রংপুরের বেগমের জন্ম ও মৃত্যু দিবস আজ

প্রকাশিত: ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১১:০৭:০৮

রংপুরের বেগমের জন্ম ও মৃত্যু দিবস আজ

মো. হামিদুর রহমান: বেগম রোকেয়া দিবস আজ। ৯ ডিসেম্বর বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত রংপুরের কন্যা বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৩৮তম জন্ম এবং ৮৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। দিনটি উপলক্ষে ঢাকা ও রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

রোকেয়া দিবস উপলক্ষে ৯ ডিসেম্বর, রবিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রোকেয়া পদক-২০১৮ প্রদান ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বেগম রোকেয়ার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারীমুক্তি, সমাজ সংস্কার ও প্রগতিশীল আন্দোলনের পথিকৃৎ। সামাজিক নানা বিধি-নিষেধ, নিয়ম-নীতির বেড়াজাল অগ্রাহ্য করে তিনি অবরোধবাসিনীদের মুক্তিদূত হিসেবে আর্বিভূত হন।’

‘বাঙালি মুসলিম নারীদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি পর্দার অন্তরালে থেকেই নারীশিক্ষা বিস্তারে প্রয়াসী হন এবং মুসলমান মেয়েদের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তির পথ সুগম করেন। বেগম রোকেয়ার জীবনাদর্শ ও কর্ম দেশের নারী সমাজের অগ্রযাত্রায় পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ‘বেগম রোকেয়া ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক। বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত তিনি। চিন্তা-চেতনা এবং মননে তিনি একজন প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব।’ ‘প্রবন্ধ, গল্প ও উপন্যাসের মধ্য দিয়ে নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের কথা উঠে এসেছে তার লেখায়।

বেগম রোকেয়ার আদর্শ, সাহস এবং কর্মময় জীবন নারীসমাজের এক অন্তহীন প্রেরণার উৎস।’ বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। সে সময় সমাজ ছিল নানাবিধ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও তিনি নারী জাগরণের অগ্রদূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

ঊনবিংশ শতাব্দীর এই খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। বেগম রোকেয়ার উল্লেখযোগ্য রচনাগুলো হলো- পিপাসা (১৯০২), মতিচূর (১৯০৪), সুলতানার স্বপ্ন (১৯০৮), সওগাত (১৯১৮), পদ্মরাগ (১৯২৪) ও অবরোধবাসিনী (১৯৩১)।

এদিকে বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে ৮ ডিসেম্বর, শনিবার ‘রেঞ্জারদের চিন্তা ও চেতনায় বেগম রোকেয়া’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত গাইড হাউজের জাতীয় কার্যালয়ে এই সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ গার্ল গাইডস্ অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় রেঞ্জার কাউন্সিল।

অনুষ্ঠানে বেগম রোকেয়ার জীবনী নিয়ে তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেঞ্জার ইউনিটের সদস্য জেসমিন আক্তার। বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিশনার কাজী জেবুন্নেছা বেগম। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে রেঞ্জার ও অফিস স্টাফদের সমন্বয়ে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

১৯৯৭ সালে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে বেগম রোকেয়ার পৈতৃক ভিটা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় শিশু ও মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওই ভিটার ৩ দশমিক ১৫ একর ভূমির ওপর বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র নামে একটি গণউন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়।

এই কেন্দ্রটিতে ২৬০ আসন বিশিষ্ট একটি আধুনিক মিলনায়তন, একশত আসন বিশিষ্ট একটি সেমিনার কক্ষ, ১০ হাজার পুস্তক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন লাইব্রেরি, চার হাজার বিভিন্ন বইপত্র-পত্রিকা, গবেষণা কেন্দ্র, সংগ্রহশালা, ২৫টি সেলাই মেশিনসহ একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস, কেন্দ্র চত্বরে বেগম রোকেয়ার ভাস্কর্য ও উপ-পরিচালকসহ কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে।

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ