প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১০:১৮:০৭
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার রূপসীহাটা জামিয়া মসজিদের ইমাম মিজানুর রহমান (৪৫)। ১২ বছর ধরে তিনি একটি মসজিদে ইমামতি করছেন। ২০১৪ সালে তার বেতন ছিল এক হাজার টাকা। ৬ বছর পর বেতন বেড়েছে আরও এক হাজার টাকা। বর্তমানে ২ হাজার টাকা বেতনে ইমামতি করছেন তিনি। তবে সেই বেতনও ঠিকমতো পান না।
এবার ঈদের আগেও বেতন পেতে দেরি হওয়ায় খুব কষ্ট করে দুই ছেলেকে ঈদে পাঞ্জাবি বানিয়ে দিয়েছিলেন ইমাম মিজানুর রহমান। তবে তিনি নিজের জন্য কিনতে পারেননি নতুন পোশাক। মিজানুর রহমান পাশাপাশি একটি মাদরাসায়ও শিক্ষকতা করেন। তবে সেখানেও বেতন সামান্য। এ বেতনেই চাকরি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
শুধু মিজানুর রহমান নয়, তার মতো একই অবস্থা জামালপুরের অধিকাংশ মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের। সামান্য বেতনে চাকরি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। তাদের দাবি সরকার থেকে বছরের দুই ঈদে যদি ইমাম মুয়াজ্জিনদের সামান্য কিছু সম্মানি দিতো তাহলে প্রতি বছর ঈদটা অন্তত পরিবার নিয়ে তাদের স্বাভাবিকভাবে কাটাতো।
মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি রূপসীহাটা মসজিদে ১২ বছর ধরে ইমামতি করছি। প্রথমে আমার বেতন ছিল এক হাজার টাকা। পরে দুইশ টাকা বাড়িয়েছিল। এরপর তিনশ টাকা বাড়িয়ে হয়েছিল ১৫০০ টাকা। বর্তমানে আমার বেতন দুই হাজার টাকা। এই বেতনে কোনোভাবেই চলে না। কষ্ট হলেও করার কিছু নেই এভাবেই চলতে হয়। সেটাও সময়মতো পাই না। তার ছেলে-মেয়ে কতজন এ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমার দুই ছেলে। দুই ছেলেই মাদরাসায় পড়াশোনা করছে।
এদিকে মেলান্দহ পৌরসভার বাসুদেবপুর মজিদিয়া দারুল উলুম মাদরাসা জামিয়া মসজিদের ইমাম আরিফ মুহাম্মদ রহমানির ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, সামান্য কিছু বেতনে এক বছর ধরে ইমামতি করছি। যা বেতন দেয় তা খুবই কম। এ টাকায় একজন ইমামের সংসার কোনোভাবেই চলে না। ইমামতির পাশাপাশি মাদরাসায় শিক্ষকতা করলে দুইটা মিলে মাস শেষে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা হয়। আমরা ইমামেরা অল্প কিছুতেই সন্তুষ্ট। বর্তমানে বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। সবকিছুর দাম বৃদ্ধি হয়, তবে ইমামদের বেতন কখনো বাড়ে না। গ্রাম অঞ্চলের মসজিদগুলোর ইমামদের বেতন আরও কম।
ইমাম আরিফ মুহাম্মদ রহমানি ঢাকার একটি মাদরাসা থেকে মুফতি হয়েছেন। তারও বেতন দুই হাজার টাকা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জামালপুর কার্যালয়ের তথ্য মতে, এই জেলার ৭টি উপজেলায় মোট মসজিদের সংখ্যা ৫ হাজার ২৫২ টি।জেলার ৮টি মডেল মসজিদ রয়েছে। মডেল মসজিদের ইমামরা মাসিক সম্মানি পাচ্ছেন ১৫ হাজার, মুয়াজ্জিন ১০ হাজার ও খাদেমরা ৭ হাজার ৫০০ টাকা করে বেতন পাচ্ছেন। জামালপুর সদর উপজেলা ২টি মডেল মসজিদ এবং বাকি ছয়টি উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
২৫ বছর ধরে করেন ইমামতি, এখন বেতন পান ১৫০০ টাকা উপজেলা নয়ানগর ইউনিয়নের মামা ভাগিনা উত্তর পাড়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন আব্দুল সাত্তার (৬০)। তিনি ওই মসজিদে ১০ বছর ধরে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করেন। মসজিদের পাশেই তার বাড়ি। এছাড়া অন্য কিছু করতে পারেন না বয়স হয়েছে তাই। তবে সামান্য বেতনে সংসার চালাতে তার খুবই কষ্ট হয়। সাড়ে তিন হাজার টাকা বেতন তার। ওই মসজিদের ইমাম আশরাফুল আলী বলেন, আমাদের বেতন ভাতা নেই বললেই চলে। যে কয় টাকা হাদিয়া দেয়, সেই কয় টাকা নিয়ে পরিবার চালাতে হয়। ঈদকে কেন্দ্র করে কোন বোনাস বেতন বা সম্মানি কিছু দেয় না। মামাভাগিনা উত্তর পাড়া জামে মসজিদের সভাপতি আলহাজ্ব হোসেন বলেন, ইমাম মুয়াজ্জিনদের যে বেতন দেওয়া হয় তাতে তাদের সংসার চালানো কষ্টকর। সমাজের কিছু মানুষ যতটুকু সহযোগিতা করে তা দিয়েই তাদেরকে বেতন দেওয়া হয়। আমরা ইমাম, মুয়াজ্জিন, খতিবের বেতন দিয়ে দিয়েছি।
মালঞ্চ বাজার জামে মসজিদের ইমাম আব্দুল হালিম (৩০)। তিনি পড়াশোনায় মুফতি শেষ করেছেন। ইমামতি করার পাশাপাশি একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন তিনি। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ইমামতি ও শিক্ষকতা করে যে পরিমাণ বেতন পাই তা দিয়ে পরিবার সংসার চালানো যায় না। ইমামেরা কষ্টের মধ্যেই জীবনযাপন করেন। আমাদের দীর্ঘ সময় পড়াশোনা শেষ করে সামান্য বেতনে চাকরি করতে হয়। আমি মুফতি শেষ করেছি, বাংলায় একে বলা হয় পিএইচডি। মসজিদ কমিটি থেকে যতটুকু দেন ততটুকুই আমরা সন্তুষ্ট, তার থেকে বেশি চাওয়ার কিছু থাকে না। মালঞ্চ বাজার জামে মসজিদের সভাপতি আলম তিনি বলেন, মসজিদে যে যতটুকু সহযোগিতা করে তা থেকে আমরা ইমামদের বেতন দিয়ে থাকি। সরকার অনেক লোকজনকেই সহযোগিতা করে থাকে। আমরা দাবি জানাই যেন ইমাম ,মুয়াজ্জিন, খতিবদের সরকার থেকে একটি সহযোগিতা করা হয়। তাদেরকে সহযোগিতা করলে অন্তত পরিবার নিয়ে একটু ভালোভাবে থাকতে পারবে।
জামালপুর সামাজিক আন্দোলন কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ইমাম, মুয়াজ্জিন-খতিবদের সাধারণত বেতন নেই বললেই চলে। তাদেরকে সামান্য কিছু হাদিয়া দেওয়া হয়। এ হাদিয়া দিয়ে তাদের পরিবার, সংসার চালাতে পারে না ঠিকমতো। সরকার থেকে তাদের বিনা সুদে ঋণ প্রদান করেন এবং তাদেরকে নির্দিষ্ট একটি সম্মানি দেওয়া হয় তাহলে তারা পরিবার নিয়ে ভালো থাকবে।
এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জামালপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট রয়েছে। সেখানে ইমাম মুয়াজ্জিনরা সদস্য হয়ে থাকলে তাদেরকে বিনা সুদে ঋণ প্রদান করা হয়। এছাড়া ইমামদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ইমাম, মুয়াজ্জিন যে টাকা সম্মানী পান তা দিয়ে তাদের পরিবার চালানো কষ্ট হয়। জেলায় ৮টি মডেল মসজিদ রয়েছে। সেখানকার ইমামরা মাসিক বেতন পাচ্ছেন ১৫ হাজার, মুয়াজ্জিন ১০ হাজার ও খাদেমরা ৭ হাজার ৫০০ টাকা করে বেতন পাচ্ছেন।
প্রজন্মনিউজ২৪/আরা
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এপ্রিল ২০২৪ এইচআরএসএস এর মাসিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন।
সম্মানহানির বিচার চেয়ে জবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে ডীনের অভিযোগ
ধুনটে সেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নসেবার কমিটি গঠন
শিক্ষামন্ত্রীসহ সরকারের পদত্যাগের দাবি জানালেন জয়নুল আবদিন ফারুক
ফরিদপুর জেলা পুলিশের উদ্যোগে খাবার পানি, স্যালাইন এবং গামছা বিতরণ অনুষ্ঠিত
সময় তিন অক্ষরের এক ছোট নাম কত মূল্যবান
সিলেট অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা
সিলেট নগরীর সুরমা টাওয়ার থেকে পড়ে সিসিকের এক কর্মচারির মৃত্যু
Severity: Notice
Message: Undefined index: category
Filename: blog/details.php
Line Number: 417
Backtrace:
File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler
File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view
File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view
File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once