প্রকাশিত: ১৪ মে, ২০২৪ ১২:১৬:৫২
ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং দখলদার ইসরায়েলের বিপক্ষে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাত ধরে যে ছাত্র আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল তা ইতোমধ্যেই মহামারির মতো সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে চলমান এই ছাত্র আন্দোলনের জোয়ার ঠিক কতদূর পর্যন্ত গড়াতে পারে তা নিয়ে ইতোমধ্যেই উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে বিশ্ব-দরবারে।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের পক্ষে যেই আন্দোলন শুরু করেছেন তা নিয়ে ইসরায়েল এবং পশ্চিমা নেতাদের এতো দুঃশ্চিন্তা কি স্বাভাবিক কিছু? নাকি এর পিছনেও লুকিয়ে আছে ঐতিহাসিক কোন ঘটনা?
১৯৬৮ সালে ভিয়েতনামে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু নথিপত্র খুঁজে পান যেখানে তিনি দেখেন ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। এই খবর বাতাসের বেগে সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা চরম ক্ষীপ্ত হয়ে পরে। বিশ্ববিদ্যালয় হবে গণমুখী এবং শান্তিপ্রিয় ভুখণ্ডের চর্চাস্থল। এখান থেকে কেন ধ্বংসলীলার চুড়ান্ত নকশা তৈরি করা হবে, এই ক্ষোভে তৎকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা হ্যামিল্টন হল দখল করেন এবং লাগাতার ভিয়েতনামের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে থাকেন।
পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তিপ্রিয় এবং সচেতন নাগরীকরাও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসান ঘটে।
নতুন এই ছাত্র আন্দোলনে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি সম্ভব?
৬৮’র আন্দোলনের কথা মাথায় রেখেই গত ১৭ই এপ্রিল কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা হ্যামিল্টন হল সহ বিভিন্ন হল দখল করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করেন। তাছাড়া এখন পর্যন্ত শত শত শিক্ষার্থী খোলা আকাশে তাবু টাঙিয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। এই বিক্ষোভে আমেরিকার কয়েকশো বিশ্ববিদ্যালয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে ছড়িয়ে পরেছে। ইসরায়েলের বিপক্ষে শিক্ষার্থীদের সাথে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক এবং শান্তিকামী-সচেতন নাগরিকরা এই বিক্ষোভ কে আরো বেশি ত্বরান্বিত এবং গতিশীল করেছেন।
তবে এই বিক্ষোভের মাধ্যমে আবারো কি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি সম্ভব? যুক্তরাষ্ট্রের শান্তিকামী নাগরীক এবং সচেতন ছাত্র-শিক্ষকদের হাত ধরে ভিয়েতনাম যেভাব স্বাধীনতা অর্জন করেছিল সেই একই পথে স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিন কি স্বাধীনতার স্বাদ পাবে?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের জানতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা সমন্ধে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের দুইটি বড় বড় দল ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান প্রত্যক্ষভাবে ইসরায়েলের সমর্থক সেখানে রাতারাতি নতুন কোন দলকে যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় রাজনীতির শীর্ষে নিয়ে আসা বা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ইসরায়েল বিরোধী করা সম্ভব না হলেও সম্ভাবনা জেগেছে নতুন কোন সূচনার।
মার্কিনিদের ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতির অবনতি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর কাছে ইহুদীরা চরম ভাবে নির্যাতিত হওয়ার পরে বিশ্ববাসীর কাছে যেই সহানুভূতি এযাবৎকাল পর্যন্ত ইহুদীরা পেয়ে আসছিল সেই সহানুভূতির জায়গাটা এখন ফিলিস্তিনিদের দখলে চলে গিয়েছে। ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা বিশ্বের নাগরীকদের মাঝে শেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ বা ধর্মীয় মেরুকরণের বাইরেও আরেকটা নতুন মেরুকরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাহলো কে ইসরায়েল সমর্থক আর কে ইসরায়েল বিরোধী।
মার্কিন গণমাধ্যম টিভিএস নেটওয়ার্কের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গতবছর অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ শতাংশ নাগরিক ইসরায়েলের পক্ষে থাকলেও এখন তা ৩২ শতাংশে নেমে এসেছে। ক্রমশই এ সংখ্যাটা আরো কমবে।
তাছাড়া লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ইসরায়েল বিরোধী আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা অধিকাংশ-ই তরুন। তাছাড়া অনেকেই মনে করছেন আগামী নির্বাচনে এই তরুন ভোটাররা এক নতুন বিপ্লবের সূচনা করতে পারেন।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা মার্ক রুড আমেরিকান সংবাদ মাধ্যম ডেইলি বিস্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন,‘২৪ এর বিক্ষোভকারীরা ৬৮ এর তুলনায় অনেক বেশি সতর্ক এবং চৌকস। তাদের ভিতর ঠান্ডা মাথায় নিজেদের দাবি আদায় করার প্রবল সম্ভাবনা আমি দেখতে পাচ্ছি।’
ছাত্র-আন্দোলনের এই প্রভাব কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে?
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরীকদের কাছে ইসরায়েল ইতোমধ্যেই গ্রহনযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। কাজেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিলেও পরিবর্তন হতে পারে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি।
যেখানে প্রতিবছর ইসরায়েল কে যুক্তরাষ্ট্র তিন বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা প্রদান করে তা হয়তো বন্ধ হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং ছাত্র-শিক্ষকের প্রতিবাদের ঝড়ে। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে ক্লাস-পরীক্ষা সবকিছু বর্জন করেছেন এই দাবীতে যে, অবৈধ ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
যেখানে ইসরায়েল রাষ্ট্রটি সম্পূর্ণ টিকে আছে যুক্তরাষ্ট্রের মদদে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ইসরায়েলের প্রতি দিনদিন সৃষ্টি হওয়া এমন বিদ্বেষ ভবিষ্যৎ ইসরায়েলের উপর এক মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। ইসরায়েলী বিভিন্ন কোম্পানিকে মার্কিনিরা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র ইতোমধ্যে বয়কটের ডাক দিয়েছেন যার ফলে অর্থনৈতিক ভাবেও ইসরায়েল অনেকবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কাজেই সবকিছুর পরিশেষে বলা যায়, ইসরায়েল যদি যুদ্ধ বিরতির ঘোষণা না দেয় এবং বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের নির্বিচারে হত্যার নারকীয় উৎসব থেকে সরে না দাঁড়ায় তাহলে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র সহ সারাবিশ্বের ছাত্র সমাজ, শিক্ষক এবং সাধারণ জনগন ইসরায়েলকে সর্বাত্মকভাবে বয়কটের ডাক দিবে। যা দেশটির অর্থনৈতিক এবং সামরিক অবস্থাকে অনেক বেশি নড়বড়ে করে দিতে পারে।
প্রজন্মনিউজ২৪/মোনায়েমহোসেননাঈম
এনসিপির নেতৃত্বে তিন দলের জোট, মুখপাত্র নাহিদ
বিটিআরসির সামনের সড়ক অবরোধ মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের
বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে ভাঙ্গা এক্সেপ্রেসওয়ে অবরোধ
কারাবন্দি ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করল পাকিস্তান সরকার
ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ৯ সদস্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের
জেনারেল মইনকে চাকরির নিশ্চয়তা দেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রনব মুখার্জি
আজ ৬ ডিসেম্বর: স্বৈরাচার পতন দিবস