জাপোরিঝিয়া নিয়ে সর্তক করলেন গুতেরেস-এরদোয়ান

প্রকাশিত: ১৯ অগাস্ট, ২০২২ ১১:২৩:২৩

জাপোরিঝিয়া নিয়ে সর্তক করলেন গুতেরেস-এরদোয়ান

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি  থেকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালিয়ে ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিঝিয়া নিয়ন্ত্রণে নেয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন থাকা অবস্থায় সেখানে বেশ কয়েকবার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ফলে বিশ্বব্যাপী এ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। যদিও এই বিস্ফোরণের দায় রাশিয়া বা ইউক্রেন কেউ স্বীকার করেনি। জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দখলদারিত্ব আর বিস্ফোরণের ফলে যে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে ইউক্রেনে সফর করেছে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

পশ্চিম ইউক্রেনের এলভিভ শহরে জাতিসংঘের মহাসচিব ও তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সাথে বৃহস্পতিবার বৈঠক করেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সদস্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসময় জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা দিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠকের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক বিবৃতিতে বলেন, জাতিসংঘকে অবশ্যই কৌশলপূর্ণ এই কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অঞ্চলটি বেসামরিকীকরণ এবং রুশ  সৈন্যদের থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত দাবি করেন তিনি।

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ এখন রাশিয়ার হাতে। ওই পারমাণবিক স্থাপনা ঘিরে উভয়পক্ষের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এ নিয়ে বিভিন্ন দেশের নেতারা সতর্ক করেছেন। এবার সতর্ক করলেন ইউক্রেন সফররত এরদোয়ান ও গুতেরেস।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বলেন, ইউক্রেনের ওই পারমাণবিক স্থাপনা ঘিরে বর্তমান যে পরিস্থিতি সেটা নিয়ে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন। স্থাপনাটি বেসমারকিকরণ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই এভাবে বলতে হবে, জাপোরিঝিয়ার যে কোনো ক্ষতিই হবে আত্মঘাতী।’ ইউক্রেনে একটি পারমাণবিক বিপর্যয়ের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর প্রথমবার দেশটি সফরে গেছেন তিনি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক শেষে জাতিসংঘ মহাসচিবের মতো এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন তিনি।

গত বুধবার ইউক্রেনে পৌঁছেছেন গুতেরেস। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর সামরিক অভিযান শুরুর পর এটা তার দ্বিতীয় ইউক্রেন সফর। গত এপ্রিলে তিনি ইউক্রেনে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্টে ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন। তার আগে মস্কোয় গিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে উদ্বেগ বেড়েছে। দুই পক্ষের তীব্র লড়াইয়ে পারমাণবিক দুর্ঘটনারও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ইউক্রেনের অভিযোগ, রুশ সেনারা পারমাণবিক স্থাপনাটি নিয়ে ব্ল্যাকমেল করছে। সেখানে ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেছে। তবে মস্কোর পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, কেবলমাত্র জরুরি অবস্থায় মস্কো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে। বৃহস্পতিবার এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র নিচায়েব এই মন্তব্য করেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক এই মুখপাত্র আরও বলেন, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। রুশ সরকারের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়ার সামরিক নিয়মে কেবলমাত্র গণ ধ্বংসের হুমকির জবাবে, অথবা যখন কেবল রাষ্ট্রের (রাশিয়ার) অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে তখন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয় রয়েছে।

এরদোয়ান ও গুতেরেসের ইউক্রেন সফরের একদিন আগে গত বুধবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তারা জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেনি। সেখানে শুধু পাহারা দেওয়ার জন্য সেনা রয়েছে। কিয়েভের বিরুদ্ধে সেখানে হামলার উসকানির অভিযোগ এনেছে রাশিয়া।

এর আগে বুধবার সকালে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রুশ সেনাদের দখলে থাকায় সেটি নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে এবং পারমাণবিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়েছে। তিনি জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জরুরি পরিদর্শন করার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানান।

ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে বৃহস্পতিবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। এ হামলার কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ইউক্রেন সফরের মধ্যে খারকিভে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গত বুধবারও ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে সাতজন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে এএফপি।

খারকিভ অঞ্চলের প্রধান ওলেগ সাইনেগোবভ বলেন, মস্কোর সেনারা রাশিয়া থেকে কমপক্ষে আটটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এতে এক শিশুসহ তিনজন নিহত হন। আটজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। খারকিভের দক্ষিণ–পশ্চিমে ক্রাশনোগারাদ শহরে পৃথক হামলায় একটি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়েছে। সেখানে দুজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন।

খারকিভের হামলা নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মাইখাইলো পোদোলিয়াক বলেন, ‘খারকিভের ১৭৫ দিনের বিভীষিকা। দৈনন্দিন সন্ত্রাস ও আবাসিক ভবন এবং বেসামরিক লোকজনের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটছে।’

জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো দিয়ে ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানির চুক্তি করে মস্কো ও কিয়েভ। চুক্তির শর্ত মেনে ইউক্রেনের তিনটি বন্দর থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানিও শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার গুরুত্বপূর্ণ ওদেসা বন্দর সফরে যাবেন গুতেরেস। এরপর তিনি তুরস্কে স্থাপন করা জয়েন্ট কো–অর্ডিনেশন সেন্টারে (জেসিসি) যাবেন। জেসিসি মূলত ইউক্রেন, রাশিয়া ও তুরস্কের কর্মকর্তারা জাহাজ পর্যবেক্ষণের জন্য সমন্বয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টের প্রথমার্ধে ২১টি জাহাজ ৫ লাখ ৬৩ হাজার টন খাদ্যশস্য ও কৃষিপণ্য নিয়ে ইউক্রেনের বন্দর ছেড়েছে। এর মধ্যে জাতিসংঘের খাদ্যসহায়তা বহনকারী একটি জাহাজ ২৩ হাজার টন গম নিয়ে গত বুধবার বসফরাস প্রণালিতে পৌঁছেছে।
 


প্রজন্মনিউজ২৪/এসএমএ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ