নির্বাচনী হাওয়ায় ধর্মের জয়গান

মুসলিম রাষ্ট্রের জীবন্ত প্রতীক বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১১:০৯:১০

মুসলিম রাষ্ট্রের জীবন্ত প্রতীক বাংলাদেশ

আজ শুক্রবার। নির্বাচনের কয়েকদিন মাত্র বাকী। ইসলামী দলের লোকজনের বাইরে যত দল আছে, হোক তা প্রবল ইসলাম বিরোধী, কিছু ইসলাম বিরোধী কিংবা মোটেও ইসলাম বিরোধী নয়। বরং ইসলাম বান্ধব, ধর্মপ্রিয়, মুসলমানের ধর্মীয় অধিকার প্রদানের পক্ষে। সব দলের নেতারাই জনমনের দিকে খেয়াল করে ধর্মীয় কাজে এখন অগ্রসর। আজ জুমায় দেখা যাবে এমন কোনো দলের প্রার্থী নেই, যিনি বড় কোনো মসজিদে জুমা আদায় করবেন না। টুপি পাঞ্জাবী পরে নির্বাচনী বিধিমালার ভেতরে থেকেই তারা ব্যাপক গণসংযোগ করবেন।


অনেকে চেষ্টা করবেন, মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে। এখানে ভোট চাওয়া নিষেধ, তারা চাইবেন দোয়া। অনেক প্রার্থী হলে মসজিদ কমিটি বা খতিব সাহেব তাদের কথা বলার সুযোগ দিতে চাইবেন না। তবে, সবাই দোয়া চেয়ে খতিব সাহেবকে চিরকুট পাঠাবেন। খতিব সাহেবও সবার মন রক্ষা করে নিরপেক্ষভাবে আম দোয়া করে দিবেন। বলবেন, হে আল্লাহ, আপনি যার নেতৃত্ব এই এলাকার জন্য ভালো মনে করেন তার দিকে মানুষের মনকে ঝুঁকিয়ে দিন। পাশ ফেল বড় কথা নয়, সবাইকে আপনি আপনার পথে অগ্রসর হওয়ার তাওফীক দান করুন।


সকলের দীন ও দুনিয়া মঙ্গলময় করুন। এদেশে নির্বাচনী প্রচার দু’রাকাত নামাজ পড়ে, একটি প্রখ্যাত ধর্মীয় চর্চা কেন্দ্র থেকে শুরু করার ঐতিহ্য আছে। কেউই এমন মনে করেন না যে, কোনো মাজারে ঘুমিয়ে থাকা বুজুর্গ ব্যক্তিটি তাকে পাশ করাবেন। তারা ভাবেন, আল্লাহর রহমত ও দয়া লাভের জন্য নামাজ ও দোয়া করে আমরা যাত্রা শুরু করলাম। বিশিষ্ট বুজুর্গ ব্যক্তির স্মৃতিবিজড়িত জায়গায় যাওয়ার উদ্দেশ্য মিডিয়াকে কাছে পাওয়া, মানুষকে এই বার্তা দেওয়া যে, আমরা মুসলমানের দেশে ইসলাম প্রচারক এই মানুষগুলোর জীবনের শিক্ষা বাস্তবায়নের পথ সুগম করবো।


তারা যেমন অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, শত শত বছর পরেও আমরা তাদেরই আদর্শের অনুসরণ করবো। প্রায় সময় দেখা যায়, নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরু করা হয় বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেটের দরগাহ মহল্লা থেকে। মাদরাসা কাসিমুল উলুম ও মসজিদ থেকে। হযরত শাহ জালাল রহ. এর বিশালায়তন মাকবারায়ে জালালী জিয়ারত করে। এবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা সেখান থেকে শুরু হয়। নির্বাচনী অভিযাত্রাও সেখান থেকে শুরু হয়। মহাজোটের প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী অভিযান শুরু করেছেন টুঙ্গি পাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার কমপ্লেক্স জিয়ারত, সংলগ্ন নামাজ খানায় নফল নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে।


রাজধানীতে ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচী শুরু করা হয় উত্তরখান শাহ কবির রহ. এর মাজার থেকে। সেখানে আ স ম রব, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ অনেক নেতা নামাজ বন্দেগী ও দোয়া দুরুদ পড়ে নির্বাচনী কাজ শুরু করেন। রাজশাহীতে শাহ মাখদুম, চট্টগ্রামে শাহ আমানত, খুলনায় খানজাহান আলীসহ দেশব্যাপী বড় বড় মসজিদ, প্রসিদ্ধ মাদরাসা, জনপ্রিয় দরবার ও খানাকাহ, ঐতিহাসিক মাজার প্রাঙ্গন থেকে সব প্রার্থী নির্বাচনী কাজ শুরু করে থাকেন। এটি প্রমাণ করে যে, সারা বছর মুখে যে যাই বলুন না কেন, দলের গঠনতন্ত্র ও ইশতেহারে যাই থাকুক না কেন, গণমানুষের হৃদয়ের স্পন্দন কিন্তু ওইসব মসজিদ, মাদরাসা, খানাকাহ, দরবার ও আউলিয়াদের স্মৃতিধন্য স্থান।


সারা দেশের দৈনিক ইনকিলাব ব্যুরো, আঞ্চলিক অফিস, জেলা উপজেলা ও অন্যান্য ইউনিট প্রতিনিধি তাদের প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতা হেড অফিসের সাথে শেয়ার করেন। এসব বাস্তবভিত্তিক তথ্যের আলোকে এ রিপোর্টটি তৈরি। এ যেন জীবন্ত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। নেতা ও ভোটারদের চলমান মনন ও মানসচিত্রের আঁকা রূপ। বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যত রূপকাররা যদি এ দৃশ্য, চিত্র ও বাস্তবতার আলোকে নিজেদের রাজনীতিকে সাজান তাহলেই কেবল তারা গণমুখী ও জনসম্পৃক্ত রাজনীতি করতে পারবেন। না হলে কেবল বিদেশ নির্ভর, ড্রয়িং রুম রাজনীতিই করে যেতে হবে। তাদের সে সংগঠক শক্তিটির সাথে সদাচরণ ও ন্যায্য অধিকার প্রদানের মাধ্যমে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতেই হবে।


দেশের সাড়ে চার লাখ মসজিদ (জুমা হয় এমন পৌনে তিন লাখ), ছোট বড় আড়াই লাখ মক্তব, কোরআন শিক্ষা কেন্দ্র, নুরানী, নাদিয়া, গণশিক্ষা কেন্দ্র, বিশ হাজার বড়  কওমী মাদরাসা, হাজার হাজার আলীয়া মাদরাসা এসবের সম্মিলিত আশি লাখ ছাত্র, অন্তত আড়াই কোটি গার্জিয়ান, খানাকাহ ও দরবারের সাথে যুক্ত, নানা রকম মাহফিলে আগত শীত মওসুমের ৬/৭ কোটি শ্রোতা, লাখো ইসলাম প্রিয় ছাত্র তরুণ তরুণীকে ভুলে গিয়ে বা বাদ দিয়ে এদেশে কারও কোনো রাজনীতি চলবে না। জনগণের রাজনীতি করতে গেলে আজ হোক কাল হোক এদের নিয়েই ভাবতে হবে, কর্মসূচী প্রনয়ণ করতে হবে, দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। ইসলাম এদেশে এখন ফ্যাক্টর। ইনশাআল্লাহ, আগামী দিনে হবে অ্যাক্টর।


বাংলাদেশ অচিরেই পরিণত হবে আধুনিক ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার রোল মডেল। আজকের জুমায় চোখে দেখা যাবে যে, মুসলিম রাষ্ট্রের জীবন্ত প্রতীক বাংলাদেশ। আগামী ৩০ ডিসেম্বর রোববার জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একাদশ সংসদের প্রার্থীরা এ দিনই নির্বাচিত হওয়ার কথা। দেশে ইসলামী দল যেসব আছে তাদের মূলনীতিই হচ্ছে ইসলাম। তাদের কর্মসূচীও ইসলাম ভিত্তিক। এরা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে না। কারণ, তাদের রাজনীতি আর ধর্ম অভিন্ন জিনিষ। কিছু দল এমন আছে যারা ধর্মকে চায় না। বলে, ধর্মহীন রাষ্ট্র ও রাজনীতিই ভালো। এদের অনেকে ধর্মকে জনগণের আফিম বলে প্রচার করে। নিজেদের কমিউনিষ্ট, সোশ্যালিষ্ট ও এক কথায় বামপন্থী বলে।


অবশ্য এদের অনেকে প্রয়োজনে বুর্জোয়া দলে যোগ দিয়ে এমপি মন্ত্রী হয়। তখন ধর্ম কর্মও করে। মিলাদ পড়ে, মাহফিলে যায়, নামাজ পড়ে, টুপিও লাগায়। জনগণ মন্তব্য করে বলে, এরাই আসলে ধর্ম ব্যবসায়ী। বক ধার্মিক। সারা বছর বলে, অসাম্প্রদায়িক ভাবধারার কথা কিন্তু ভোটের বাণিজ্যে নেমে তারাই হয়ে যায় বড় সাম্প্রদায়িক। কিছু দল আছে যাদের মূলনীতি ধর্ম বিদ্বেষী নয়। ধর্মকেও তারা স্বীকৃতি দেয়। মানুষের ধর্মীয় অধিকার অস্বীকার করেনা। কোনো দল আছে বলে, ‘কোরআন সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন পাশ করবো না’।


কোনো দল বলে, ইসলামী মূল্যবোধের কথা। কথায় আর কাজে মিল কতটুকু আছে বা নাই তা অবশ্য গবেষণার বিষয়। তাছাড়া বড় সব দল ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের দলে কোনো ইসলামী ব্যক্তিত্ব বা গুরুত্বপূর্ণ আলেমকে মনোনয়ন দেয়নি। জোটের আওতায় দু’চারজনকে দিলেও তা খুবই নগণ্য। তাছাড়া সম্ভাব্য পাশ করার আসনে বেরিয়ে আসতে পারেন এমন প্রার্থীকে খুব কমই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ এমন যেখানে সাধারণত তারা সিট পান না। একজন আলেম বা ইসলামী ব্যক্তিত্বকে সেই বনবাসেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফিরে আসলে আসুক, না হলে হারিয়ে যাক।


অনেকে বলেন, এর ছক বিশ্ব ইসলাম বিরোধী শক্তির তৈরি। তারা চায় না, বাংলাদেশে যে কোনো পর্যায়ে ইসলামী শক্তি যেন ক্ষমতায় না আসে। ৫/৭ জনও যেন কোনোভাবেই সংসদে না ঢুকে। আবার কেউ কেউ বলেন, এসব বিদেশীদের চিন্তা নয়, কায়েমী স্বার্থবাদী ভোট ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ নেতাদেরই কারসাজি এটি। ধর্মপ্রাণ মানুষের ভোট তাদের দরকার, আলেম সমাজের সমর্থন তাদের দরকার, পীর-মাশায়েখের দোয়া তাদের দরকার, কিন্তু তারা আসন ছাড়তে রাজী নন। হুজুরদের সামান্য কিছু হাদিয়া বা পকেট খরচ দিয়ে তারা তাদের শক্তিটুকু দখল করে নেবেন।


জীবন গেলেও এসব দক্ষ, যোগ্য, জনদরদী, নির্লোভ, আদর্শবান লোকগুলোকে জননেতা বানাবেন না। সংসদে ঢুকাবেন না। গোড়া শক্ত হতে দেবেন না। তাহলে রাজনীতির কোয়ালিটি বদলে যাবে। নিজেদের আসন ছুটে যাবে। চুরি-ডাকাতি, লুটপাট, ধোঁকাবাজিসহ নানা দুষ্কর্ম ছেড়ে ভালো হয়ে যেতে হবে। মানুষ যদি একবার সমাজের তুলনামূলক ভালো নেতৃত্বের সন্ধান পেয়ে যায়, তাহলে পুরনোদের ভাত থাকবে না। যে যত কৌশলই করুক, দিন বদলে যাচ্ছে। মানুষ সচেতন হচ্ছে। ৫০ ভাগ মহিলা ভোটার ও ২৬ ভাগ নতুন ভোটার ভালো মন্দ চিনতে শুরু করেছে।


সব দলের প্রার্থীরাই দেশের ভাব-নমুনা ধরতে পারছেন। বাতাস কোনদিকে বইছে তা বুদ্ধিমান রাজনীতিকরা বুঝতে ভুল করেননি। শুরুতে যে আলোচনাটি করা হয়েছে। এককথায়, বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ হতে চলেছে, মুসলিম সমাজ ব্যবস্থার রোল মডেল।
তথ্যসূত্র:ইনকিলাব

 

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ