পোশাক কারখানা খুলছে আজ, যে সব শর্ত মানতে হবে মালিকদের

প্রকাশিত: ০১ অগাস্ট, ২০২১ ১০:৪০:২৩

পোশাক কারখানা খুলছে আজ, যে সব শর্ত মানতে হবে মালিকদের

ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই তৈরি পোশাকসহ সব রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা আজ রোববার খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে রপ্তানিকারকেরা হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। যদিও চলমান বিধিনিষেধে শ্রমিকেরা দূর দূরান্ত থেকে কিভাবে কর্মস্থলে ফিরবেন তার কোনো নির্দেশনা নেই।  তবে এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য ১৫টি শর্ত মানতে হবে কারখানা মালিকদের। গত শনিবার (৩১ জুলাই) রাতে গার্মেন্টস মালিকদের এ ব্যাপারে একটি চিঠি দিয়েছে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

শনিবার ভোর থেকে সারা দেশের সড়ক ও মহাসড়কে নেমেছিল হাজারো মানুষের ঢল। বেশিরভাগ ছিলেন গার্মেন্টসহ বিভিন্ন কল-কারখানার শ্রমিক। চাকরি হারাতে পারেন-এমন আশঙ্কায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ সহ্য করেও ভেঙে ভেঙে ঢাকায় আসতে হয়েছে তাদের। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ফেরি, রিকশা, লেগুনা, অটোরিকশা, মোটরবাইক ও হেঁটে প্রচণ্ড গরম সহ্য করে অথবা বৃষ্টিতে ভিজে ঢাকায় পৌঁছেন। প্রচণ্ড ভিড় ছিল দৌলতদিয়া ও বাংলাবাজার ফেরিঘাটে। এখানেই শেষ নয়, ঢাকার প্রবেশমুখে পৌঁছার পর ফের একই ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হন। 

আমিনবাজার, গাবতলী, বাবুবাজার, সায়েদাবাদ, আব্দুল্লাহপুর এলাকা দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। সেখান থেকে ভেঙে ভেঙে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ও পার্শ্ববর্তী এলাকার নিজ গন্তব্যে পৌঁছান তারা। এ সময় বিভিন্ন যানবাহনে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে যাত্রীদের। হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় যাত্রাপথে খাবার ও পানি সংকটে পড়তে হয় তাদের। 

পরিস্থিতি সামাল দিতে শনিবার রাত ৭টার পর থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল শুরু করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এসব নৌযানকে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা শ্রমিকরা ঢাকার দিকে যাত্রার দুর্ভোগ কমাতে এক দিনের জন্য ছাড় দিয়েছে সরকার। শনিবার রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব জেলার ডিসিদের মৌখিকভাবে এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে একাধিক জেলার ডিসি নিশ্চিত করেছেন। 

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, শ্রমিকরা যেভাবে রাস্তায় নেমেছেন তাতে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শ্রমিকদের সুন্দরভাবে ঢাকায় আসার জন্য গণপরিবহণের ব্যবস্থা করতে। তাই আমরা আপাতত এ ছাড় দিয়েছি। রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো গণপরিবহণে বাধা দেওয়া হবে না।

এদিকে গাদাগাদি করে যাতায়াত ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা সংক্রমণ আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধে পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পকলকারখানা খুলে দেওয়ায় গ্রাম থেকে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নেমেছে। এটা অনিয়ন্ত্রিত হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাব চলমান বিধিনিষেধে পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানের স্বাক্ষরিত চিঠিতে দেওয়া শর্তগুলো হলো-

১. কারখানা খোলা এবং ছুটির সময়ে গেইট বা কারখানার অভ্যন্তরে শ্রমিকদের ভিড় এড়ানোর লক্ষ্যে কারখানায় প্রবেশ ও কারখানা ত্যাগ করার বিষয়ে Staggered Time নির্ধারণ করার ওপর জোর দেওয়া।

২. শারিরীক দূরত্ব বজায় রেখে গমনাগমন পথের ব্যবহার নিশ্চিত করা (রশিশিকল দিয়ে পুরুষ ও নারী শ্রমিকদের জন্য আলাদা লাইন করে কারখানায় প্রবেশ এবং বাহির নিশ্চিত করতে হবে)।

৩. সম্ভাব্য ক্ষেত্রে কর্মঘণ্টা বিভিন্ন শিফটে নির্ধারণ করা।

৪. ফ্লোরে বা কাজের স্থানগুলোতে ভিড় এড়িয়ে চলতে শ্রমিকদের উৎসাহিত করা।

৫. দুপুরের খাবারের বিরতি বা অন্যান্য বিরতি যথাসম্ভব Staggered Time এ করা।

৬. কারখানায় প্রবেশের সময় শ্রমিকদের দেহের তাপমাত্রা পরিমাপ করা অথবা প্রয়োজনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা।

৭. কর্মস্থলে (কারখানা বা প্রতিষ্ঠান) সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে হাত পরিষ্কার সমগ্রী রাখা এবং নিয়মিত সেগুলো পুনর্ভর্তি করা।

৮. পর্যাপ্ত সংখ্যক সাবানের ব্যবস্থাসহ প্রধান ফটকে হাত ধৌতকরণ-স্থান নির্দিষ্ট করা।

৯. কারখানায় প্রবেশের সময় সব শ্রমিক-কর্মচারীর হাত ধৌতকরণ বা জীবাণুমুক্তকরণ নিশ্চিত করা।

১০. হাত ধৌতকরণ বা জীবাণুমুক্তকরণের প্রতিটি স্থানপানির কলের মধ্যে ন্যূনতম এক মিটার দূরত্ব নিশ্চিত করা।

১১. হাত ধৌতকরণ এবং জীবাণুমুক্তকরণের সঠিক পদ্ধতিগত নির্দেশাবলী দৃষ্টিগোচর স্থানে প্রদর্শন করা (যেমন উভয়হাত কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে ধৌত করা)।

১২. হাত ধোয়ার পর শুকানোর জন্য ড্রায়ার বা টিস্যু পেপারের ব্যবস্থা রাখা।

১৩. সার্বক্ষণিক মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা।

১৪. কারখানার বাইরে সভা সমাবেশ, গণপরিবহন এবং ভিড় এড়িয়ে চলতে শ্রমিকদের উৎসাহিত করা; এবং

১৫. করোনা সংক্রমণের উপসর্গ সম্পর্কে শ্রমিক-কর্মচারীদের অবহিত করা।

উল্লেখ্য, রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা কঠোর বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত রাখার জন্য সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার থেকে সব ধরনের রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা চালু হবে।

প্রজন্মনিউজ২৪/এফএম

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ