প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১১:৫৯:৩৩
মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নিরাপত্তাহীনতা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনার কারণে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যগুলো ম্লান হয়ে যাচ্ছে। একটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কারণে মানুষ কথা বলতেও এখন সতর্ক। নিজেই নিজের মুখ বন্ধ করে রাখছে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি জ্যামিতিক হারে বাড়ছে নারী ও শিশু নির্যাতন। ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে এসব কথা বলেন মানবাধিকার কর্মীরা।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২০১৯ সালের এই ১১ মাসে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ৩৬২ জনের। ২০১৮ সালে ৪৬৬ জন এবং ২০১৭ সালে ১৬২ জন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এছাড়াও সীমান্ত হত্যা, সাংবাদিক নির্যাতন, নারী ও শিশু নির্যাতন ও হত্যার বিষয়ে সংগঠনটি বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মতে, সারাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও মনে করে, দেশে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়নি। সবকিছু ঠিক থাকলে তো আর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেরও দরকার নাই।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, এক কথায় বলতে গেলে মানবাধিকার পরিস্থিতি বর্তমানে ‘বিভীষিকাময়’। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলে আসছে। গুমের ঘটনা ঘটছে। মানবাধিকার কর্মীরা এ বিষয়ে একটা স্বাধীন তদন্ত কমিশনের কথা বলছেন। কিন্তু সেই তদন্ত কমিশনের বিষয়ে সরকার এখন পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সংখ্যা দিয়ে বিষয়গুলো বিবেচনা না করে বলছি, প্রতিনিয়ত এ ঘটনাগুলো ঘটছে।
মত প্রকাশের ক্ষেত্রে দেশে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজমান। যেখানে মানুষ ভয়ার্ত পরিবেশের কারণে নিজেই নিজের মুখ বন্ধ করে দিচ্ছে। কথা বলার ক্ষেত্রে এত বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছে যে, কথা বলার চেয়ে না বলাটাই শ্রেয় মনে করছে। ফলে সামগ্রিকভাবে বলা যায়, বিভীষিকাময় এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে মানবাধিকার দিবস আমাদের মাঝে সমাগত।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কে নূর খান লিটন আরও বলেন, উন্মুক্ত ও স্বাধীনভাবে সংবাদ চর্চা বলেন, আর স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের কথা বলেন, নানা বাধার কারণে এখানে সংবাদকর্মীরা বিভিন্ন সময় নানাভাবে লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। কোনও ক্ষেত্রে ডিজিটাল অ্যাক্টের কারণে এক ধরনের ভয়ার্ত পরিবেশের মধ্যে তারা সময় কাটাচ্ছেন। ফলে অনেক ঘটনার বিশ্লেষণ না করে অনেক ঘটনাকে পাশ কেটে যেতে হচ্ছে তাদের। এক ধরনের অদৃশ্য চাপের মধ্যেই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন সংবাদকর্মীরা।
২০১৬ সালের ২ আগস্ট থেকে ২০১৯ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন কাজী রিয়াজুল হক। দেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের মধ্যে একটা মিশ্র ধারণা আছে।
কিছু ক্ষেত্রে আমাদের অভূতপূর্ব সাফল্য হয়েছে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, উন্নয়ন এসব মানুষের অধিকার। এসব ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য অনেক। তবে সেই সঙ্গে মানুষের নিরাপত্তা দিতে হবে। যে কোনও নির্যাতন থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে। কাউকে বিনা বিচারে হত্যা করা যাবে না। এগুলোও মানুষের অধিকার। মিশ্র প্রতিক্রিয়া এজন্য বললাম যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ভালো সাফল্য আছে।
আবার কিছু ক্ষেত্রে আমরা এখনও সাফল্য অর্জন করতে পারিনি। বলতে হয় যে, আমাদের অনেকগুলো অর্জন আছে, সেই অর্জনগুলো কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনার জন্য, যেমন মানুষের বেঁচে থাকার যে অধিকার, তা থেকে মানুষ যখন বঞ্চিত হয়, মানুষের মনে যদি শঙ্কা থাকে, তাহলে আমাদের সেই অর্জনটা থাকে না। ম্লান হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছি।
মানবাধিকার কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের যেমন অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও অগ্রগতি হচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে একটা মানুষ যদি তার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চলাফেরা করতে না পারে, তার চলাফেরার স্বাধীনতা যদি বিঘ্নিত হয়, তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা যদি বিঘ্নিত হয়, তার বেঁচে থাকার ব্যাপারে যদি শঙ্কা থাকে, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, সেটাতো কাম্য নয়। একটা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যদি হয়, একটা মানুষ যদি গুম হয়ে যায় তাহলে সেই সাফল্যগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মানবাধিকার কমিশন কেন আছে দেশে? আছেই তো এসব অন্যায়, অনাচার সম্পর্কে কথা বলার জন্য। অন্যায় যদি হয়ে থাকে সেগুলোর ব্যাপারে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য, সোচ্চার হওয়ার জন্য, সরকারকে সুপারিশ করার জন্য। সুতরাং কোনও দেশেইতো বেহেশত নাই। প্রত্যেক দেশেই কোনও না কোনও সমস্যা আছে। প্রত্যেক দেশেই মানবাধিকার কমিশনের মতো কমিশন আছে।
আমাদের দেশও তো আর তেমন কিছু হয়ে যায়নি। এখানে অনাচার, অত্যাচার অনেক ঘটনাই অনেক সময় হয়ে যায়। সেগুলোকে যাতে কোনোমতেই ছাড় দেওয়া না হয়, ভবিষ্যতে যাতে এর কোনও পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য কঠোর অবস্থানে থেকে সবসময় আমরা বলেছি এবং বলবো, সরকারকেও আমরা বিষয়গুলো সবসময় স্মরণ করিয়ে দেবো। এর মাধ্যমেই পর্যায়ক্রমে সমাজ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘন দূর হবে। এটাই হচ্ছে আমাদের প্রত্যাশা। আমরা কখনই বলবো না যে, সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। ঠিক হয়ে গেলে তো আমাদের (জাতীয় মানবাধিকার কমিশন) আর দরকার নাই।আজ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস: গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় ম্লান হচ্ছে দেশের সব অর্জন
মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নিরাপত্তাহীনতা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনার কারণে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যগুলো ম্লান হয়ে যাচ্ছে। একটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কারণে মানুষ কথা বলতেও এখন সতর্ক। নিজেই নিজের মুখ বন্ধ করে রাখছে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি জ্যামিতিক হারে বাড়ছে নারী ও শিশু নির্যাতন। ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে এসব কথা বলেন মানবাধিকার কর্মীরা।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২০১৯ সালের এই ১১ মাসে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ৩৬২ জনের। ২০১৮ সালে ৪৬৬ জন এবং ২০১৭ সালে ১৬২ জন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এছাড়াও সীমান্ত হত্যা, সাংবাদিক নির্যাতন, নারী ও শিশু নির্যাতন ও হত্যার বিষয়ে সংগঠনটি বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মতে, সারাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও মনে করে, দেশে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়নি। সবকিছু ঠিক থাকলে তো আর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেরও দরকার নাই।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, এক কথায় বলতে গেলে মানবাধিকার পরিস্থিতি বর্তমানে ‘বিভীষিকাময়’। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলে আসছে। গুমের ঘটনা ঘটছে। মানবাধিকার কর্মীরা এ বিষয়ে একটা স্বাধীন তদন্ত কমিশনের কথা বলছেন। কিন্তু সেই তদন্ত কমিশনের বিষয়ে সরকার এখন পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সংখ্যা দিয়ে বিষয়গুলো বিবেচনা না করে বলছি, প্রতিনিয়ত এ ঘটনাগুলো ঘটছে।
মত প্রকাশের ক্ষেত্রে দেশে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজমান। যেখানে মানুষ ভয়ার্ত পরিবেশের কারণে নিজেই নিজের মুখ বন্ধ করে দিচ্ছে। কথা বলার ক্ষেত্রে এত বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছে যে, কথা বলার চেয়ে না বলাটাই শ্রেয় মনে করছে। ফলে সামগ্রিকভাবে বলা যায়, বিভীষিকাময় এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে মানবাধিকার দিবস আমাদের মাঝে সমাগত।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কে নূর খান লিটন আরও বলেন, উন্মুক্ত ও স্বাধীনভাবে সংবাদ চর্চা বলেন, আর স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের কথা বলেন, নানা বাধার কারণে এখানে সংবাদকর্মীরা বিভিন্ন সময় নানাভাবে লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। কোনও ক্ষেত্রে ডিজিটাল অ্যাক্টের কারণে এক ধরনের ভয়ার্ত পরিবেশের মধ্যে তারা সময় কাটাচ্ছেন। ফলে অনেক ঘটনার বিশ্লেষণ না করে অনেক ঘটনাকে পাশ কেটে যেতে হচ্ছে তাদের। এক ধরনের অদৃশ্য চাপের মধ্যেই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন সংবাদকর্মীরা।
২০১৬ সালের ২ আগস্ট থেকে ২০১৯ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন কাজী রিয়াজুল হক। দেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের মধ্যে একটা মিশ্র ধারণা আছে।
কিছু ক্ষেত্রে আমাদের অভূতপূর্ব সাফল্য হয়েছে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, উন্নয়ন এসব মানুষের অধিকার। এসব ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য অনেক। তবে সেই সঙ্গে মানুষের নিরাপত্তা দিতে হবে। যে কোনও নির্যাতন থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে। কাউকে বিনা বিচারে হত্যা করা যাবে না। এগুলোও মানুষের অধিকার। মিশ্র প্রতিক্রিয়া এজন্য বললাম যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ভালো সাফল্য আছে।
আবার কিছু ক্ষেত্রে আমরা এখনও সাফল্য অর্জন করতে পারিনি। বলতে হয় যে, আমাদের অনেকগুলো অর্জন আছে, সেই অর্জনগুলো কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনার জন্য, যেমন মানুষের বেঁচে থাকার যে অধিকার, তা থেকে মানুষ যখন বঞ্চিত হয়, মানুষের মনে যদি শঙ্কা থাকে, তাহলে আমাদের সেই অর্জনটা থাকে না। ম্লান হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছি।
মানবাধিকার কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের যেমন অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও অগ্রগতি হচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে একটা মানুষ যদি তার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চলাফেরা করতে না পারে, তার চলাফেরার স্বাধীনতা যদি বিঘ্নিত হয়, তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা যদি বিঘ্নিত হয়, তার বেঁচে থাকার ব্যাপারে যদি শঙ্কা থাকে, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, সেটাতো কাম্য নয়। একটা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যদি হয়, একটা মানুষ যদি গুম হয়ে যায় তাহলে সেই সাফল্যগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মানবাধিকার কমিশন কেন আছে দেশে? আছেই তো এসব অন্যায়, অনাচার সম্পর্কে কথা বলার জন্য। অন্যায় যদি হয়ে থাকে সেগুলোর ব্যাপারে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য, সোচ্চার হওয়ার জন্য, সরকারকে সুপারিশ করার জন্য। সুতরাং কোনও দেশেইতো বেহেশত নাই। প্রত্যেক দেশেই কোনও না কোনও সমস্যা আছে। প্রত্যেক দেশেই মানবাধিকার কমিশনের মতো কমিশন আছে।
আমাদের দেশও তো আর তেমন কিছু হয়ে যায়নি। এখানে অনাচার, অত্যাচার অনেক ঘটনাই অনেক সময় হয়ে যায়। সেগুলোকে যাতে কোনোমতেই ছাড় দেওয়া না হয়, ভবিষ্যতে যাতে এর কোনও পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য কঠোর অবস্থানে থেকে সবসময় আমরা বলেছি এবং বলবো, সরকারকেও আমরা বিষয়গুলো সবসময় স্মরণ করিয়ে দেবো। এর মাধ্যমেই পর্যায়ক্রমে সমাজ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘন দূর হবে। এটাই হচ্ছে আমাদের প্রত্যাশা। আমরা কখনই বলবো না যে, সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। ঠিক হয়ে গেলে তো আমাদের (জাতীয় মানবাধিকার কমিশন) আর দরকার নাই। আজ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস: গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় ম্লান হচ্ছে দেশের সব অর্জন
মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নিরাপত্তাহীনতা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনার কারণে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যগুলো ম্লান হয়ে যাচ্ছে। একটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কারণে মানুষ কথা বলতেও এখন সতর্ক। নিজেই নিজের মুখ বন্ধ করে রাখছে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি জ্যামিতিক হারে বাড়ছে নারী ও শিশু নির্যাতন। ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে এসব কথা বলেন মানবাধিকার কর্মীরা।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২০১৯ সালের এই ১১ মাসে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ৩৬২ জনের। ২০১৮ সালে ৪৬৬ জন এবং ২০১৭ সালে ১৬২ জন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এছাড়াও সীমান্ত হত্যা, সাংবাদিক নির্যাতন, নারী ও শিশু নির্যাতন ও হত্যার বিষয়ে সংগঠনটি বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মতে, সারাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও মনে করে, দেশে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়নি। সবকিছু ঠিক থাকলে তো আর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেরও দরকার নাই।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, এক কথায় বলতে গেলে মানবাধিকার পরিস্থিতি বর্তমানে ‘বিভীষিকাময়’। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলে আসছে। গুমের ঘটনা ঘটছে। মানবাধিকার কর্মীরা এ বিষয়ে একটা স্বাধীন তদন্ত কমিশনের কথা বলছেন। কিন্তু সেই তদন্ত কমিশনের বিষয়ে সরকার এখন পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সংখ্যা দিয়ে বিষয়গুলো বিবেচনা না করে বলছি, প্রতিনিয়ত এ ঘটনাগুলো ঘটছে।
মত প্রকাশের ক্ষেত্রে দেশে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজমান। যেখানে মানুষ ভয়ার্ত পরিবেশের কারণে নিজেই নিজের মুখ বন্ধ করে দিচ্ছে। কথা বলার ক্ষেত্রে এত বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছে যে, কথা বলার চেয়ে না বলাটাই শ্রেয় মনে করছে। ফলে সামগ্রিকভাবে বলা যায়, বিভীষিকাময় এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে মানবাধিকার দিবস আমাদের মাঝে সমাগত।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কে নূর খান লিটন আরও বলেন, উন্মুক্ত ও স্বাধীনভাবে সংবাদ চর্চা বলেন, আর স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের কথা বলেন, নানা বাধার কারণে এখানে সংবাদকর্মীরা বিভিন্ন সময় নানাভাবে লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। কোনও ক্ষেত্রে ডিজিটাল অ্যাক্টের কারণে এক ধরনের ভয়ার্ত পরিবেশের মধ্যে তারা সময় কাটাচ্ছেন। ফলে অনেক ঘটনার বিশ্লেষণ না করে অনেক ঘটনাকে পাশ কেটে যেতে হচ্ছে তাদের। এক ধরনের অদৃশ্য চাপের মধ্যেই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন সংবাদকর্মীরা।
২০১৬ সালের ২ আগস্ট থেকে ২০১৯ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন কাজী রিয়াজুল হক। দেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের মধ্যে একটা মিশ্র ধারণা আছে।
কিছু ক্ষেত্রে আমাদের অভূতপূর্ব সাফল্য হয়েছে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, উন্নয়ন এসব মানুষের অধিকার। এসব ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য অনেক। তবে সেই সঙ্গে মানুষের নিরাপত্তা দিতে হবে। যে কোনও নির্যাতন থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে। কাউকে বিনা বিচারে হত্যা করা যাবে না। এগুলোও মানুষের অধিকার। মিশ্র প্রতিক্রিয়া এজন্য বললাম যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ভালো সাফল্য আছে।
আবার কিছু ক্ষেত্রে আমরা এখনও সাফল্য অর্জন করতে পারিনি। বলতে হয় যে, আমাদের অনেকগুলো অর্জন আছে, সেই অর্জনগুলো কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনার জন্য, যেমন মানুষের বেঁচে থাকার যে অধিকার, তা থেকে মানুষ যখন বঞ্চিত হয়, মানুষের মনে যদি শঙ্কা থাকে, তাহলে আমাদের সেই অর্জনটা থাকে না। ম্লান হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছি।
মানবাধিকার কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের যেমন অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও অগ্রগতি হচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে একটা মানুষ যদি তার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চলাফেরা করতে না পারে, তার চলাফেরার স্বাধীনতা যদি বিঘ্নিত হয়, তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা যদি বিঘ্নিত হয়, তার বেঁচে থাকার ব্যাপারে যদি শঙ্কা থাকে, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, সেটাতো কাম্য নয়। একটা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যদি হয়, একটা মানুষ যদি গুম হয়ে যায় তাহলে সেই সাফল্যগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মানবাধিকার কমিশন কেন আছে দেশে? আছেই তো এসব অন্যায়, অনাচার সম্পর্কে কথা বলার জন্য। অন্যায় যদি হয়ে থাকে সেগুলোর ব্যাপারে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য, সোচ্চার হওয়ার জন্য, সরকারকে সুপারিশ করার জন্য। সুতরাং কোনও দেশেইতো বেহেশত নাই। প্রত্যেক দেশেই কোনও না কোনও সমস্যা আছে। প্রত্যেক দেশেই মানবাধিকার কমিশনের মতো কমিশন আছে।
আমাদের দেশও তো আর তেমন কিছু হয়ে যায়নি। এখানে অনাচার, অত্যাচার অনেক ঘটনাই অনেক সময় হয়ে যায়। সেগুলোকে যাতে কোনোমতেই ছাড় দেওয়া না হয়, ভবিষ্যতে যাতে এর কোনও পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য কঠোর অবস্থানে থেকে সবসময় আমরা বলেছি এবং বলবো, সরকারকেও আমরা বিষয়গুলো সবসময় স্মরণ করিয়ে দেবো। এর মাধ্যমেই পর্যায়ক্রমে সমাজ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘন দূর হবে। এটাই হচ্ছে আমাদের প্রত্যাশা। আমরা কখনই বলবো না যে, সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। ঠিক হয়ে গেলে তো আমাদের (জাতীয় মানবাধিকার কমিশন) আর দরকার নাই। বাংলা ট্রিবিউন
প্রজন্মনিউজ২৪/আঃমান্নান
সিংড়ায় অগ্নিকান্ডে পুড়লো ১২ স্বর্ণের দোকান, অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
প্রচণ্ড গরমে দিনের পরিবর্তে রাতে কাজ করবে ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা
জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ অন্ধকার: কাজী ফিরোজ
আগামীকাল রাজধানীর যেসব এলাকায় ১২ ঘন্টা গ্যাস থাকবে না
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে সমস্যার সমাধান হবে না: আব্দুস সালাম
২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি কমেছে ১৫.৪৯ শতাংশ
ইউএসএ বাংলা সাহিত্য সম্মেলন-২৪
Severity: Notice
Message: Undefined index: category
Filename: blog/details.php
Line Number: 417
Backtrace:
File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler
File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view
File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view
File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once