হাতির তাণ্ডবের ভয়ে আধাপাকা ধান কাটছেন কৃষক

প্রকাশিত: ০৪ মে, ২০২৪ ০৫:২০:১৮

হাতির তাণ্ডবের ভয়ে আধাপাকা ধান কাটছেন কৃষক

শেরপুর প্রতিনিধি: বন্যহাতির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে ক্ষেতের আধাপাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন শেরপুরের সীমান্ত লাগোয়া তিনটি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শতশত কৃষক।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে হাতির দলকে প্রতিরোধ করতে তারা ফসল রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে হাতি প্রতিরোধে এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

বন বিভাগ, কৃষক-কৃষাণি ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী সীমন্তবর্তী উপজেলা। ওইসব এলাকার রাংটিয়া, গজনী, রাণীশিমুল, সিংগাবরুণা, নাকুগাঁও, বুরুঙ্গা, কালাপানি ও পানিহাটা গ্রামের ভারতের সীমান্তঘেঁষা জমিতে প্রায় ছয় শতাধিক কৃষক বোরো ধান আবাদ করেছেন। ওই এলাকায় ধান পাকতে আরও এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। এদিকে বাতকুঁচি, মৌচাক, চৌকিদারটিলা, ডালুকোনা, নাকুগাঁও ও পানিহাটা সীমান্তবর্তী পাহাড়ি জঙ্গলে দুই সপ্তাহ ধরে শতাধিক বন্য হাতির দল তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে অবস্থান নিয়েছে।

কয়েকদিন আগে নাকুগাঁও, বুরুঙ্গা, কালাপানি এলাকায় হাতির পাল ধানক্ষেতে নেমে আসে। এসময় স্থানীয়রা মশাল জ্বালিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে হাতির দলকে প্রতিরোধ করে। পরে হাতির পালটি আবার মৌচাক ও চৌকিদার টিলার জঙ্গলে চলে যায়। আবারো বন্যহাতির আক্রমণের আশঙ্কায় ওইসব গ্রামের কৃষকরা তাদের জমি থেকে আধাপাকা ধান কাটা শুরু করেছেন।

নাকুগাঁও, বুরুঙ্গা, কালাপানি, বাতকুচি ও পানিহাটা সীমান্তবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাতির ভয়ে স্থানীয় কৃষক-কৃষানি তাদের ক্ষেতের আধাপাকা বোরো ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ মাথায় করে সেই ধান ক্ষেতের পাশে রাস্তায় আবার কেউ সীমান্ত সড়কে নিয়ে ফেলছেন ধান। আবার কেউ সেই ধান সড়কেই মেশিনের মাধ্যমে মাড়াই করে ধান স্তূপ করে রাখছেন।

নাকুগাঁও গ্রামের কৃষানি জাহানারা বেগম বলেন, এক বছরের পুলাডারে রাইখা স্বামী মারা গেছে প্রায় সতেরো বছর আগে। স্বামীর রাইখা যাওয়া জমিতে আবাদ কইরাই সংসার চালাই, পুলাডারেও পড়াইতাছি। পুলা এইবার ইন্টার পরীক্ষা দিবো। কিন্তু হাতির জ্বালায় তো ধান না পাকতেই কাইটা আনা লাগতাছে। কষ্টের এই ধান হাতির পেটে যায়। তাই বাধ্য হইয়াই দুইডা কামলা লইয়া আমরা মা-পুলা আধাপাকা ধানই কাটতাছি।

বুরুঙ্গা গ্রামের কৃষক হোসেন মোল্লা বলেন, ৬০ শতাংশ জমিতে বোরো ধান আবাদ করছি। ফসল পাকতে ও কাটতে আরও এক সপ্তাহ সময় দরকার। কিন্তু হাতির আক্রমণের ভয়ে নিরুপায় হয়ে আধাপাকা ফসল কাটতে বাধ্য হচ্ছি। এই ফসল পাহারা দিতে গিয়া গত এক মাসে হাতির আক্রমণে দুই কৃষক মারা গেছে। ফসল নিয়ে এলাকার কৃষকরা দুশ্চিন্তায় আছে।

কালাপানি গ্রামের কৃষক আকবর হোসেন বলেন, কালাপানি পাহাড়ের ঢালে ৭০ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করছি। ফলনও ভালো অইছে, কিন্তু একসপ্তাহ ধরে প্রতি রাতে হাতি অত্যাচার করছে। এলাকার সবাই রাত জাইগা ক্ষেত পাহারা দেই। তাই নিরুপায় অইয়া আধাপাকা ধান কাইটা ফালাইছি। চিন্তা কিছুডা কমছে।

ময়মনসিংহ বন বিভাগের আওতাধীন মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, হাতির দলটি তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পাহাড়ি জঙ্গলে অবস্থান করছে। প্রতি রাতে ধান ক্ষেতে হাতির দল লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। তাই ফসল রক্ষায় স্থানীয় অনেক কৃষক তাদের ক্ষেত থেকে আধাপাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

হাতি প্রতিরোধে এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত হাতি যেসব কৃষকদের ফসল নষ্ট করেছে তাদেরকে বন বিভাগের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পেতে তাদেরকে আবেদন করতে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।


প্রজন্মনিউজ২৪/এমএম

এ সম্পর্কিত খবর

ক্রেতা সেজে ঢুকেন, চুরি করেন শুধু আইফোন

এখনই র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে না যুক্তরাষ্ট্র

ফুটবলে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধের পক্ষে এএফসি  

রাবিতে হিন্দু শিক্ষার্থীকে শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকি ছাত্রলীগ নেতার

শিক্ষার মানোন্নয়নে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে এসিজি’র অধিপরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

এবার ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া অফিস

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা চালু

শিক্ষার্থীকে মধ্যরাতে ঘুম থেকে তুলে বিছানাপত্র নামিয়ে দিল ছাত্রলীগ

লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

চোরাই পথে যাতে পশু না আসে সেজন্য আমরা সজাগ থাকবো: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ