বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন প্রোগ্রামে বিনাখরচে ভারত ভ্রমণের সুযোগ

প্রকাশিত: ১৭ অগাস্ট, ২০২৩ ০৩:৪২:৩২

বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন প্রোগ্রামে বিনাখরচে ভারত ভ্রমণের সুযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশ এক দেশ থেকে অন্য দেশে প্রতিনিধি পাঠায়। পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন, জ্ঞান আহরণ, দক্ষতার উন্নয়ন, উভয় দেশের অর্থনীতি, ইতিহাস, সংস্কৃতি, রাজনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানা ও দেখা মূলত ডেলিগেশনের উদ্দেশ্য থাকে। বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন হচ্ছে ভারতীয় হাই কমিশনের একটি ডেলিগেশন প্রোগ্রাম। এই কর্মসূচিটি মূলত বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নসহ যুবকদের দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করার লক্ষ্যে উভয় দেশের মধ্যে এমওইউ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সরকারি আমলা প্রতিনিধি, রাজনৈতিক প্রতিনিধি, খেলোয়াড় প্রতিনিধি ইত্যাদি প্রতিনিধির ন্যায় বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন প্রোগ্রামে শুধুমাত্র বাংলাদেশের যুবক যাদের বয়স ২১-৩৫ বছরের মধ্যে তারাই ভারতের বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন প্রোগ্রামে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়। এই কর্মসূচীর আওতায় ভারতীয় হাই কমিশন প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১০০ যুবককে ৭-১০ দিনের জন্য ভারত ভ্রমণের সুযোগ দিয়ে থাকে, যেখানে নির্বাচিত যুব প্রতিনিধিকে কোন খরচ বহন করতে হয় না। ভারতীয় হাই কমিশন বাংলাদেশের ১০০ তরুণ বাছাই করে যারা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের কাজের স্বাক্ষর রেখেছে যেমন সমাজের সমস্যা দূরীকরণের জন্য কাজ করেছে বা করছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে যেমন গায়ক, খেলোয়াড়, সাংবাদিক, ডাক্তার, শিক্ষক, লেখক, সমাজসেবক, শিল্পী, প্রকৌশলী, ছাত্র-ছাত্রী, চাকুরিজীবী ইত্যাদি যুবকদের নির্বাচন করে থাকে। বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন প্রোগ্রামের সমস্ত খরচ বহন করে ভারত সরকার। ভারতের অর্থনীতি, প্রযুক্তি, শিল্প-সংস্কৃতি, শিক্ষা, চিকিৎসা ও ইতিহাসবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানগুলোতে মূলত নিয়ে যাওয়া হয় নির্বাচিত ১০০ যুবক প্রতিনিধিদের। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন ছাড়াও যুবক প্রতিনিধিদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায় যা দিয়ে ভবিষ্যতে সমাজের উন্নয়ন করতে পারে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে। ২০১২ সালে ১০০ জন যুবকদের নিয়ে ভারত ভ্রমণের মাধ্যমে এই কর্মসূচীর সূচনা হয় তারপর থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত ১০০ জন যুবক প্রতিনিধি ভারতে নিয়ে যায় ভারতীয় হাই কমিশন। করোনা মহামারি (কোভিড-১৯) এর জন্য ২ বছর এই কর্মসূচীর আওতায় ভ্রমণ বন্ধ থাকলেও ২০২২ সালে পুনরায় ১০০ তরুণ-তরুণী ভারত ভ্রমণের সুযোগ পায়। বিশেষ কারণ ছাড়া প্রতি বছর এই কর্মসূচী চালু রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশস্থ ভারতীয় হাই কমিশন। 
ভারতীয় হাই কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (https://www.hcidhaka.gov.in/) ও বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশনের ফেসবুক পেজে (https://www.facebook.com/BangladeshYouthDelegationToIndia?mibextid=ZbWKwL)নতুন যুবক প্রতিনিধি নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি ও অন্যান্য তথ্যাদি প্রদান করে থাকে। সাধারণত, আগ্রহী যুবকদের থেকে অনলাইনে আবেদনের পাশাপাশি নিজের সম্পর্কে ১.৫-২ মিনিটের একটি ভিডিও চায়, যা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে আপলোডকৃত হতে হয়। আবেদনের কিছু শর্ত রয়েছে, যা হলো-
• অংশগ্রহণকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী হওয়া যাবে না।
• অংশগ্রহণকারীর অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা একটি বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকতে হবে।
• অংশগ্রহণকারীকে এসএসসি/সমমান পাস হতে হবে।
• অংশগ্রহণকারীর বয়স ২১ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
• অংশগ্রহণকারীর অবশ্যই কোনো ধরনের পূর্ববর্তী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য থাকা যাবে না।
• অংশগ্রহণকারীদের অবশ্যই আবেদনপত্রে সব বিবরণ পূরণ করতে হবে। আবেদন জমা দেওয়ার আগে ফরমের বাধ্যতামূলক ক্ষেত্র অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
• আবেদন করার জন্য কোনো ফি পরিশোধ করা লাগবে না।
• পরিচায়ক ভিডিওর অডিও এবং ভিজ্যুয়াল অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে (গুণমান 360P বা তার বেশি হওয়া উচিত)। অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের ভিডিও বাংলায় বা ইংরেজি ভাষায় করতে পারেন।
• অংশগ্রহণকারীদের অবশ্যই সঠিকভাবে আবেদনপত্র পূরণ এবং জমা দিতে হবে। অসম্পূর্ণ আবেদন বাতিল করা হবে।
• একজন প্রার্থীর একাধিক আবেদন গ্রহণ করা হবে না এবং আবেদনকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে।
• ভারতীয় হাইকমিশন অসম্পূর্ণ, সাংঘর্ষিক অথবা নির্দেশিকায় উল্লিখিত প্রবেশের প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হলে বা আবেদনটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে করা পরবর্তী আপডেটের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে তা অযোগ্য ঘোষণা করার অধিকার সংরক্ষণ করে। ভারতীয় হাইকমিশন আপত্তিকর বা অশ্লীল বলে বিবেচিত যেকোনো আবেদন বা মন্তব্য অপসারণ করার অধিকার সংরক্ষণ করে।
উপরিউক্ত শর্ত মেনে নিদিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আবেদন করা হলে ভারতীয় হাই কমিশন আবেদন যাচাই বাছাই করে ভাইভা বা অডিশনের জন্য ডাকবে (আবেদনে প্রদত্ত ইমেইল ও মোবাইল)। উক্ত অডিশনে সফল প্রার্থীর পাসপোর্ট ও অন্যান্য তথ্য পুনরায় যাচাই বাছাই করার পর ফাইনাল বা চূড়ান্ত ইমেইল দিবে যারা নির্বাচিত হয়েছেন শুধুমাত্র তাদেরকে। তারপর নির্বাচিত যুবক প্রতিনিধিদের নিয়ে ফ্লাগ অফ ইভেন্ট করে পরিচিতি পর্ব, উপহারস, ভ্রমণ নির্দেশনা ও অন্যান্য তথ্য প্রদান করবে ভারতীয় হাই কমিশন। তারপর ভারতের ভ্রমণের জন্য ঢাকা থেকে ফ্লাইট। ভারত গিয়ে থাকা,খাওয়াও নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ থেকে নেওয়ার পর ভারতে উন্নতমানের আবাসিক হোটেলে রাখার পাশাপাশি উন্নতমানের বুফে পদ্ধতিতে খাবার পরিবেশন ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য স্পেশাল পুলিশ টিম মোতায়েন করা থাকে। ভারতের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখার পাশাপাশি সরকারি অফিস ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ (যেমন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, রাজ্য সরকারের গভর্ণর ইত্যাদি)। পাশাপাশি উন্নত নগর ও প্রতিষ্ঠান (যেমন শিক্ষা ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি) ভ্রমণের সাথে শেখার সুযোগ। এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখনে দুই দেশের শিল্পী তাদের সংস্কৃতি তুলে ধরার সুযোগ পায়। এই কর্মসূচীটি যেন প্রতিভাময় তরুণ-তরুণীদের একত্রিত করার একটি মঞ্চ যেখানে সবাই নিজের মধ্যে ভাতৃত্ববোধ বজায় রেখে সমাজের জন্য কাজ করে যায়। ভারত ভ্রমণের মাধ্যমেই এই কর্মসূচী শেষ হয়ে যায় না, দেশে ফেরার পর ফিডব্যাক সেশনের আয়োজন করা হয়। তারপর ভারতীয় হাই কমিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করা হয় এবং একসাথে কাজ করার বিভিন্ন সুযোগও প্রদান করা হয়ে থাকে। তাছাড়াও বিগত সকল বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেট নিয়ে এ্যালামনাই আছে যেখানে পারস্পরিক সহযোগিতায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন প্রোগ্রাম-২০২২ এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ-
• বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য হোটেলে ফ্লাগ অফ ইভেন্ট আয়োজন যেখানে ভারতের হাই কমিশনের ব্যক্তিবর্গ ও বাংলাদেশের মাননীয় মন্ত্রী, চলচ্চিত্র শিল্পী, গায়ক, খেলোয়াড়, শিক্ষক ও বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশনের এ্যালামনাই উপস্থিত ছিলেন।

• দিন-১: সকালে ঢাকা থেকে দিল্লির উদ্দেশ্য ফ্লাইট, দুপুরে দিল্লিতে উষ্ণ অভ্যর্থনা শেষে প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা ভ্রমণ।

• দিন-২: সকালে দিল্লি থেকে বাসে আগ্রার উদ্দেশ্য রওনা, দুপুরে তাজমহল দর্শন এবং বিকেলে আগ্রা ফোর্ট (আগ্রা কেল্লা) ভ্রমন সাথে মনোমুগ্ধকর ব্যাখ্যার জন্য গাইডও ছিল।

• দিন-৩: সকালে ন্যাশানাল স্কুল অব ড্রামা ইন্সটিটিউটে গমন, দুপুরে ভারতের ফরেন মিনিস্ট্রিতে অফিসিয়ালদের সাথে মিটিং এবং বিকেলে ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ ও চা-চক্র।

• দিন-৪: সকালে কর্ণাটক রাজ্যের উদ্দেশ্য ফ্লাইট, দুপুরে কর্ণাটক রাজ্যের গভর্ণরের সাথে সাক্ষাৎ, রাজভবন পরিক্রমা ও জলপান, বিকালে কর্ণাটকের বিধানসভা দর্শন এবং সন্ধ্যায় আর্ট অব লিভিং প্রতিষ্ঠানে শ্রী শ্রী রবিশঙ্করের বক্তৃতা শ্রবণ।

• দিন-৫: সকালে মাইসোরের উদ্দেশ্য যাত্রা, দুপুরের মাইসোর প্যালেস দর্শন, বিকালে কৃষ্ণরাজার ম্যানমেইড ড্যাম (বাঁধ) ও বৃন্দাবন গার্ডেন ভ্রমণের শেষে রাত চমৎকার ওয়াটার লাইট শো।

• দিন-৬: সকালে মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দেশের জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সংস্কৃতির বিনিময় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ভ্রমণ, দুপুরে মাইসোরের কৃষ্ণ রাজেন্দ্র হাসপাতালে চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলাপচারিতা এবং বিকেলে প্রযুক্তির উৎকৃষ্ট উদাহরণ ইনফোসিস ক্যাম্পাস ভ্রমণ ও শিক্ষন পদ্ধতি নিয়ে ডকুমেন্টারি উপভোগ।

• দিন-৭: সকালে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজম্যান্টের ব্যাঙ্গালোর শাখা ভ্রমণ ও প্রশ্ন-উত্তর সেশনের পাশাপাশি অসাধারণ স্থাপত্যশৈলি উপভোগ, দুপুরে দিল্লির উদ্দেশ্য ফ্লাইটে রওনা।

• দিন-৮: সকালে ভারতের ওয়্যার মিউজিয়াম (যুদ্ধ জাদুঘর) ভ্রমণ, দুপুরে ইন্ডিয়া গেট (ভারত দ্বার), দিল্লি ভ্রমণ শেষে বিকেলে কেনাকাটা দিল্লির শপিং সেন্টার থেকে এবং সন্ধ্যায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেখানে দুই দেশের শিল্পী তাদের সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন। তাছাড়া রাতে ভারতের মাননীয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সাথে ডিনার ও উপহার গ্রহণ ছিল অবিস্মরণীয়।

• দিন-৯: সকালে নাস্তা সেরে বাংলাদেশে আসার জন্য নিউ দিল্লি থেকে বাংলাদেশের ফ্লাইট এবং সন্ধ্যায় ভারতীয় হাই কমিশনের অফিসে ফিডব্যাক সেশন।

বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন প্রোগ্রামের সফর শেষ হলেও রয়ে যায় রেশ। দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ আর ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখার পরও মনে রয়ে যায় আরো দেখার বাসনা। তাদের দেশের শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি যেমন আমদেরকে ঋদ্ধ করবে তেমনি আমাদের সংস্কৃতি, ব্যবহার তাদেরকে আমাদের দেশ ভ্রমণের জন্য উৎসাহিত করবে। উভয় দেশের পারস্পরিক সম্প্রীতি উন্নয়নের সাথে সমাজ তথা মানুষের কল্যানে এই যুবক প্রতিনিধি কাজ করে যাবে।
এইবছরের রেজিষ্ট্রেশন লিংক: https://www.hcidhaka.gov.in/BYD2023
লেখকঃ
চন্দন কুমার পাল 
সহকারী অধ্যাপক 
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ 
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।
এবং
বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন এ্যালামনাই
বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন প্রোগ্রাম-২০২৩


প্রজন্মনিউজ২৪/কেএমআই

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ