‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ৬

প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ ১০:০৮:০০

‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ৬

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে তিন বছর আগে রোহিঙ্গা শিবিরে আনসার সদস্য হত্যামামলার এক আসামিও রয়েছে। আগের দিন গভীর রাত থেকে গতকাল শুক্রবার ভোর পর্যন্ত কক্সবাজারের টেকনাফ, খুলনা সদর, ময়মনসিংহের ত্রিশাল, পুরান ঢাকার পার-গেণ্ডারিয়া ও কুমিল্লার দাউদকান্দিতে এসব ঘটনা ঘটে বলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন।

নিহতরা হলো টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এইচ ব্লকের মোহাম্মদ হোসেন ওরফে লাল বুইজ্জ্যার ছেলে নিহত নুরুল আলম (৩৫), দাউদকান্দির জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামের মাঈনুদ্দিনের ছেলে নিহত আল-আমিন (৪০), ঢাকার পার-গেন্ডারিয়া এলাকার আশরাফ আলীর ছেলে হযরত আলী (৩৫), খুলনার সোনাডাঙ্গার বসুপাড়া বাঁশতলা এলাকার আবদুল হকের ছেলে মাসুদ রানা (৩৫), ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড মহল্লার আবদুর রফিকের ছেলে আবদুর রশিদ (৫০), লক্ষ্মীপুর সদরের জিএমহাট ইউনিয়নের শাকচর এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে বিল্লাল হোসেন (২৫)। প্রথম দুজন ছাড়া বাকিরা সবাই মাদকের চোরাকারবারি বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাষ্য।

কক্সবাজার : র‌্যাব-১৫ ব্যাটালিয়নের টেকনাফ ক্যাম্পের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মির্জা শাহেদ মাহতাব  বলেন, শুক্রবার ভোরে র‌্যাবের একটি দল টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া এলাকায় একদল লোকের মুখোমুখি হলে তারা র‌্যাবের দিকে গুলি ছোড়ে। তখন র‌্যাব ও পাল্টা গুলি করে। প্রায় আধঘণ্টা গোলাগুলির পর নুরুল আলমকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে দুটি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও ১৩টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

টেকনাফের ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, নুরুল আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ক্যাম্পের কমান্ডার মো. আলী হোসেনকে গুলি করে হত্যা ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় করা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। সে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিল। ২০১৬ সালের ১৩ মে ভোরে নয়াপাড়ার মুচনী এলাকার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ক্যাম্পের কমান্ডার মো. আলী হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়; লুট করা হয় ১১টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬৭০ রাউন্ড গুলি।

পরদিন অজ্ঞাতপরিচয় ৩০-৩৫ জনের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মামলা করেন আনসার ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার মো. আলমগীর হোসেন। ওই বছরের শেষ দিকে নুরুলকে প্রধান আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এদিকে শুক্রবার ভোররাতে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের কাঁটাবুনিয়া সীমান্তে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বিল্লাল হোসেনের মৃত্যু হয় বলে বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আছাদুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের মরিচ্যা এলাকা থেকে বিল্লাল হোসেন নামে একজনকে ইয়াবাসহ আটক করা হয়। তাকে নিয়ে ভোররাতে বিজিবির একটি দল কাঁটাবুনিয়া সীমান্তে মাদক উদ্ধারে গেলে গুলির মুখে পড়ে। তখন বিজিবি সদস্যরাও গুলি ছুড়লে এক পর্যায়ে বিল্লাল গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে ৯ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছেন বিজিবি সদস্যরা।

খুলনা : মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শহরের সোনাডাঙ্গার নিরালা আবাসিকের দীঘিরপাড় এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে যায় পুলিশের একটি দল। ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলির মুখে পড়ে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। গোলাগুলি থামলে মাসুদ রানাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মাসুদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে বেশ কয়েকটি মামলা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান, ছোরা, চাপাতি, ১০০ ইয়াবা ও ৫৫০০ টাকা পাওয়া গেছে।’

ময়মনসিংহ : জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি শাহ কামাল আকন্দ বলেন, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১টার দিকে ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন হোমিও মেডিকেল কলেজের মাঠে অভিযানে গেলে পুলিশে দিকে ঢিল ও গুলি ছোড়া হয়। তখন পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা ছোড়ে। গোলাগুলি থেমে গেলে আবদুর রশিদকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বিরুদ্ধে থানায় সাতটি মামলা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান ও ১০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানে পুলিশের দুজন কনস্টেবলও আহত হয়েছেন।

ঢাকা : যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ পার-গেণ্ডারিয়া এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে পুলিশের দিকে গুলি ও বোমা ছোড়া হয়। গোলাগুলি থামার পর হযরত আলীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে তার কাছে একটি চাপাতি, একটি ছোরা, একটি হাতবোমা, ১১০০ ইয়াবা পাওয়া গেছে।

অভিযানে পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানান ওসি। হযরত আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা, ডাকাতি ও মাদক পাচারের অভিযোগে ৪০টি মামলা আছে।কুমিল্লা : তিতাস থানার ওসি সৈয়দ মোহাম্মদ আহসানুল ইসলাম  বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকালে গৌরীপুর-হোমনা সড়কের দড়িকান্দি সেতু এলাকায় ৫৮ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের একটি ঘটনায় দুজনকে ১৫ লাখ টাকাসহ আটক করে পুলিশ। রাতে দুজনের মধ্যে আল-আমিন নামে একজনকে নিয়ে বাকি টাকা উদ্ধারে অভিযানে নামে পুলিশ।

তিনি বলেন, রাত সাড়ে ৩টার দিকে দড়িকান্দি এলাকায় পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে আল-আমিনকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায় ‘একদল ডাকাত’। তখন পুলিশ গুলি ছুড়লে ‘ডাকাতদল’ পালিয়ে যায়। তাদের একটি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে আল-আমিনের গায়ে লাগে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। আল-আমিনের বিরুদ্ধে দাউদকান্দি ও তিতাস থানায় ডাকাতি ও ছিনতাইসহ একাধিক অভিযোগে মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি রিভলবার, একটি অস্ত্র ও পাঁচটি গুলি উদ্ধার করা হয়।

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ