পরিবারকে জিম্মি করে ও বেসামরিক লোকদের উপর গুলি চালায়। তারা সবগুলো প্রবেশপথ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আশেপাশের এলাকায় গুলি ছুড়তে থাকেন।
বিদ্রোহীরা দরবার হল ও এর আশপাশ এলাকায় সেনা কর্মকর্তাদের গুলি করতে থাকেন। তাদের গুলিতে একে একে লুটিয়ে পড়তে থাকেন সেনা কর্মকর্তারা। ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর এ বিদ্রোহের অবসান হয়। পিলখানা পরিণত হয় এক রক্তাক্ত প্রান্তরে। পরে পিলখানা থেকে আবিষ্কৃত হয় গণকবর। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় সেনা কর্মকর্তাদের মরদেহ। ৩৬ ঘণ্টার এ হত্যাযজ্ঞে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, একজন সৈনিক, দুই সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, ৯ বিজিবি সদস্য ও পাঁচজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন।

মামলার রায়

এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় মোট ৮৩৫ আসামীর শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট।  সেখানে মোট ৫৫২ জনকে শাস্তির আওতায় আনা হয়। খালাস দেয়া হয় ২৮৩ জনকে। নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫২ জন আসামীর মধ্যে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে হাইকোর্ট। ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন প্রদান করা হয় এবং ৫ জন খালাস পান। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম এত বেশি সংখ্যক আসামির সাজা হাইকোর্টে অনুমোদন হয়।
নিম্ন আদালতে ১৬০ জন যাবজ্জীবন প্রাপ্ত আসামীর মধ্যে হাইকোর্ট ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখে এবং ১৪ জনকে খালাস দেয়। তবে নিম্ন আদালতে যাদেরকে খালাস দিয়েছিল, তাদের মধ্যে ৬৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে হাইকোর্ট ৩১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। ৪ জনকে ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ৩৪ জনের খালাস আদেশ বহাল রাখে। সে হিসেবে হাইকোর্টে মোট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে ১৮৫ জনকে। এছাড়া ২২৮ জনকে ১৩ থেকে ১ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।

বিজিবি ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, ২০০৯ সালের বর্বরোচিত এই ঘটনার পর দুটো ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে বিস্ফোরক মামলাটির শুনানি এখনও নিম্ন আদালতে চলছে। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর নিম্ন আদালত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে ৮৫০ আসামির মধ্যে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া ২৭৮ জনকে খালাস দেন আদালত। রায় ঘোষণার আগেই মারা যান চার আসামি। 

এ ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় অনেকের ফাঁসি হয়। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে, সঙ্গে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও আপিল করে। পরে হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে অনেকের সাজা কমেছে, অনেকের বহাল আছে।

তিনি বলেন, হাইকোর্টে রায়ে যাদের সাজা বহাল আছে তাদের মধ্যে ৩৩ জন আপিল বিভাগে আপিল করেছে। এরপর আসামিপক্ষ আপিলের সারসংক্ষেপ জমা না দেওয়ায় শুনানি করা যাচ্ছিলো না। তাদের সারসংক্ষেপ জমা দেওয়ার জন্য আমরা একটি ফাইল করেছি। এবার ৩৩টি ফাইল আসবে। এরপর তাদের যে সময় দেওয়া হবে সেই সময়ের মধ্যে যদি তারা সারসংক্ষেপ জমা না দেয় তাহলে তাদের আপিল ডিসমিস হয়ে যাবে।

পিলখানায় এই বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়। বিডিআরের নাম,লোগো,ও সাংগঠনিক পরিবর্তন করা হয়। জাতীয় সংসদে ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন, ২০১০’ পাস হয়। ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকর হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি বাহিনীর সদর দপ্তরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ- বিজিবির নতুন পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন এবং মনোগ্রাম উন্মোচন করেন। এর মধ্যদিয়ে শুরু হয় এ বাহিনীর নতুন পথচলা।


প্রজন্মনিউজ২৪/এফএইচ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ