ফাঁকা ঢাকা নিরাপত্তা চাঁদরে ঢাকা

প্রকাশিত: ০৩ জুন, ২০১৯ ১২:৫০:৪৫

ফাঁকা ঢাকা নিরাপত্তা চাঁদরে ঢাকা

এবারের ঈদ-উল-ফিতরের ছুটি মঙ্গলবার থেকে শুরু হলেও বৃহস্পতিবার থেকে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা শুরু করেছেন ঢাকাবাসী। তাই সোমবার শেষ কর্মদিবসেও ঢাকা শহর অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেছে। তবে ফাঁকা এই শহরে নিরপাত্তা চাঁদরে ঢেকে দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সস্ত্রাস, মাদক, চাঁদাবাজি, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডসহ সকল ধরনের অপরাধ দমনে ও ফাঁকা ঢাকাকে নিরাপদ রাখতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। র‌্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তারা এমন তথ্য জানিয়েছেন।

র‌্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এবারের ঈদে নিরাপত্তার স্বার্থে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় আঠারো হাজার সদস্য রাজধানীজুড়ে কাজ করছে। রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশ পথসহ নগরীর অভিজাত এলাকগুলোতে চেকপোস্ট ও তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। এছাড়া ইউনিফর্ম টিমের মোবাইল ডিউটি, মোটরসাইকেল টহল, সিসি ক্যামেরায় অপরাধী চিহ্নিতকরণ, সিভিল টিমের টহল জোরদার করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, ব্যাংক-বীমাসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মার্কেটে এমনকি পাড়া-মহল্লা, আবাসিক এলাকাগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

জানা গেছে, ডিএমপিতে আটটি ক্রাইম জোনে ১০ হাজার পুলিশ কাজ করবে। এছাড়াও পুলিশের পাশাপাশি তিন হাজার র‌্যাব সদস্য, দুই হাজার আর্মড ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), তিন হাজার কমিউনিটি পুলিশ সদস্য ফাঁকা ঢাকায় নিরাপত্তা দিবে। এছাড়াও ডিএমপির ৫০টি থানার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্পও স্থাপন করা হয়েছে। চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে সতর্ক রয়েছে পুলিশ। বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সিসিটিভি চালু রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এদিকে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন পরামর্শের পর নগরীতে অনেকেই সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পশ্চিম তেজতুরী বাজার এলাকায় গিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে।

পশ্চিম তেজতুরী বাজার এলাকার ৪০ নম্বর বাসার কেয়ারটেকার তুহিন আহমদ বিবার্তাকে বলেন, ঈদে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য তাদের ছয়তালা বিশিষ্ট বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন পাড়ায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে দেখা গেছে।

এদিকে, এবারের ঈদে কেমন নিরাপত্তা থাকবে সে ব্যাপারে র‌্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথকভাবে ব্রিফ দিয়ে জানানো হয়েছে।

রবিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে র‌্যাব।

এ সময় র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেন, ঈদে ফাঁকা ঢাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে ফাঁকা ঢাকাকে নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, রমজানের শুরু থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলো ঘিরে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি ফিরতে এবং বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরতে র‌্যাবের তৎপরতা রয়েছে।

তিনি বলেন, ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বাস-ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে ১৫টি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সড়কে যানজট এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহিৃত করে দেশজুড়ে ৪২টি স্থানে র‌্যাবের নজরদারি রয়েছে।

২৪ ঘণ্টা সড়ক-নৌ এবং রেলপথে নজরদারি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ঈদে বাড়িতে যাত্রা এখনও স্বস্তিদায়ক রয়েছে আশাকরি, ফেরার যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হবে। আমরা চাই না সড়কে কোনো প্রাণহানি হোক।

বেনজির আহমেদ বলেন, জাতীয় ঈদগাহসহ রাজধানীতে পাঁচ শতাধিক ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানী ছাড়াও শোলাকিয়া, দিনাজপুরসহ সবকটি বড় ঈদ জামাতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে ঈদ উৎসবকে নিরাপদ করার ব্যবস্থা করা হবে।

সংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় তিন পর্যায়েই জঙ্গি হামলার হুমকি আছে। তবে নিজস্ব গোয়েন্দাদের পাশাপাশি অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে। অপতৎপরতা বা যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের জন্য র‌্যাব প্রস্তুত আছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ঈদের লম্বা ছুটিতে ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বাস, ট্রেন, লঞ্চ টার্মিনালের পাশাপাশি ছুটির সময়ে আবাসিক এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

অপরাধ রোধে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঈদ-উল-ফিতর অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন, উৎসব মুখর। তাই জনগণকে কোনো ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না; সেই চিন্তা করেই কাজ করা হচ্ছে।

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ